বেয়াই এস আলমের সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে তীরে এসে তরী ডুবল এনামের
আবেদ আমিরী, পটিয়া (চট্টগ্রাম)
প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫৮ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
চট্টগ্রামে বেয়াই এস আলমের বিলাসবহুল গাড়ি রক্ষা করতে যাওয়ার অভিযোগে তীরে এসে তরি ডুবল চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এনামুল হক এনামের। তিনি দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়কসহ দলের প্রাথমিক সদস্যপদও হারিয়েছেন।
গত ২৯ আগস্ট দিবাগত রাতে মীর গ্রুপের একটি ওয়্যার হাউস থেকে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান ও সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এনামুল হক এনামের নেতৃত্বে এসব গাড়ি সরানোর অভিযোগ উঠে। অবশ্য ঘটনার একদিন পরই তারা ওই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন।
সাবেক দুইবারের এমপি গাজী শাহজাহান জুয়েল ২০০৯ সাল থেকে না থাকলেও শত প্রতিকূলতায় গত ১৬ বছর ধরে পটিয়াসহ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির নানা কর্মসূচিতে সরব উপস্থিতি ছিল এনামের। ২০১৮ সালে দলের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেলেও একপেশে নির্বাচনে হেরে যান। এরপরও দলের হাল না ছাড়ায় নেতাকর্মীরা অনেকটা নিশ্চিত ছিল আসন্ন নির্বাচনে তিনিই দলের মনোনয়ন পাবেন; কিন্তু এস আলমের গাড়ি সরাতে সহায়তার অভিযোগে তীরে এসে তরি ডুবল তার। এমনটাই মনে করছেন অনেকে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এনামুল হক এনাম সম্পর্কে বেয়াই। এস আলম গ্রুপের এসব গাড়ি যে মীর গ্রুপের ওয়্যার হাউসে রক্ষিত ছিল সে মীর গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুস ছালামের আপন বেয়াই হন এস আলম মাসুদ। আর আবদুস ছালামের আপন ফুফাতো ভাই হন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এনামুল হক এনাম। এস আলম মীর গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুস ছালামের বেয়াই হওয়ার সুবাদে এনামও বেয়াই হন। এস আলম গ্রুপের কঠিন সময়ে বেয়াই হয়ে হয়ত পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন এনাম। এমনটাই ধারণ করছেন অনেকে।
পটিয়ায় বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী জানান, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে দুইবার পটিয়া আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন গাজী মোহাম্মদ শাহজাহান জুয়েল। ২০০৬ সালে বিএনপি ক্ষমতা হারানোর পর তাকে পটিয়ার রাজনীতিতে অনেকটা অনুপস্থিত; কিন্তু পটিয়ায় বিএনপিতে তার এখনো শক্ত অবস্থান আছে।
২০০৯ সালের পর এনাম বিএনপির রাজনীতি সক্রিয় হন এবং ধীরে ধীরে পটিয়া, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ও বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান তৈরি করেন। ফলশ্রুতিতে ২০১৮ সালে দলীয় মনোনয়ন পান; কিন্তু ওই বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগের দিন রাতে ভোট সম্পন্ন হওয়ায় তিনি হেরে যান। বর্তমান সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এবং তাতে এনাম দলীয় মনোনয়ন পাবেন সেটা অনেক নেতাকর্মী অনেকটা নিশ্চিত হয়ে আছেন; কিন্তু এস আলমের গাড়িকাণ্ডে তীরে এসে এনামের তরী ডুবল মনে করছেন অনেকে। এর ফলে সাবেক এমপি ও বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহজাহান জুয়েলের জন্য সুযোগ আবারও অবারিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে পটিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব খোরশেদ আলম বলেন, মীর গ্রুপের আবদুস ছালামের বেয়াই হিসেবে এস আলম এনামের হাত ঘোরানো বেয়াই এটা সত্য। এস আলমের সঙ্গে আত্মীয়তা আছে বলেই এনামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।
দলের জন্য এনামের ত্যাগের মূল্যায়ন করে দলীয় আদেশ অচিরেই প্রত্যাহার হবে আশা রেখে তিনি বলেন দলের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ও এনামসহ তিনজনের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে।
