Logo
Logo
×

সারাদেশ

ধর্ষিতা নারীর ভিডিও করলেন ফেনীর ওসি, ফেসবুকে ভাইরাল

Icon

ফেনী প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২৭ পিএম

ধর্ষিতা নারীর ভিডিও করলেন ফেনীর ওসি, ফেসবুকে ভাইরাল

থাইল্যান্ডের নাগরিককে ধর্ষণ, প্রতারণা ও মারধরের অভিযোগে ফেনী মডেল থানায় একটি মামলা করার পর ধর্ষিতা ওই নারীর (৪০) বক্তব্য ভিডিও করলেন ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামসুজ্জামান; যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই নারীর ভিডিও বক্তব্য ধারণ করে সাংবাদিকদের কাছে পাঠিয়েছেন ওসি। ভিডিও বক্তব্যে থাইল্যান্ডের ওই নারী পুলিশের কাজের প্রশংসা করেছিলেন।

ভিডিওতে দেখা যায়, ওসি তার কক্ষে চেয়ারে বসে ভিডিও ধারণ করছেন আর ওই নারী তার সামনেই বসে পুলিশের প্রশংসা করে ইংরেজি ভাষায় বক্তব্য দিচ্ছেন। এ সময় তার পাশে কোনো নারী পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়নি। ওই নারীর বক্তব্য স্থানীয় কিছু অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হয়।

জানা যায়, গত ১৩ এপ্রিল থাইল্যান্ডের ওই নারী নাগরিককে ধর্ষণ, প্রতারণা ও মারধরের অভিযোগে ফেনী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন; যার পরিপ্রেক্ষিতে ফেনী সদর উপজেলার শর্শদী ইউনিয়নের নোয়াবাদ মুসলিম মেম্বার ভূঁইয়া বাড়ির মোখসুদুর রহমান (৪৮) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সোমবার আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে প্রেরণ করে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, জন্মসূত্রে ভারতীয় হলেও বর্তমানে থাইল্যান্ডের ওই নারী নাগরিক ২০২০ সালে হংকংয়ে একটি মুদির দোকানের ব্যবসা করতেন। সেখানেই অভিযুক্ত মোখসুদুর রহমানের সঙ্গে পরিচিত হন। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে ও অভিযুক্ত তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেন। একপর্যায়ে সেখানে দুজনে মিলে একটি ব্যবসা শুরু করেন। পরবর্তীতে মোখসুদুরকে ব্যবসা ও বাংলাদেশে জমি কেনার জন্য ২ লাখ ১০ হাজার হংকং ডলার ও কিছু স্বর্ণালংকার দেন ভুক্তভোগী ওই নারী। এক সময়ে অভিযুক্ত সেই দেশে ভিসা সমস্যার কারণে কারাগারে গেলে তাকে মুক্ত করেন ওই নারী।

ওই নারী জানান, জেল থেকে ছাড়া পেয়ে মোখসুদুর বাংলাদেশে চলে এলেও তাদের মধ্যে যোগাযোগ অব্যাহত ছিল। তাকে স্ত্রী পরিচয়ে আত্মীয় স্বজনদের কাছে পরিচয় করিয়ে দেন। গত বছরের ২২ মার্চ বিয়ের প্রলোভন দেখালে প্রথমবার বাংলাদেশে আসেন। একইভাবে মোখসুদুর গত বছরের ১২ অক্টোবর আবার বাংলাদেশে নিয়ে এসে তার নিজ ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করেন। সর্বশেষ রোববার ওই নারী বাংলাদেশে এসে অভিযুক্তের ফেনীর বাড়িতে গেলে তাকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেন।

এ ঘটনায় সোমবার ওই নারী বাদী হয়ে মোখসুদুর রহমানের নাম উল্লেখ ও আরও দুইজনকে অজ্ঞাত আসামি করে ফেনী মডেল থানায় একটি মামলা করেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মোখসুদুরকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। মঙ্গলবার আদালতে ভুক্তভোগী নারীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে।

ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামসুজ্জামান ভিডিও ধারণের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ওই নারী আমাদের কাজে খুশি হয়ে পুলিশের কাজের প্রশংসা করেছেন; যা পজিটিভ চিন্তা করে আমরা প্রচার করার জন্য বলেছি। ওই নারীর বক্তব্যে ধর্ষণের কোনো বিষয় উঠে আসেনি।

ফেনী জেলা জজ কোর্টের পিপি মেজবাহ উদ্দিন খান বলেন, দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে একজন ভিকটিম নারীর ভিডিও বক্তব্য ওসি নিতে পারেন না।

ফেনীর পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, ওসি যদি এ রকম ভিডিও করে থাকেন তিনি জবাব দেবেন। আমি জানি না। তবে ওই নারী কী বক্তব্য দিয়েছেন তা দেখার বিষয়।

উল্লেখ্য, গত ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে তার মা সোনাগাজী থানায় স্থানীয় ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন জিজ্ঞাসাবাদের নামে নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও রেকর্ড করেন এবং তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেন। এ ঘটনায় জবানবন্দির ভিডিও ফেসবুকে প্রকাশ করার ঘটনায় সোনাগাজীর সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমের আট বছরের কারাদণ্ড হয়।

থাইল্যান্ড ফেনী

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম