কাহালুর স্বঘোষিত ‘শাসক’ রোস্তম গ্রেফতার, ৩ বাড়িতে বাহিনীর হামলা
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:২৪ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বগুড়ার কাহালু উপজেলার নারহট্ট ইউনিয়নের লহড়াপাড়া ও উলখার গ্রামের ‘স্বঘোষিত শাসক’, নানা অপকর্মের হোতা রোস্তম আলী (৪২) অবশেষে ধরা পড়েছেন। কাহালু থানা পুলিশ মঙ্গলবার রাতে তাকে একটি মামলায় গ্রেফতার করে।
পরে পুলিশের সোর্স সন্দেহে রোস্তম বাহিনীরা সদস্যরা গ্রামের তিনটি বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। মারপিটে আহত বাবা ও মেয়েকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাহিনীর ভয়ে কয়েকজন অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। এরপরও জনগণের মাঝে স্বস্তি দেখা দিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, রোস্তম আলী বগুড়ার কাহালু উপজেলার নারহট্ট ইউপির লহড়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তার বিরুদ্ধে থানায় অন্তত পাঁচটি মামলা ও কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে। আদালতে অন্তত তিনটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তিনি নিজেকে লহড়াপাড়া ও পাশের উলখার গ্রামে ‘শাসক’ ঘোষণা দেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের হাইব্রিড নেতাদের সঙ্গে উঠাবসা করেন। বিচার-শালিসের জন্য গ্রামে একটি ক্লাবঘর বানিয়েছেন। কয়েকজন বিশ্বস্ত লোকজন দিয়ে রোস্তম বাহিনী গড়ে তোলেন। তিনি ও তার বাহিনীর সদস্যরা গ্রামে জমি-জায়গা দখল, চাঁদাবাজি, চাঁদা না পেয়ে নির্যাতন, জমি থেকে ধান কেটে নেওয়া, গোয়াল থেকে গরু নিয়ে যাওয়া, কথায় কথায় মারপিট, হামলা ও ভাঙচুর করেন। কেউ ভয়ে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন না।
পুলিশ সাহস দিলে আবদুল জোব্বার নামে এক ব্যক্তি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কাহালু থানায় রোস্তমসহ তার বাহিনীর পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এতে অভিযোগ করা হয়েছে, বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত রোস্তম বাহিনী গত ১৯ সেপ্টেম্বর তার বাড়িতে হামলা করে দুই লাখ টাকার ক্ষতি করে। ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর জন্য সঞ্চয় করা পাঁচ লাখ টাকা লুট করে। বাঁধা দিলে তার স্ত্রীকে মারপিট ও শ্লীলতাহানি করে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নন্দীগ্রাম সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার নাজরান রউফ লহড়াপাড়া গ্রাম পরিদর্শন করেন। এ সময় রোস্তম বাহিনীর নির্যাতনের শিকার গ্রামবাসী তাদের কষ্টের কথা উল্লেখ করেন।
নির্যাতনের শিকার লহুড়াপাড়ার লালমিয়া জানান, রোস্তম ও বাদলের কথামত না চললে তার উপর রোস্তম বাহিনীর নির্যাতন চলে। কথা না শোনায় বাহিনীর লোকজন তার তিন বিঘা জমির ধান কেটে নিয়ে গেছে। শালিসে তাকে আরও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।
রোস্তম বাহিনীর ভয়ে শিলকঁওড় গ্রামে বাড়ি করেছেন লালমিয়া। তার স্ত্রী সাহেরা খাতুন বলেন, রোস্তম ও তার বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে গ্রাম ছেড়ে এসে শিলকঁওড়ে বাড়ি করেছি। গ্রামে থাকাকালে রোস্তমের দাবিকৃত ৫০ হাজার টাকা চাঁদা না দেওয়ায় নারী হিসেবে আমিও রেহাই পাইনি। আমাকে কয়েকবার মারপিট করেছে, রোস্তম, বাদল ও সোহরাব। প্রায় তিন বছর আগে থেকে রোস্তম বাহিনীর ভয়ে অনেকে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, বেপরোয়া রোস্তম বাহিনীর ভয়ে বিভিন্ন সময় গ্রাম থেকে পালিয়ে গেছে অনেকে। আপনজন কেউ মারা গেলেও তাদের মাটি দিতে আসতে পারে না আমার স্বামীসহ অনেকে। রোস্তম-বাদল স্বঘোষিত শাসক আমাদের এলাকায়। তাদের কথা না শুনলেই গজব নেমে আসে আমাদের ওপর।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে কাহালু থানা পুলিশ রোস্তম বাহিনীর প্রধান রোস্তমকে নিজ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। লহড়াপাড়া গ্রামের আবদুল জোব্বারের মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তার বাহিনীর সদস্যরা পুলিশের সোর্স সন্দেহে গ্রামের হায়দার আলী, আকবর আলী ও সেলিমের ঘরবাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এতে আহত হয়ে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, হায়দার আলী (৪৫) ও তার মেয়ে হাফিজা কুমকুম (১৭)। খবর পেয়ে পুলিশ গ্রামে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যান।
এছাড়া রোস্তমকে গ্রেফতারের পর তার বাহিনীর সদস্যদের হুমকিতে গ্রাম ছেড়ে বেশ কয়েকজন পালিয়ে গেছেন। ফোনে হায়দার আলী জানান, রোস্তম বাহিনীর মারপিটে তার মাথা ফেটে গেছে। মেয়েকে বেদম মারপিট করেছে।
হায়দারের ছেলে হুদায়ফা জানান, রোস্তমের কথামত না চললে কেউ বাড়িতে বাস করতে পারে না। অনেকদিন আগে আমাদের বাড়ি থেকে তার বাহিনীর লোকজন গরু বিক্রি করেছে।
রোস্তম বাহিনীর ভয়ে পালিয়ে থাকা লহড়াপাড়ার মামুন মোবাইলে জানান, রোস্তম বাহিনীর ভয়ে আমার ভাই হারুনসহ বেশ কয়েকজন এখনো গ্রামছাড়া।
কাহালু থানার ওসি মাহমুদ হাসান জানান, রোস্তম নিজেকে ‘শাসক’ ঘোষণা দিয়ে গ্রামবাসীর ওপর নানাভাবে অত্যাচার, নির্যাতন, চাঁদাবাজি, জমির ধান কেটে নেওয়াসহ বিভিন্ন অপরাধ করে আসছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে চলাফেরা করে। তাই কেউ তার বিরুদ্ধে মামলা করার সাহস পায় না। গত তিন মাস ধরে তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার আবদুল জোব্বার নামে এক ব্যক্তির মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার তাকে আদালতের মাধ্যমে বগুড়া জেল হাজতে পাঠানো হয়। রোস্তমকে গ্রেফতারের পর তার বাহিনীর সদস্য একটি বাড়িতে হামলা করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তারা পালিয়ে যায়। অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
