মাতৃভান্ডারের সুনামে গড়ে উঠেছে অনেক ‘নকল মাতৃভান্ডার’
তাবারক উল্লাহ কায়েস, কুমিল্লা
প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:৪১ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কুমিল্লার রসমালাই। নামটি শুনলেই জিহ্বায় পানি আসে। এই সুস্বাদু মিষ্টি কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। বিয়ে-শাদি কিংবা পারিবারিক বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে রসমালাই না হলেই নয়। দিন দিন বাড়ছে এর কদর।
এ শহরের প্রত্মতাত্ত্বিক বা দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে আসা ভ্রমণপিপাসুদের প্রথম ইচ্ছা কুমিল্লার বিখ্যাত রসমালাইয়ের স্বাদ নেওয়া। সঙ্গে প্রিয় ব্যক্তি বা পরিবারের সদস্যদের জন্যও কিনে নিতে ভোলেন না। এ মিষ্টান্ন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয় কুমিল্লার রসমালাই দিয়ে। ছুটির দিনগুলোতে রসমালাই কেনার জন্য উপচে পড়া ভিড় থাকে কুমিল্লা শহরের মনোহরপুর এলাকার মাতৃভান্ডার নামের শতবর্ষী মিষ্টান্ন বিক্রির দোকানটিতে।
মাতৃভান্ডার নামেই এখন জেলার বাইরে কুমিল্লার রসমালাইকে চিনে। তবে মাতৃভান্ডার ছাড়াও নগরীর মনোহরপুরের ভগবতী পেড়া ভান্ডার, শীতল ভান্ডার, পোড়াবাড়ি, জেনিস, জলযোগ, মালাই, মিঠাই নামের দোকানগুলোতে মিলবে রসমালাই।
তবে জেলার এই খ্যাতিমান খাবার নিয়েও প্রতারণা করছে একটি চক্র। ঢাকা থেকে দাউদকান্দি হয়ে কিংবা চট্টগ্রাম থেকে চৌদ্দগ্রাম হয়ে কুমিল্লায় প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে মহাসড়কের দুপাশে শত শত রসমালাইয়ের দোকান। এসব মিষ্টির দোকানের অধিকাংশই নকল মাতৃভান্ডার। যদিও নকল মাতৃভান্ডারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দাবি, তারা নিয়ম মেনেই ব্যবসা করছেন। এতে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন আছে।
বাঙালি ময়রা কৃষ্ণ চন্দ্র দাস প্রথম রসমালাই তৈরি করেন। কুমিল্লায় রসমালাইয়ের আদি উদ্ভাবক ত্রিপুরা রাজ্যের ঘোষ সম্প্রদায়। উনিশ শতকের প্রথম দিকে ত্রিপুরা থেকে তারা বিভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে চাহিদা অনুযায়ী এ অঞ্চলের লোকদের বাহারি রকমের মিষ্টি সরবরাহ করতেন। সে সময় রসগোল্লার সঙ্গে মালাইকারির প্রলেপ দেওয়া এক রকম মিষ্টির প্রচলনও ছিল। কেউ কেউ একে ‘মালাই রসগোল্লা’ বলতেন। পরবর্তী সময়ে দুধ জ্বাল দিয়ে খির বানিয়ে তার মধ্যে শুকনো রসগোল্লা ডুবিয়ে তৈরি করা হয় খিরসহ রসগোল্লা। এর নাম দেওয়া হয় ‘খিরভোগ’।
১৯৩০ সালের দিকে এই রসগোল্লার আকার ছোট করে দুধের খিরের মধ্যে ডুবিয়ে পরিবেশন শুরু হয় এবং একপর্যায়ে এর নামকরণ হয় ‘রসমালাই’। আর ওই সময় থেকেই ক্ষণীন্দ্র সেন কুমিল্লার মিষ্টি ব্যবসায় রসমালাই বানিয়ে পরিচিতি পেতে থাকেন। পরে তার সন্তান মুক্তিযোদ্ধা শংকর সেনগুপ্তের হাত ধরে এটি কুমিল্লায় ব্যাপকভাবে বিকশিত হয় এবং রসমালাইয়ের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে দেশ থেকে দেশান্তরে।
প্রথম দিকে মাটির হাঁড়িতে করে বিক্রি হতো রসমালাই। পরে চালু হয় পলিথিনের ঠোঙা। এরপর আসে প্লাস্টিকের কৌটায় করে বিক্রির প্রথা। যা এখনো চলছে। বর্তমানে মাতৃভান্ডারের রসমালাইয়ের ব্যবসা পরিচালনা করছেন পাঁচ বছর আগে পরলোকগত শংকর সেনগুপ্তের ছেলে অনির্বাণ সেনগুপ্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন এই শিক্ষার্থী কোনো চাকরিতে না গিয়ে বংশপরম্পরায় পরিবারের মিষ্টান্ন ব্যবসায় শামিল হন।
কুমিল্লার শতবর্ষী প্রতিষ্ঠান মনোহরপুরের মাতৃভান্ডারের স্বত্বাধিকারী অনির্বাণ সেনগুপ্ত বলেন, প্রতিদিনই রসমালাইয়ের চাহিদা থাকে অনেক। চাহিদামতো দুধ না পেলে, রসমালাইও কম তৈরি হয়। মান ও গুণ ধরে রাখার জন্য আমরা সব সময় চেষ্টা করি। তিনি বলেন, মহাসড়কের পাশে আমাদের নাম ব্যবহার করে যেসব প্রতিষ্ঠান রসমালাই বিক্রি করছে, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের কোনো শাখা নেই।
