Logo
Logo
×

সারাদেশ

বৃদ্ধ দম্পতিকে ঘরছাড়া করলেন সুদের কারবারি আব্দুল মতিন

Icon

বেলকুচি-চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৫, ০৮:১৮ পিএম

বৃদ্ধ দম্পতিকে ঘরছাড়া করলেন সুদের কারবারি আব্দুল মতিন

সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার যমুনার দুর্গম চরের সুফিয়া খাতুন (৫৯) ও দিনমুজুর জয়নাল আবেদিন মোল্লা (৭১)। সুদে টাকা ধার নিয়ে পরিশোধ করতে না পারায় বয়োবৃদ্ধ নিঃসন্তান এ দম্পতি গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। ৩ মাস ধরে খোলা আকাশের নিচে কাগজ টাঙিয়ে অসহায় দিনযাপন করছেন সুফিয়া খাতুন। এদিকে দেনার ভয়ে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় দিনমুজুরির কাজ করছেন বৃদ্ধ জয়নাল আবেদিন।

মঙ্গলবার দুপুরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে একটি সূত্র। তাদের পাশে দাঁড়াতে সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতার হাত বাড়াতে আর্জি জানিয়েছেন সমাজকর্মী মামুন বিশ্বাস।

জানা গেছে, চৌহালী উপজেলার উমারপুর ইউনিয়নের দুর্গম পাথরাইল দক্ষিণপাড়া চরে বসবাস করছিল জয়নাল আবেদিন ও সুফিয়া খাতুন দম্পতি। তাদের ঘরে কোনো সন্তান নেই। ২৬ টিনের ঘরে তারা কোনোরকম খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছিল। কয়েক বছর আগে আগশিমুলিয়া উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিনের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা দেনা করেন। এর বিনিময়ে সুদে বছরে ১৫-২০ মণ ধান দেওয়া হয়। তবে এ বছর চাহিদামতো ধান দিতে ও অর্থ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয় অসহায় পরিবারটি। 

এ কারণে তিন মাস আগে সুদের কারবারি মতিন মাস্টার দলবল নিয়ে অন্যের কাছে বৃদ্ধ দম্পতির থাকার বাসগৃহ টিনের ঘর বিক্রি করে টাকা নিয়ে নেয় বলে অভিযোগে জানা গেছে। 

 এরপর থেকে বৃদ্ধা সুফিয়া খাতুন খোলা আকাশের নিচে পলিথিন টাঙিয়ে ঝুঁপড়ি ঘর তুলে বসবাস করছে। তার বয়োবৃদ্ধ স্বামী জয়নাল আবেদিন দেনা পরিশোধ করতে না পেরে ঢাকা গিয়ে দিনমুজুরির কাজ করছে। মাঝে-মধ্যে চরে এসে স্ত্রীর খোঁজ রাখছেন। তবে এছাড়া তাদের খোঁজখবর নেওয়ার কেউ নেই বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

স্থানীয় এলাকার ইউসুফ ও আব্দুর রশিদ জানান, আখশিমুলিয়া উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মিয়ার কাছ থেকে তিন-চার বছর আগে সুদে এক লাখ টাকা দেনা এনেছিল সুফিয়া ও জয়নাল। তারা টাকা পরিশোধ করতে না পাড়ায় পাওনাদারেরা তার ঘর বিক্রি করে টাকা নিয়ে যায়। এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন; যার কারণে রমজানের মধ্যেও অতি কষ্টে রোজা পালন করছে। 

সুফিয়া খাতুন জানান, পাওনাদারের টাকা দিতে চাপ দিতেছিল, ঘর বেঁচে দিছে। এখন অন্যের জায়গায় ঝুপড়ি তুলে আছি। আমাদের কোনো সামর্থ্য নাই, এজন্য কাগজ টাঙিয়ে থাকি। একটা ঘর কেউ দিলে শেষ জীবনে একটু হলেও শান্তি পেতাম। শরীরে নানা অসুখ দেখা দিয়েছে। সবার সাহায্য চাই।

সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন বলেন, ১ লাখ টাকায় মাত্র ১২ মণ ধান দিয়েছিল। এখন আসল টাকাও দিতে পারে না। পরে ঘর বেঁচে তারাই স্বেচ্ছায় ৪৫ হাজার টাকা দিয়েছে। আমি সুদের কারবার করি না। এ কথা সঠিক না।

সমাজকর্মী মামুন জানান, খবর পেয়ে অসহায় পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সামান্য কিছু খাদ্যদ্রব্য ও সহায়তা করেছি। একটি ঘর নির্মাণে বিত্তবানদের কাছে আর্থিক সহযোগিতা কামনা করছি। 

চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জুয়েল মিয়া ও থানার ওসি জিয়াউর রহমান জানান, দুর্গম চরের এ বিষয়টি জানা ছিল না, দ্রুতই খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিরাজগঞ্জ চৌহালী

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম