Logo
Logo
×

সারাদেশ

মাদারীপুরে যুবলীগ নেত্রীর অনুমোদনহীন 

বিলাসবহুল বাড়ি হলফনামায় তথ্য গোপন করতে বাবাকে দান

Icon

মাদারীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২৮ পিএম

বিলাসবহুল বাড়ি হলফনামায় তথ্য গোপন করতে বাবাকে দান

সম্প্রতি বাবা ইসমাইল হোসেনকে নিজের বিলাসবহুল তিনতলা ডুপ্লেক্স বাড়িটি দান করেন মাদারীপুর জেলা যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারজানা নাজনীন। তিনি সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। হলফ নামায় তথ্য গোপন করতেই যুবলীগ নেত্রী অনুমোদনহীন এ বাড়িটি তড়িঘড়ি করে দান করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।  

জানা গেছে, মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের বাসভবনের পেছনে নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন তিনতলা ডুপ্লেক্স বাড়িটি, যা নির্মাণে ব্যয় হয়েছে তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা। বাড়ির প্রকৃত মালিক যুবলীগ নেত্রী ফারজানা নাজনীন ও তার মেয়ে তাসনিম জাহান মীম। ফারজানা তার বাবা কুনিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেনকে ৯ এপ্রিল ‘হেবা ঘোষণার’ মাধ্যমে বাড়িটি দান করেন। এরপর দাখিল করেন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র। নির্বাচনের হলফনামায় সম্পত্তি কম দেখাতেই বাবার নামে বাড়িটি লিখে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। এছাড়া বাড়িটি নির্মাণে পৌরসভারও কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী যুবলীগ নেত্রী ফারজানার দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তিনি ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন তিন লাখ টাকা। ব্যাংকে জমা দেখিয়েছেন ২ হাজার টাকা। আর নগদ অর্থ সাড়ে ৪ লাখ টাকা রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। হলফনামার তথ্য নিয়ে মাদারীপুরের জনমনে এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, বাড়িটি নির্মাণের অর্থ এলো কোথা থেকে? 


এ ব্যাপারে যুব মহিলা লীগ নেত্রী ফারজানা নাজনীন সাংবাদিকদের বলেন, আমার স্বামী লিয়াকত হাওলাদার ইতালি থেকে টাকা পাঠিয়েছেন, সেই টাকা দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে বাড়িটি। এছাড়া আমি জেলার একমাত্র নারী ঠিকাদার, আমি ব্যবসা করি, আমার ব্যবসার টাকাও বাড়িটি নির্মাণে ব্যয় করা হয়েছে। 

বাড়িটি নির্মাণে পৌরসভা থেকে কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছিলাম, কিন্তু পৌরসভা অনুমোদন দেয়নি। পরে অনুমোদন ছাড়াই বাড়িটি নির্মাণ করেছি। এই শহরের অনেক বাড়িই অনুমোদন ছাড়া তৈরি হয়েছে। সবাই যেভাবে বাড়ি নির্মাণ করছে আমিও সেভাবেই বাড়ি নির্মাণ করেছি।

বাড়ির বিষয়ে তার স্বামী লিয়াকত হাওলাদার টেলিফোনে যুগান্তরকে জানান, এই বাড়ি বা বাড়ি নির্মাণের কিছুই তিনি জানেন না। বাড়ি কার নামে বা কার টাকায় নির্মাণ করা হয়েছে তা-ও তিনি জানেন না। লিয়াকত হাওলাদার বলেন, অনেক দিন ধরেই স্ত্রী ফারজানা তার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না। বাড়িটি ফারজানার বাবার নামে লিখে দেওয়ার বিষয়টি জানালে লিয়াকত হাওলাদার বলেন, বাড়ি নির্মাণের জন্য আমি যদি টাকা দিতাম তাহলে সেই বাড়ি তার (ফারজানার) বাবার নামে লিখে দিতে পারত না। এখন আপনাদের (সাংবাদিকদের) দায়িত্ব কার টাকায় বাড়িটি নির্মিত হয়েছে তা খুঁজে বের করা। 

সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগে বাড়ির মালিকানা কেন পরিবর্তন হয়েছে জানতে চাইলে যুবলীগ নেত্রী  বলেন, বাড়ির জমি নিয়ে ঝামেলা থাকায় বাবার নামে লিখে দেওয়া হয়েছে। জমিটা মূলত বাবার, কিন্তু বাড়ি আমি নির্মাণ করেছি।

বাড়িটি নির্মাণে অনুমোদনের বিষয়ে মাদারীপুর পৌরসভার সার্ভেয়ার এনায়েত হোসেন বলেন, যুবলীগ নেত্রী ভবন নির্মাণের জন্য আবেদন করেছিলেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জায়গাটি ডোবা। তাই পৌরসভা বাড়ি নির্মাণের অনুমোদন দেয়নি। 

দুর্নীতি দমন কমিশনের মাদারীপুরের উপ-পরিচালক আতিক রহমান বলেন, সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ এলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণের অর্থ জোগানের বিষয়েও খোঁজখবর নেওয়া হবে।
 

পদপ্রার্থী

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম