ডান্ডাবেড়ি নিয়েই বাবার জানাজায় ছাত্রদল নেতা, দেশজুড়ে সমালোচনা ঝড়
রফিকুল ইসলাম সাদ্দাম, মির্জাগঞ্জ দক্ষিণ (পটুয়াখালী)
প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:১৫ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
‘ডান্ডাবেড়ি নিয়েই বাবার জানাজায় ছাত্রদল নেতা’ শিরোনামে গত রোববার যুগান্তরে প্রকাশিত সংবাদটি সারা দেশব্যাপী আলোচনা সৃষ্টি করে, যা এই তিন দিন যাবত ‘টক অব দ্য কান্ট্রিতে’ পরিণত হয়েছে। দেশের সব গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংবাদটি নিয়ে তোলপাড় নেটিজেনরা।
ঘটনাটি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম সুবিদখালী গ্রামের। সংবাদটি ঘিরে দেশজুড়ে চলছে সমালোচনার ঝড়। ইতোমধ্যে ওই সংবাদটিকে কেন্দ্র করে বিবৃতি দিয়েছেন (হাইকোর্ট)। এমনকি এক সপ্তাহের মধ্যে করা হবে রিট আবেদন এমনটাও জানিয়েছেন হাইকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কায়সার কামাল।
আসামিদের ডান্ডাবেড়ি পরানোর ব্যাপারে বাংলাদেশের আইনে কী আছে? কিংবা এর সাংবিধানিক বিধান কী? এ নিয়ে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন হাইকোর্টের বেশ কয়েকজন আইনজীবী। তাদের মতে, আসামিদের ডান্ডাবেড়ি পড়ানোর বিধান থাকলেও পটুয়াখালীতে যেটি করা হয়েছে তাতে চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে।
ঘটনাটি ঘিরে চরমভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওই ছাত্রদল নেতা নাজমুল মৃধা বড় ভাই রাসেল মৃধা।
হাইকোর্টের বিবৃতি: পটুয়াখালীর ঘটনাটি নিয়ে দেশব্যাপী আলোচিত হলে আসামিদের ডান্ডাবেড়ি পরানো নিয়ে হাইকোর্ট বলেছেন, এভাবে চলতে থাকলে আমরা হয়তো আনসিভিলাইজড (সভ্য নয়) হিসেবে পরিচিত হব। উল্লেখিত সংবাদটি নজরে আনা হলে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ মন্তব্য করেন। গত সোমবার এ মন্তব্য করেন।
গত রোববার ‘যুগান্তরে’ ওই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি নজরে এনে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনার আরজি জানান আইনজীবী কায়সার কামাল। আদালত বলেন, ‘আমরা দেখেছি।’
তখন কায়সার কামাল বলেন, একের পর এক এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। তিনি আরও বলেন, হাইকোর্ট বেঞ্চে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়েছি। পটুয়াখালীর ওই ঘটনা নিয়ে চলতি সপ্তাহে নতুন করে রিট আবেদন করা হবে।
সেদিন যা ঘটেছিল
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে গত ১৯ ডিসেম্বর গভীর রাতে মো. নাজমুল মৃধাকে তার বাড়ি থেকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পরে তাকে একটি পুরাতন বিস্ফোরক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠান আদালত।
শুক্রবার রাতে নাজমুলের পিতা মোতালেব হোসেন চিকিৎসাধীন অবস্থায় বরিশালের একটি হাসপাতালে মারা যান। পিতার মৃত্যুর পর জানাজায় অংশ নিতে আইনজীবীর মাধ্যমে প্যারোলে মুক্তির আবেদন করে নাজমুলের পরিবার। পরে তাকে মাত্র পাঁচ ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি দেন আদালত। যে কারণে জানাজার নির্ধারিত সময়ের আগেই সংক্ষিপ্ত একটি জানাজা অনুষ্ঠিত হয় পিতা মোতালেব হোসেনের।
প্রথম জানাজায় অংশগ্রহণ শেষেই পটুয়াখালী কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় নাজমুলকে। পরে দ্বিতীয় জানাজা শেষে দাফন করা হয় তার পিতার মরদেহ। গত শনিবার মির্জাগঞ্জ উপজেলার সুবিদখালী গ্রামে জানাজায় অংশ নেন নাজমুল। সেই জানাজায় অংশ নেওয়ার কিছু ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। যেখানে দেখা যায়, পায়ে ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায়ই জানাজায় অংশ নেন ওই যুবক। যার ফলেই দেশজুড়ে ঘটনাটি ঘিরে নানা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
যা বললেন পরিবার
ছাত্রদল নেতা নাজমুলের বড় ভাই রাসেল মৃধা বলেন, নাজমুল এমন কোনো মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি না যে তাকে বাবার জানাজা পড়াকালে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখা হবে। তাছাড়া তাকে যে মামলায় আসামি করে গ্রেফতার করে জেলাহাজতে পাঠানো হয়েছে তার সঙ্গে নাজমুলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। শুধু বিএনপির রাজনীতি করে বলেই আজ এমন ঘটনার শিকার হতে হলো। আমার বাবাও বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। এ দেশে কোনো রাজনৈতিক দল করা কী অপরাধ? আমরা তো রাজনীতি করি, সন্ত্রাস না।
