গাজীপুরে নবজাতকের মৃত্যু, ভুল চিকিৎসার অভিযোগ
গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৪২ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
গাজীপুরে এক নবজাতকের জন্মের ৫৬ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে। এতে ভুল চিকিৎসা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। গাজীপুর মহানগরের শিববাড়ি এলাকার একটি গলিতে অননুমোদিতভাবে গড়ে তোলা ওই প্রাইভেট হাসপাতালে মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে।
নবজাতকের বাবা আনিসুর রহমান জানান, তার স্ত্রী জমিলা বেগমের প্রসবের সম্ভাব্য নির্ধারিত তারিখ ছিল আগামী ১০ ডিসেম্বর। এরই মধ্যে গত শনিবার রাতে জমিলা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত স্থানীয় শিববাড়ি মোড়ে অবস্থিত ‘গাজীপুর আধুনিক হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে’ আনা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তমা কর্মকার ওই এলাকায় অবস্থিত এসকিউআর মেডিকেল সার্ভিসেস অ্যান্ড হসপিটাল লিমিটেড নামের হাসপাতালে নিয়ে দ্রুত সিজার করেন। সিজারে ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। অস্ত্রোপচার শেষে ডা. তমা কর্মকার ব্যবস্থাপত্র লিখে চলে যান। এরপর ডা. তমা আর হাসপাতালে আসেননি, নবজাতকেরও কোনো খবর নেননি।
তিনি জানান, নবজাতক বা শিশুরোগে অভিজ্ঞ কোনো ডাক্তারও শিশুটির খবর নেয়নি। এরই মধ্যে সোমবার রাতে শিশুটি প্রচণ্ড কান্না শুরু করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও স্টাফদের জানানো হয়। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। মঙ্গলবার সকালে শিশুটির শ্বাসকষ্ট শুরু হলে ডিউটিরত চিকিৎসক দ্রুত শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। সেখানে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে এ ঘটনার পর মঙ্গলবার দুপুরে রাজবাড়ি রোডের শিববাড়ির একটি গলিতে নির্মাণাধীন ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় কথিত ওই হাসপাতালে সরেজমিন গিয়ে একজন ডাক্তার, একজন নার্স ও একজন নার্স কাম-ম্যানেজার ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যায়নি।
এ বছর সদ্য ইন্টার্নি সম্পন্ন করা ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি সকালে ডিউটিতে এসে ওই নবজাতকের শ্বাসকষ্ট দেখে তাজউদ্দীনে রেফার্ড করি। এরপর সেখানে নিলে শিশুটি মারা যায়। আমাদের এখানে তার মৃত্যু হয়নি।
হাসপাতালটির অনুমোদন আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসপাতালের মালিক বলতে পারবেন। তবে এটি ১০ শয্যার হাসপাতাল বলে তার দাবি।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ আজমি তুহিনের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। সিভিল সার্জনের অফিস থেকে সংগৃহীত বৈধ ও অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নামের তালিকার কোনোটিতেই ওই হাসপাতালের নাম পাওয়া যায়নি।
প্রসূতির অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক তমা কর্মকারের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনিও ফোন রিসিভ করেননি। আলোচিত প্রসূতিকে তার চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্রে দেখা যায় ডা. তমা গাইনি চিকিৎসায় ট্রেনিংরত।
এ ব্যাপারে জিএমপি সদর থানার ওসি মো. জিয়াউল ইসলাম বলেন, কথিত ওই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার মতো পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই। এসব হাসপাতালের বিরুদ্ধে সিভিল সার্জনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। নবজাতক মৃত্যুর ঘটনায় অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. খায়রুজ্জামান বলেন, আমরা অফিসিয়ালভাবে গিয়ে বলতে পারব- এটি অবৈধ হাসপাতাল, আপনারা বন্ধ করুন। তারা বন্ধ করল, আমরা চলে আসার পর আবার চালু করল। আমরা তো আর নিজেরা বন্ধ বা তালা দিতে পারব না। এজন্য আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে গোটা জেলায় প্রায় দুইশ অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিকের তালিকা তৈরি করে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাঠিয়েছি। উনারা এটি দেখবেন। যদি আমাদের সহযোগিতা লাগে আমরাও থাকব।
