Logo
Logo
×

সারাদেশ

‘মুই এহন সন্তানকে নিয়ে কিভাবে বাঁচমু’, গুলিতে নিহত ইমরানের স্ত্রীর আহাজারি

Icon

মো. আসাদুজ্জামান রিপন, গৌরনদী (বরিশাল)

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৪, ১০:২০ পিএম

‘মুই এহন সন্তানকে নিয়ে কিভাবে বাঁচমু’, গুলিতে নিহত ইমরানের স্ত্রীর আহাজারি

‘মুই এহন সন্তান লইয়্যা কিভাবে বাঁচমু। যহন একটু সুখের মুখ দ্যাখলাম তহন আল্লা ওরে (স্বামী) লইয়্যা গেল। কেডা মোর সন্তানকে দেখবে। মোর কপালে সুখ সইল না, মোরে লইয়্যা ঢাকায় আইয়া কত কষ্ট করছে, যহন একটা চাকরি পাইল হেই সময় আল্লা অরে লইয়া গেল। মুই এহন কিভাবে বাঁচমু, কে মোর ছোট সন্তানকে মানুষ করবে। মুই ওর অফিসের নেওয়ার রাইতের খাবার রেডি কইরা বইয়া আছিল্যাম, কই ওতো আহে না।’

বিলাপ করে কথাগুলো বলছিলেন বরিশালের গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের কালনা গ্রামের নজরুল খলিফার একমাত্র ছেলে ইমরান হোসেনের বিধবা স্ত্রী শান্তা মিয়া (২৫)।

ঢাকার শাহজাদপুর বাজারে ওষুধ কিনতে যাওয়ার সময় গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ইমরান হোসেন।

গুলশান-২ এ চারুলতা নিবাস নামের ১২তলা ভবনের নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে চাকরি করতেন মো. ইমরান হোসেন (৩৩)। ২০ জুলাই বেলা ১১টার দিকে কালনা গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক গোরস্থানে ইমরানের লাশ দাফন করা হয়। এক ভাই ও ২ বোনের মধ্যে ইমরান ছিল সবার বড়।

গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ইমরান হোসেনের স্ত্রী শান্তা মিয়া (২৫) জানান, ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে স্বামী ইমরান হোসেন তাকে (স্ত্রী) ও পুত্র ইয়াজ খলিফাকে (২৩ মাস) নিয়ে ঢাকায় যায়। ঢাকা মহানগরীর শাহজাদপুর খন্দকারবাড়ির মোড়ে দোকান ভাড়া নিয়ে ইমরান হোসেন মুদি দোকান দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসায় লোকসান  হলে মুদি দোকান ছেড়ে দিয়ে গত ৩ মাস পূর্বে ফুটপাতে জুতার দোকান দেয় ইমরান। জুতার ব্যবসার আয় দিয়ে কোনোরকম তাদের সংসার চলছিল। স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে ইমরান হোসেন শাহজাদপুর খিলবাড়িটেক নামক স্থানে বাসা ভাড়া নিয়ে কোনরকম বসবাস করে আসছিলেন। খুবই কষ্টের মধ্যে চলছিল তাদের সংসার।

গত ৩ জুলাই গুলশান-২ এলাকায় চারুলতা নিবাস নামে ১২তলা ভবনের নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে চাকরি পান ইমরান হোসেন।

নিহত ইমরানের স্ত্রী আরও জানান, ১৯ জুলাই স্বামী ইমরানের অফিসে ডিউটি ছিল সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত; কিন্তু তিনি (স্ত্রী) অসুস্থ হওয়ার কারণে আগের দিন রাতে অফিসের বড় স্যারকে ফোন দিয়ে ডিউটির সময় পরিবর্তন করে শুক্রবার রাত ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডিউটি করার অনুমতি নেন। শুক্রবার দুপুরে অফিস থেকে একজন (স্যার) ফোন দিয়ে ইমরানকে বলেন যদি পরিস্থিতি ভালো থাকে তাহলে অফিসে এসো আর যদি পরিস্থিতি খারাপ থাকে তাহলে অফিসে আসার দরকার নাই। ১৯ জুলাই বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ইমরান অফিসে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাতের খাবার প্রস্তুত করতে তাকে (স্ত্রীকে) বলে ঘরের বাইরের পরিস্থিতি দেখতে ও তার জন্য ওষুধ কিনতে ভাড়া বাসা থেকে বের হয়ে শাহজাদপুর বাজারে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে খবর পেয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে গিয়ে গুলিবিদ্ধ স্বামী ইমরান হোসেনের লাশ শনাক্ত করেন। পরে ময়নাতদন্ত ছাড়াই ইমরানের লাশ ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে রাত সাড়ে ৯টার দিকে গ্রহণ করে ইমরানের লাশ নিয়ে শনিবার ভোররাতে গ্রামের বাড়িতে আসেন।

গুলিবিদ্ধে নিহত ইমরান হত্যার বিচার দাবি জানিয়েছেন নিহতের স্ত্রী শান্তা মিয়া।

নিহতের বাবা নজরুল খলিফা বলেন, ১৯ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাবা ইমরানের ফোন থেকে কল আসে, ডাক্তার পরিচয়ে একজন বলে ইমরান খুবই অসুস্থ গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালে আছে। পরে আমি ছেলের বউকে (পুত্রবধূ) জানালে বউমা হাসপাতালে গিয়ে দেখে কয়েকটি লাশের সঙ্গে পড়ে আছে আমার বাবার লাশ। পরে সে ফোনে আমাকে জানায় ইমরান গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। বাবার কি কষ্ট হইছে, বাম পাঁজর দিয়ে গুলি ঢুকে ডান পাঁজর দিয়ে বের হয়েছে।

ইমরান হোসেন সম্পর্কে জানতে চাইলে কালনা গ্রামের গ্রামের ফরিদ খলিফা (৬০), মো. জালাল সরদার (৭০) বলেন, ইমরানকে ছোটবেলা থেকেই চিনি জানি, সে খুবই নিরীহ ও ভদ্র প্রকৃতির মানুষ। জোরে একটা কথাও বলতে শুনিনি কিংবা কোনো রাজনীতি করতে দেখিনি। গুলিতে এভাবে ছেলেটি মারা যাবে ভাবতেও পারিনি। তারা নিহত ইমরানের অসহায় পরিবারের প্রতি সহযোগিতার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।

গৌরনদী থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত জামাল শিকদার ও ইমরাম হোসেন খলিফার লাশ তাদের গ্রামের বাড়ি গৌরনদী উপজেলার পূর্ব হোসনাবাদ ও কালনা গ্রামের পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করার খবর আমরা জানতে পেরেছি।

কোটাবিরোধী আন্দোলন

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম