রাজশাহী-৪ আসন: কালাম বাহিনীর ত্রাসে আতঙ্কিত এলাকাবাসী
আনু মোস্তফা, রাজশাহী
প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:২৬ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আবুল কালাম আজাদ রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী। মনোনয়নপত্র দাখিলের পর থেকেই বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন বাগমারাজুড়ে। কালাম এককালে পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ছিলেন। সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্যাঙের নেতৃত্বে ছিলেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছেন। তবে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ার পরও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছাড়তে পারেননি।
এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর কালামের সন্ত্রাসী বাহিনী বাগমারাজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। কালামের অব্যাহত সন্ত্রাসের কারণে ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে ভোটারদের মাঝে। আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে কালামবিরোধীদের অনেকেই এলাকা ছেড়ে রাজশাহী শহরে অবস্থান করছেন।
কালাম ২ ডিসেম্বর সরাসরি হুমকি দিয়ে এলাকাবাসীর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন। এখন পর্যন্ত রাজশাহীর বিভিন্ন আসনের প্রার্থীদের মধ্যে এককভাবে সর্বাধিক ১৪টি অভিযোগ দাখিল হয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় ১০টি মামলা হয়েছে। তাকে একাধিকবার শোকজ করা হয়েছে। জবাব দিয়ে ক্ষমাও চেয়েছেন; কিন্তু কোনো পরিবর্তন হয়নি।
রাজশাহী-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ-সদস্য এনামুল হক শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে বাগমারায় নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন। কাঁচি প্রতীকের এ প্রার্থী অভিযোগ করেন, আমার নেতাকর্মীরা দিনের বেলায় পোস্টার লাগান। রাত নামলেই কালামের সন্ত্রাসী বাহিনী কাঁচির সব পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে।
এনামুল হক এমপি আরও বলেন, সন্ধ্যা নামলেই কালামের সন্ত্রাসীরা তিন-চারটা নম্বর পে¬টবিহীন মাইক্রোবাস নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় টহলে বের হচ্ছে। এসব মাইক্রোবাসে আগ্নেয়াস্ত্র থাকছে। এলাকায় এলাকায় গিয়ে লোকজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সন্ত্রাসীরা বলছে ভোট যেখানেই দাও, নৌকাই জিতবে। এনামুল হক বলেন, কালাম বিভিন্ন এলাকা থেকে সন্ত্রাসী ভাড়া করে এনেছে। এসব সন্ত্রাসী বাহিনীর সঙ্গে টহলে বের হচ্ছেন কালামের স্ত্রী শায়লা পারভিন। আমার নেতাকর্মীদের ওপর হামলার সময় কালামের স্ত্রীও হামলায় অংশ নিচ্ছেন। এক ইউপি চেয়ারম্যানও মাইক্রোবাস টহলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
২২ ডিসেম্বর গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের চেউখালি বাজারে স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হকের পিএস আতাউর রহমান গণসংযোগ করছিলেন। কালামের স্ত্রী শায়লা পারভিনের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা মাইক্রোবাসে করে এসে অতর্কিত কাঁচি প্রতীকের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এ হামলায় আতাউরসহ ১০ নেতাকর্মী আহত হন। তাদের মধ্যে আতাউর রহমানের হাত ও কোমরের হাড় ভেঙে গেছে। বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেলের অর্থপেডিক ওয়ার্ডে তিনি চিকিৎসাধীন। কালামের সন্ত্রাসীরা এখন পর্যন্ত কাঁচি প্রতীকের ২৩টি অফিস ভাঙচুর করেছে। উপজেলার ২৪ স্থানে কাঁচির কর্মীরা সশস্ত্র হামলার শিকার হয়েছেন। এসব হামলায় আহত হয়েছেন কাঁচি প্রতীকের ৪৩ জন নেতাকর্মী।
১৭ ডিসেম্বর ভবানীগঞ্জে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ভবনে ব্যাপক হামলা চালায় কালামের লোকজন। সন্ত্রাসীরা বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে থাকা স্বাধীনতার ইতিহাস সংবলিত চিত্রকর্মগুলো ভেঙে ফেলে। এদিকে শনিবার বাগমারার তাহেরপুর, গোয়ালকান্দি, শ্রীপুরসহ আরও কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও এনামুলের কাঁচি প্রতীকের পোস্টার নেই।
বাগমারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অরবিন্দ সরকার বলেন, আমরাও শুনছি রাতে মাইক্রোবাসে করে সন্ত্রাসীরা এলাকায় এলাকায় গিয়ে হুমকিধমকি এবং কোথাও কোথাও প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর পোস্টার তুলে ফেলছে। আমরা রাতে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি বাড়িয়েছি। নির্বাচনকেন্দ্রিক কয়েকটি হামলার ঘটনাও ঘটেছে তিন-চারটি এলাকায়। কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ওসি আরও বলেন, নৌকা ও কাঁচি প্রতীকের প্রার্থীকে গানম্যান দেওয়া হয়েছে।
নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হচ্ছে, সেগুলো মিথ্যা। কোথাও কাউকেও পোস্টার লাগাতে বাধা দেওয়া হয়নি। আমার কোনো সন্ত্রাসী বাহিনী নেই। কালাম উলটো স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনি পরিবেশকে নষ্ট করার অভিযোগ করেন।
