অনুপ্রবেশকারীরা যেন ছাত্রলীগের পদে আসতে না পারে: মেয়র লিটন
রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৪৬ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র (রাসিক) এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, ছাত্রলীগের মধ্যে কোনো অনুপ্রবেশকারী যদি থেকে থাকে, তাদের চিহ্নিত করে তারা যেন পদে আসতে না পারে সেই ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে করতে হবে। কোনো অনুপ্রবেশকারীকে আমরা আমাদের দলের মধ্যে চাই না।
সোমবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের ২৬তম সম্মেলন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবাস বাংলাদেশ মাঠে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উদ্দেশ্যে এ কথা বলেন তিনি।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাসিক মেয়র আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ছাত্রলীগ মহান মুক্তিযুদ্ধে যে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল সেটা ছাত্রলীগের অজস্র উজ্জ্বল কীর্তির মধ্যে অন্যতম একটি। এই ছাত্রলীগের ইতিহাস বঙ্গবন্ধু বলেছেন বাংলাদেশের ইতিহাস। বাংলাদেশের যেখানেই যাই পাকিস্তান পিরিয়ড, ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ সবই ছাত্রলীগময়। অন্য সংগঠনের তেমন কোনো খবর নেই।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, পদ-পদবির প্রত্যাশা কে না করে। যে যত উঁচু পদ পায় সে আরও উঁচুতে যেতে চায়। এটা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। এটা হতেই পারে। তবে সবাইতো আর পদ পাবেন না। সভাপতি সম্পাদক পদে মাত্র দুইজন যাবে। এখানে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বসে একটি সিদ্ধান্তে আসবে।
কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাবি থেকে উঠে আসা ছাত্র নেতাদের অংশগ্রহণ কমের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, জাতীয় সংসদের হুইপ ও জয়পুরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, রাজশাহীতে ছাত্রলীগ করা আর মরুভূমিতে ফুলের বাগান করা একই বিষয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বর ঘাতকের আঘাতে আমাদের সোনার ছেলেরা রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। এখানে ছাত্রলীগের রাজনীতিকে যারা এগিয়ে নিয়ে যান তারা বাংলাদেশের আলো থেকে বঞ্চিত। আমি সাদ্দাম ও ইনানকে অনুরোধ করব ক্যাম্পাসের ত্যাগী ছাত্রনেতাদের যেন যথাযথ সম্মান, যথাযথ মর্যাদা দেয়।
উদ্বোধকের বক্তব্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, রাজনীতি মানে শুধু পদ-পদবি ধারণ করা নয়। রাজনীতি মানে রাজনৈতিক অনুশীলন, মনুষ্যবৃত্তি, ব্যক্তিত্ব, সততার শিক্ষা লাভ, ত্যাগ করার সক্ষমতা থাকবে, দূরদর্শিতা থাকবে, সমস্যা সৃষ্টি নয় বরং সমস্যার সমাধান করবে এবং সবাইকে সাথে চলার মত যোগাযোগ দক্ষতা অর্জন করতে হবে। রাবিতে যেহেতু লম্বা সময় পরে সম্মেলন হচ্ছে, সেহেতু সবার প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব নয়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য পদ-পদবী নয়, তাদের লক্ষ্য সমাজ বদল করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আগুয়ান থাকা, সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নে অটুট থাকা, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আনন্দের কারণ হওয়া। এ সময় তিনি হলে সিট বাণিজ্যসহ বিভিন্ন নেতিবাচক খবর নিয়ে আলোচনা করেন এবং প্রশাসনের কাছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানান।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনোভাবে মৌলবাদের আখড়াই পরিণত হতে দেয়া যাবে না। সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ইউনিটের নেতাকর্মীকে সজাগ থাকতে হবে এবং এ ক্যাম্পাসকে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিতে রূপান্তর করতে হবে।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জনসংখ্যা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ডা. আনিকা ফারিহা জামান অর্ণা রাবি শাখায় যাতে কোনো অছাত্র, অপরাজনীতি করে এমন এবং অতীতের ন্যায় বেইমানদের পদে নিয়ে না আসা হয় সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি অনুরোধ জানান।
এছাড়াও সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ হীল বারী, উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন রনি, উপ-কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক সাব্বির হোসেন এবং সহ-সম্পাদক আদনান হোসেন।
এর আগে বৃষ্টির কারণে বিলম্ব হয়ে এদিন দুপুর ১টায় জাতীয় সংগীত এবং দলীয় সংগীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনের শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন শাখা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক আবুল বাশার আহমেদ।
এরপর আমন্ত্রিত অতিথিদের বক্তব্য শেষে শাখা ছাত্রলীগের এই ২৫তম কমিটিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিলুপ্ত ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন সমাপ্ত হয়।
