মৃত্যুর খবরে বাড়িতে আহাজারি
সারা গ্রাম হেসে-খেলে বেড়ানো সেই শিশু আজ লাশ
আবু বাসার আখন্দ, মাগুরা
প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২৫, ১০:৫৮ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
শিশুটির মৃত্যুর খবর প্রচার হওয়ার পর তার গ্রামের বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার জারিয়াসহ সারা দেশের মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে নিহতের স্বজনদের পাশাপাশি সারা জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ শিশুটির গ্রামের বাড়িতে ভিড় করতে শুরু করেন।
বিকাল ৩টার দিকে মাগুরা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে জারিয়া গ্রামে দেখা যায়, বাড়ির উঠোনে নির্বিকার বসে আছেন সেই শিশুর বাবা ফেরদৌস শেখ। তাকে আঁকড়ে ধরে আছেন সেই শিশুর ছোট চাচা ইবরাহিম শেখ। তখন কান্নায় গড়াগড়ি খাচ্ছে সেই শিশুর দুই বছরের বড় বোন হাবিবা।
বিকারগ্রস্ত বাবা ফেরদৌস বাড়িতে হাজারও মানুষের ভিড় দেখে হতচকিত হয়ে পড়লেও তার চোখে-মুখে ছিল না শোকের ছায়া। তবে ছোট মেয়ে হাবিবার কান্নায় গড়াগড়ি দেখে বাড়িতে উপস্থিত মানুষের চোখেও কান্নার বাঁধ ভেঙে পড়ে। স্বজন এবং প্রতিবেশীদের কান্নায় সেখানকার বাতাস ভারি হয়ে ওঠে।
সেই শিশুর বাবা বছর দশেক আগে পাশের গ্রাম সোনাইকুণ্ডি থেকে এসে জারিয়া গ্রামে বাড়ি করেন। সহায়-সম্বল বলে কিছুই নেই। ছোট একটি বাড়িতে তাদের বাস; কিন্তু শান্ত স্বভাবের কারণে হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামের সবাই সেই শিশু পরিবারকে ভালোবাসেন। তার মৃত্যুর খবর প্রচার হওয়ার পর ওই বাড়িতে উপস্থিত গ্রামের সাধারণ মানুষ এবং প্রতিবেশীদের মধ্যেও পরিবারটির প্রতি তাদের সহানুভূতি এবং সেই শিশুর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করতে দেখা যায়।
মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়িতে স্থানীয় জারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থীকে দেখা যায়। সেই শিশুও ওই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। সেই শিশুর মৃত্যুতে বড় বোন হাবিবাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে শিশু সাইম, হাসিবুল, লিমাসহ অনেকে। এ সময় ‘কে আমার কোলে ঘুমাবে, কে আমার কাছে চকলেট চাবে’- এমন প্রলাপে কান্নায় ভেঙে পড়ে বোন হাবিবা।
পাশবিক নির্যাতনে নিহত হাবিবার চাচা ইবরাহিম শেখ বলেন, আমাদের বাড়ির ছোট মেয়ে সেই শিশু। সারা গ্রাম হেসে-খেলে বেড়ানো মেয়েটি আজ লাশ। আজ তার সেই লাশের জন্য সবাই বাড়িতে অপেক্ষা করছি। আমরা চাই এমন মৃত্যু যেন কোনো পরিবারকে ছুঁয়ে না যায়। চাই অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি; যাতে কেউ এমন পাশবিক কাজে উৎসাহ না পায়।
