২৫ সিন্ডিকেট সক্রিয় রাজশাহী সীমান্তপথে আসছে অস্ত্র ও বিস্ফোরক
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৩, ১১:২২ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্তপথে দেশে ঢুকছে অবৈধ অস্ত্র ও বিস্ফোরকের চালান। অভিযানে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র উদ্ধারও হচ্ছে। তবে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের অন্যতম রুট হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্ত। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কয়েকটি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বিস্ফোরক আসছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্তে অস্ত্র চোরাচালানে ২৫টি সিন্ডিকেট সক্রিয় আছে। চিহ্নিত এসব চক্রের সদস্যদের ওপর কঠোর নজরদারি করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বিজিবির একটি সূত্রে জানা গেছে, ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যার আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের নারায়ণপুর সীমান্তের পদ্মার চর এলাকায় বিজিবির জোহরপুর টেক সীমান্ত ফাঁড়ির একটি দল অভিযান চালায়। এ সময় সূর্যনারায়ণপুর গ্রামের মনিরুল ইসলামকে (৫০) একটি পাতিলসহ আটক করেন। তল্লাশি করে পাতিলে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি গুলি ভরা ম্যাগজিন, এক রাউন্ড গুলি ও ৭ কেজি ৪০০ গ্রাম গান পাউডার জব্দ করা হয়। অভিযানের সময় মনিরুলের ছেলে খাইরুল ইসলাম (২২) নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে যান। এ বিষয়ে সদর মডেল থানায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে মামলা করে বিজিবি।
এদিকে ৫৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল নাহিদ হোসেন জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মার চরাঞ্চল সীমান্তগুলো বেশ দুর্গম। এ কারণে অনেক সময় দ্রুত অভিযান চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। তারপরও বিজিবি এ পয়েন্টগুলোতে নজরদারি ও টহল অব্যাহত রেখেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো আরও জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্তপথ আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালানের অন্যতম রুট। পাশাপাশি রাজশাহীর তিনটি ও নওগাঁর তিনটি সীমান্তপথে অবৈধ অস্ত্র ও বিস্ফোরক তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ভারত থেকে বাংলাদেশে আনা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে বিভিন্ন সবজি ও ফলের ট্রাকেও অস্ত্র আসে। মাঝে মাঝে র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির হাতে ধরা পড়ে বহনকারীরা। তাদের বেশির ভাগই কিশোর ও যুবক।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র আরও জানায়, এসব সিন্ডিকেটের ওপরে নির্ভর করে ভারতীয় চক্রের হোতারা সীমান্তের ওপারে পশ্চিমবঙ্গের মালদার সীমান্তবর্তী কালিয়াচক, বৈষ্ণবনগর, খোজাপুর, মোজামপুর এবং মুর্শিদাবাদের সমশেরগঞ্জ এলাকায় অবস্থান করে। বিহারের মুঙ্গের থেকে চাহিদা অনুযায়ী অস্ত্র সংগ্রহ করে তারা। মুঙ্গেরে ঘরে ঘরে অবৈধ অস্ত্র তৈরির কারখানা আছে। এসব অস্ত্র প্রথমে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে মজুত হয়। সেখান থেকে সীমান্তপথে বাংলাদেশে আসে সিন্ডিকেটের হাতে। অবৈধ অস্ত্র বহন ও পাচারের বন্দোবস্তের জন্য রয়েছে আরেকটি সিন্ডিকেট। এরা বাংলাদেশে অস্ত্রের ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চালান নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর শর্তে দরদাম ঠিক করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রগুলো আরও জানায়, অস্ত্র চোরাচালান আটক হলেও মূল হোতাদের পর্যন্ত পৌঁছানো দুষ্কর হয়ে যায়।
জানা গেছে, অস্ত্র চালানে জড়িত গ্রেফতাররা স্বীকার করেছেন, জাপান বা ইউএসএ লেখা থাকলে সেসব অস্ত্র দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয়। তবে অস্ত্রের গায়ে জাপান ও ইউএসএ লেখা থাকলেও এগুলো বিহারের মুঙ্গেরে তৈরি। চাহিদা অনুযায়ী বিহারের মুঙ্গেরে বিশ্বের যে কোনো দেশের বহনযোগ্য আগ্নেয়াস্ত্রের কপি তৈরি করা হয়। এমনকি একে-৪৭ রাইফেলও মুঙ্গেরের কারিগররা তৈরি করে দিতে পারেন।
এদিকে বিজিবির রাজশাহী সেক্টর কমান্ডার কর্নেল ইমরান ইবনে রউফ বলেছেন, অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ যে কোনো অবৈধ জিনিস যাতে সীমান্ত দিয়ে ঢুকতে না পারে সে বিষয়ে বিজিবি সীমান্ত পয়েন্টগুলোতে সব সময় সতর্ক আছে। শুধু নির্বাচনের সময় বলে নয়, সীমান্তে বিজিবি অবস্থান সবসময়ই কঠোর।
রাজশাহীর র্যাব-৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার জানান, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে সহিংসতার লক্ষ্যে অস্ত্র চোরাচালান সিন্ডিকেটগুলো দেশি-বিদেশি অস্ত্র মজুদ করছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে। তবে অস্ত্র কারবারিদের বিষয়ে সজাগ আছে র্যাব।
জানা গেছে, র্যাবের পাশাপাশি গত কয়েক মাসে সীমান্তে ৫৯ বিজিবির সদস্যরা ১১টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৪৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছেন। বিজিবির রহনপুরের ৫৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া জানান, অস্ত্র আসা ঠেকাতে বিজিবি সীমান্তে কঠোর নজরদারি করছে।
