ইজারাদারদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের অভিযোগ
রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৩ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে পৌরসভাসহ ৩০টি হাটবাজারে সরকারে নির্ধারিত হারের কয়েকগুণ বেশি খাজনা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ইজারাদারদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, হাটবাজারের প্রকাশ্যে খাজনার তালিকা টাঙানোর কথা থাকলেও বেশিরভাগ হাটে তা নেই। ইজারাদারদের চাপে পড়ে খাজনার জন্য অতিরিক্ত অর্থ দিতে হচ্ছে তাদের। এতে করে ভোক্তা পর্যায়ে বাড়ছে পণ্যের দাম।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সমস্ত বাজারের ইজারার জন্য গত মার্চ
মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে টেন্ডার দেওয়া হয়। প্রকাশ্যে টেন্ডার হলেও সিন্ডিকেট করে ইজারা
ভাগিয়ে নেয় একটি চক্র। বাজারে প্রকাশ্যে খাজনার তালিকাও দিচ্ছেন না তারা। করছে না বাজারের
কোনো সংস্কারও।
সরেজমিনে রায়পুর শহরের নতুন বাজার, হায়দরগঞ্জ, মোল্লারহাট ও মীরগন্জ
বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সরকারের নির্ধারিত টোলের কোনো তালিকা নেই। ব্যবসায়ীরা
জানান, সরকারে নির্ধারিত হার সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই। খাজনা আদায়কারীরা যে পরিমাণ
টাকা চান, তাদের সে পরিমাণ টাকা দিতে হয়।
বাজারগুলোতে উপজেলা প্রশাসনের নির্ধারিত রেট অনুযায়ী, ছাগলের ক্রয়মূল্যের
ওপর ১০ শতাংশ টোল দিতে হবে। তবে বিক্রেতাদের কাছ থেকে শতকরা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ টাকা
দিতে হয়। মাংসের দোকান থেকে ১০ টাকা নেওয়ার কথা থাকলেও নেওয়া হয় ১০০ টাকা। পানের চটিতে
ছয় টাকার স্থলে ৫০ থেকে ৮০ টাকা, মশলার দোকান থেকে ৫০ টাকা, ফলের দোকান থেকে ৩০ টাকার
স্থলে ২০০ টাকা ও কাঁচামাল-সবজিতে ১০ টাকার স্থলে ৫০ টাকা করে খাজনা আদায় করা হয়। এছাড়া
বাজার দিনগুলোতে ছোট পিকআপ ও বড় ট্রাক থেকে ৩০ থেকে ১৫০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। এছাড়াও
পাইকারি ক্রয়-বিক্রয়েও প্রতি হাটে বিপুল পরিমাণ অঘোষিত খাজনা আদায় করা হয়।
নতুন বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী রুবেল বলেন, তিন থেকে চার হাত জায়গায়
চট বিছিয়ে বসলেই ১২০ টাকা দিতে হয়। অনেক সময় ২০০ টাকাও দিতে হয়। না দিলে আমাদের
বসতে দেওয়া হয় না।
শরিফ হোসেন নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘শুনেছি হাটে খাজনা দেওয়া-নেওয়ার
ক্ষেত্রে সরকারি হার রয়েছে। কিন্তু আমরা সরকারি হার সম্পর্কে জানি না এবং দেখিও নি।
জানতে চাইলে, ইজারাদারের লোকেরা আমাদের সঙ্গে অনেক খারাপ ব্যবহার করেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনজন ব্যবসায়ী বলেন, সরকারি হাটবাজারগুলো বেশিরভাগ
ক্ষেত্রে দলীয় নেতাকর্মীরা ইজারা নেন। ফলে তারা তাদের ইচ্ছে মতো জোর করে খাজনা আদায়
করেন। সেক্ষেত্রে আমাদের মতো সাধারণ ব্যবসায়ীরা সরকারি হার দেখার কথা বললে মার খেতে
হয়। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের ব্যবসাও বন্ধ করে দিতে হয়।
উপজেলার বাসিন্দা মাহবুব আলম মিন্টু বলেন, হাটবাজারে অতিরিক্ত খাজনা
আদায়ের ফলে ভোক্তা পর্যায়ে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এ বিষয়ে সরকারের
কোনো তদারকিও নেই। গত ১৫ এপ্রিল উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা
হলেও কোনো সমাধান হয়নি।
রায়পুর নতুন বাজারের ইজারাদার আবদুল মালেক বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে আমরা সরকারি হারের থেকে কম খাজনা নিয়ে থাকি। আবার কিছু ক্ষেত্রে বেশিও নেওয়া হয়। ব্যবসায়ীরা অনেক সময় আমাদের নামে মিথ্যা কথাও বলে। আগের চেয়ে এখন ইজারা দ্বিগুণ রেটে দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।
সরকার নির্ধারিত খাজনার হার প্রকাশ্য স্থানে প্রদর্শনের বিষয়ে মালেকসহ
কয়েকজন ইজারাদার বলেন, ‘এটি ইজারাদাররা টাঙায় না। উপজেলা প্রশাসনের টাঙানোর কথা।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌর প্রশাসক ইমরান হোসেন
বলেন, ‘এ বিষয়ে ইজারাদার ও ব্যাবসায়ীদের নিয়ে সভা করা হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণ ও খাজনা
আদায়ের ক্ষেত্রে নতুন বাজার দর অনুযায়ী খাজনার হার নির্ধারণ করা হবে। যাতে কেউ অতিরিক্ত
অর্থ আদায় করতে না পারেন, সেজন্য প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এছাড়া
জেলা প্রশাসন হাট বাজারের প্রকাশ্যে নির্ধারিত খাজনার তালিকা স্থাপনের ব্যবস্থাও করা
হবে।’
