Logo
Logo
×

সারাদেশ

নির্বাচনি বিধি ভেঙে নৌকায় ভোট চাইলেন এমপি ফারুক

Icon

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:৪৪ পিএম

নির্বাচনি বিধি ভেঙে নৌকায় ভোট চাইলেন এমপি ফারুক

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক তফশিল হয়েছে বুধবার। নির্বাচনি বিধি অনুযায়ী তফশিলের পর নির্বাচন কমিশন ঘোষিত দিন ও সময়সূচি ছাড়া কোনো প্রকার আগাম নির্বাচনি প্রচারণা করা নিষিদ্ধ। কিন্তু এই বিধি-নিষেধকে তোয়াক্কা না করে বৃহস্পতিবার নিজের নির্বাচনি এলাকা রাজশাহীর তানোরে দুটি প্রচারণা সমাবেশ করেছেন রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী।

এসব সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আসন্ন ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে তিনি নৌকায় ভোট দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন এলাকাবাসীকে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, তানোরের সমাবেশ দুটির ব্যানারে এলাকাবাসীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় বলে উল্লেখ করা হলেও দুটি সমাবেশই কার্যত ছিল আগাম নির্বাচনি প্রচারণা সমাবেশ।

সমাবেশে ওমর ফারুক চৌধুরী নিজেকে তানোর তথা বরেন্দ্রভূমির সন্তান দাবি করে আবারো তাকে ভোট দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করার আহবান জানান এলাকাবাসীকে। তিনি আবার নির্বাচিত হলে এলাকার মানুষের জন্য বিপুল সুযোগ সুবিধা তৈরি করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের  রিটার্নিং অফিসার ও রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেছেন, তফশিল হওয়ার পর কমিশন ঘোষিত প্রচার-প্রচারণার জন্য নির্ধারিত দিন ও সময়ের মধ্যেই নির্বাচনি প্রচারণা করতে পারবেন কোনো প্রার্থী। কিন্তু নির্ধারিত দিন ও সময়সূচি ছাড়া কোনো সম্ভাব্য প্রার্থী অগ্রিম ভোট প্রচারণা চালাতে পারবেন না। এটাই কমিশনের বিধিবদ্ধ নিয়ম। কেউ এই বিধি লঙ্ঘন করলে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে তিনি সংশ্লিষ্ট সম্ভাব্য প্রার্থীর বিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে প্রতিবেদন পাঠাবেন। কমিশন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।

স্থানীয় সূত্রগুলি থেকে জানা গেছে, এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী বৃহস্পতিবার দুপুরে তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউপির কৃষ্ণপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে প্রথম সমাবেশটি হয়। ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি বলেন, আসন্ন ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আপনারা সবাই দিনভর নৌকায় ভোট দেবেন।

গত ১৫ বছরে পাঁচন্দর ইউনিয়নবাসীকে দেওয়া উন্নয়ন ও সরকারি সুবিধাদির নানান ফিরিস্তি তুলে ধরে ফারুক আরও বলেন, নৌকায় ভোট না দিলে উন্নয়ন থেমে যাবে। নৌকায় ভোট দিলে আরও উন্নয়ন হবে। এলাকাবাসীকে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন আনতে হলে নৌকায় ভোট দেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

এদিকে সমাবেশ শেষে দুই হাজার এলাকাবাসীকে দুপুরে বিরিয়ানি খাওয়ানো হয়। এই সমাবেশে গরু খাসি ও চিকেন বিরিয়ানি খাওয়ানো হবে বলে বুধবার ফেসবুকে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। ফলে এমপির সমাবেশে দলে দলে লোকজন ছুটে আসেন বিভিন্ন এলাকা থেকে। অনেকেই গোটা পরিবার নিয়ে দুপুরের ভোজন করেন।

অন্যদিকে এদিন বিকালে তানোরের কলমা ইউপির দরগাডাঙ্গা বাজার মাঠের সমাবেশে এমপি ফারুক বলেন, আগামী ৭ জানুয়ারি আপনাদের জন্য আরেকটা পরীক্ষার দিন। কঠিন এই পরীক্ষায় আপনাদের উত্তীর্ণ হতে হবে। আপনারা সকলে চোখ বন্ধ করে নৌকায় ভোট দেবেন। নৌকায় ভোট দিয়ে আপনারা গত ১৫ বছরে অনেক কিছুই দেখেছেন পেয়েছেন এবং আরও পাবেন। নৌকা ছাড়া উন্নয়নের আর কোনো পথ নেই।

তিনি নিজেকে তানোরের মাটির সন্তান দাবি করে বলেন, আমি আপনাদেরই সন্তান। আবার আপনাদের দুয়ারে এসেছি। আমাকে ভালবেসে থাকলে আগামী ৭ জানুয়ারি নৌকায় ভোট দিবেন। তিনি এলাকাবাসীর জন্য দেওয়া সরকারি বিভিন্ন সুবিধা সহায়তার ফিরিস্তি তুলে ধরেন সমাবেশে।

সমাবেশগুলিতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাইনুল ইসলাম স্বপন, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রদীপ, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না, ভাইস-চেয়ারম্যান আবু বাক্কার, পাঁচন্দর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন, কলমা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রাহিম প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

এদিকে তফশিল হওয়ার পর বিধি-ভেঙ্গে ভোট চেয়ে নির্বাচনি সমাবেশ করার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, তিনি নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করেননি। এলাকাবাসীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।

তবে সমাবেশের বক্তা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রদীপ বলেন, তারা জানতেন না যে এভাবে সমাবেশ করলে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে। এমপি সাহেবও জানতেন না সম্ভবত। আমি এমপি সাহেবকে এ বিষয়ে বলব।

এমপির সমাবেশের জন্য স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা দুই ঘণ্টা আগে:

এদিকে তানোরের কৃষ্ণপুর স্কুল মাঠে বৃহস্পতিবার এমপি ফারুকের দুপুরের সমাবেশের জন্য ইউনিয়নের সকল স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসার বার্ষিক পরীক্ষা সকাল ১০টার বদলে এগিয়ে এনে সকাল ৮টায় শুরু করা হয়। এসব পরীক্ষা সকাল ১০টায় শুরু হয়ে দুপুর একটায় শেষ হওয়ার কথা ছিল। এমপির সমাবেশের জন্য সকাল আটটায় শুরু করে বেলা ১১টার মধ্যে শেষ করা হয় পরীক্ষাগুলি। পরীক্ষা শেষে ইউনিয়নের সকল স্কুল ও কলেজ  থেকে শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে দলে দলে এমপির সমাবেশে যোগ দেন।

যদিও এ নিয়ে অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দুই ঘণ্টা এগিয়ে এনে বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণের ফলে উপজেলার সকল স্কুলে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষার কার্যকারিতা লঙ্ঘিত হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন।

রাজশাহী

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম