প্রায় ভোটারশূন্য কেন্দ্র, ভোট কাস্টিং দেখে বিস্মিত সবাই
জসিম উদ্দিন, কক্সবাজার
প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:০৪ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) আসনের প্রায় সব কেন্দ্রই ভোটগ্রহণ শুরু থেকে শেষপর্যন্ত ফাঁকাই দেখা গেছে। বিশেষ করে রামু উপজেলার এগারো ইউনিয়নের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, সিংহভাগ ভোটকেন্দ্র প্রায় ফাঁকা। কিন্তু বিকাল ৪টার পর কাস্টিং ভোট দেখে সবার চোখ কপালে উঠার মতো।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য মতে, কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) আসনে থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে তৃতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমল। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল) ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ। তবে অনিয়মের অভিযোগ এনে তিনি নির্বাচন বর্জন করেন।
এ আসনে ১৭৬টি কেন্দ্রে নৌকা পেয়েছে এক লাখ ৬৭ হাজার ২৯ এবং ঈগল পেয়েছে ২১ হাজার ৯৪৬ ভোট। তিন উপজেলায় ভোটার রয়েছে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৬১০ জন।
এদিকে কেন্দ্র ভিত্তিক কাস্টিং ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর সবার চোখ কপালে উঠার মতো। স্ব স্ব কেন্দ্রে বিপুল পরিমাণ ভোট কাস্টিং দেখে রীতিমতো বিস্মিত স্থানীয়রা।
ভোটের দিন রোববার সকাল এবং দুপুর ২টায় রামুর রাজারকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের উপস্থিতি শূন্য। বুথের ভেতরে গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। তখন শুধুমাত্র ৪ শতাধিক ভোট কাস্টিংয়ের তথ্য দেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু চারটার পর ভোটের ফলাফলে ওই কেন্দ্রে ভোট কাস্টিং দেখা যায় ২৮৫৬। এ কেন্দ্রে সর্বমোট ভোটার সংখ্যা ৩৩১৩।
ভোটের দিন ব্যাপক অনিয়ম নিয়ে আলোচনায় আসে রামু খিজারী সরকারি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্রটি। এ কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৬৩৩। এদিন ওই দুপুরে কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় দুই তিনজন পুরুষ ভোটার লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। বুথের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়- একজন ভোটার ভোট দিচ্ছেন। বেলা ২টা নাগাদ ঐ কেন্দ্রের প্রতিটি বুথের তথ্য অনুযায়ী মোট ৫৮৫টি ভোট কাস্ট হয়। কিন্তু ৪টার পর ঐ কেন্দ্রে ভোট কাস্টিং দেখা যায় ২ হাজার ৮৯ ভোট।
একটি স্থানীয় পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক নাজিম উদ্দিনের বলছেন, রামু খিজারী কেন্দ্রে বিকাল ৩টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত তিনিসহ আরও কয়েকজন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তাদের সংশ্লিষ্টরা সব বুথ মিলিয়ে ৮১৬ ভোটের তথ্য দিয়েছিল। পরে ২০৮৯ ভোট কাস্টিং দেখে তিনিও বিস্মিত।
একই অবস্থা পূর্ব মেরংলোয়া ইসলামিয়া রহমানিয়া মাদ্রাসা, চাকমারকুল জারাইলতলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র, রামুর জোয়ারিয়ানালা, রশিদ নগর ঈদগড়, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া, কাউয়ারখোপ, রাজারকুল, চামকারকুল, দক্ষিণ মিঠাছড়ি ও খুনিয়াপালং ইউনিয়নের কোনো কোনো কেন্দ্রে সামান্য ভোটার দেখা মিললেও অধিকাংশ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি হতাশ করেছে। একই অবস্থা দেখা গেছে, কক্সবাজার পৌরসভার প্রায় সব কেন্দ্রে।
এদিকে আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী হাইকোর্টের আওয়ামী আইনজীবী ফোরামের নেতা ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ ভোট বর্জন করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের সঙ্গে একাধিবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি।
কক্সবাজারের জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান বলেন, ঈগল প্রতীকের পক্ষে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে; যা খতিয়ে দেখা হবে।
