Logo
Logo
×

সারাদেশ

শিক্ষককে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠাল আ.লীগ নেতা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন, আমতলী (বরগুনা)

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪৩ পিএম

শিক্ষককে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠাল আ.লীগ নেতা

শিক্ষক হামিদুর রহমান ও ছাত্র আশিক গাজীকে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আমতলী উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা মো. জাহাঙ্গীর হাওলাদারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন ছাত্র রাকিব ও শিক্ষকরা।

এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগ নেতাকে মঙ্গলবার রাতে পুলিশ আটক করেছে। রাতভর নাটকীয়তার পর বুধবার বিকালে পুলিশ তাকে ছেড়ে দিয়েছে। 

এ ঘটনায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ঘটনা ঘটেছে আমতলী উপজেলার উত্তর সোনাখালী স্কুল অ্যান্ড কলেজে মঙ্গলবার বিকালে। 

জানা গেছে, আমতলী উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কমিটির সদস্য মো. জাহাঙ্গীর হাওলাদারের ভাইয়ের ছেলে মো. রাকিব উত্তর সোনাখালী স্কুল অ্যান্ড কলেজে দশম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। 

মঙ্গলবার বিকালে বিদ্যালয় ছুটির আগে একই শ্রেণির ছাত্র রাকিব ও আশিক গাজীর মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জের ধরে আওয়ামী লীগ নেতা বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে ঢুকে আশিক গাজীকে মারধর করে। ওই সময় শিক্ষক হামিদুর রহমান প্রতিবাদ করলে তাকেও মারধর করে। 

শিক্ষক ও ছাত্রকে মারধর করে আওয়ামী লীগ নেতা বীরদর্পে বিদ্যালয় থেকে চলে যায়। পরে বিদ্যালয় শিক্ষকরা ছাত্র ও শিক্ষককে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। ওই হাসপাতালে তাদের ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে আটক করতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে আটক করে। 

এ ঘটনায় বুধবার সকালে আশিকের বাবা বাবুল গাজী থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়। রাতভর নাটকীয়তার পরে বুধবার দুপুরে পুলিশ জাহাঙ্গীর হাওলাদারকে ছেড়ে দিয়েছে। এ ঘটনার বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা আওয়ামী লীগ নেতাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দাবি করেছেন। 

শিক্ষক হামিদুর রহমানের বাড়ি শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার  কালিনগর গ্রামে। অভিযোগ রয়েছে শিক্ষক হামিদুর রহমানকে মামলা না করতে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত এক বছর আগে মেহেদী হাসান নামের এক ছাত্রকে আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর মারধর করে কচুরিপানার মধ্যে ফেলে রাখে। ওই ঘটনায় মামলা চলমান রয়েছে। এ মামলায় তিনি বেশ কয়েক দিন জেলহাজতে ছিলেন।   

ছাত্র আশিক গাজী বলেন, শ্রেণিকক্ষে পড়া নিয়ে রাকিবের সঙ্গে আমার কথা কাটাকাটি হয়। এ ঘটনায় রাকিবের চাচা জাহাঙ্গীর হাওলাদার এসে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে আমাকে মারধর করে। হামিদুর রহমান স্যার এর প্রতিবাদ করলে তাকেও মারধর করেছে। আমি এ ঘটনার শাস্তি দাবি করছি।

আঠারোগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক ফারুক হোসেন মৃধা বলেন, বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষক-ছাত্রকে মারধর করবে তা মেনে নেয়া যায় না। এ ঘটনায় কঠোর শাস্তি দাবি করছি।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হামিদুর রহমান বলেন. শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে ছাত্র আশিক গাজীকে আওয়ামী লীগ নেতা মারধর করে। আমি এর প্রতিবাদ করলে আমাকেও মারধর করেছে। 

তিনি আরও বলেন, আমার বাড়ি অনেক দূরে। আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিবেন। এখানে আমার কিছুই করার নেই। আমি এর বাইরে কিছুই বলতে রাজি না। 

আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর হাওলাদার বলেন, বিষয়টির সমাধান হয়ে গেছে। কিভাবে সমাধান হলো? এমন প্রশ্নের জবাব দেননি তিনি? 

বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মো. ইউসুফ আলী বলেন, ছাত্র অপরাধ করলে আমার কাছে বিচার দিতে পারত কিন্তু  আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর হাওলাদার শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে ছাত্র ও শিক্ষককে মারধর করেছেন। এ ঘটনায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. রাশেদ মাহমুদ রোকনুজ্জামান বলেন, আহত শিক্ষককের মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে যথাযথ চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

আমতলী থানার ওসি মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, উভয়পক্ষ আপস মীমাংসাপত্র দেওয়ায় জাহাঙ্গীর হাওলাদারকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, ছাত্র ও শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।     

আমতলী

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম