উৎসবের আলো নিভে গেছে চবি ছাত্র লংঙির অপহরণের খবরে
জয়দেব রানা, আলীকদম (বান্দরবান)
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:০৩ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
পাহাড়ের পাড়ায় পাড়ায় চলছিল নতুন বছরের আগমনকে ঘিরে ম্রোদের চাংক্রাই উৎসব। দুর্গম সীমান্তবর্তীর পাড়ার বাসিন্দা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র লংঙি ম্রোর নিজ পাড়াতেও ছিল উৎসবের আমেজ। পরিবারের সদস্য অনেক দিন পরে ঘরে আসবে বলেই উৎসবের সব আয়োজন চলছিল।
কিন্তু সীমান্তবর্তী নিয়াদুইপাড়ায় পরিবারের পাশাপাশি পাড়াবাসীর উৎসবের সব আলো নিভে গেল বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছেলেটির অপহরণের খবরে।
পাঁচ দিনেও উদ্ধার হয়নি অপহৃত পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী। অপহৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বান্দরবানের আলিকদম উপজেলার সীমান্ত দুর্গম নিয়াদুইপাড়ার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া লংঙি ম্রোও। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
গত ১৬ এপ্রিল সকালে কুকিছড়া থেকে উৎসব শেষ করে খাগড়াছড়ি সদরে যাওয়ার পথে গিরিফুল নামক এলাকায় টমটম থামিয়ে পাঁচ শিক্ষার্থী ও চালককে অপহৃত নিয়ে যাওয়া হয়। পরে চালককে ছেড়ে দেওয়া হলেও রোববার দুপুর পর্যন্ত পাঁচ শিক্ষার্থীর মুক্তি দেওয়া হয়নি। তাদের উদ্ধার করাও সম্ভব হয়নি বলে জানা যায়। বন্ধুদের সঙ্গে বিজু উৎসবে যাওয়ায়ই কাল হলো পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জীবনে।
অপহরণের খবর শোনার পর থেকে অন্য পরিবারের মতো উৎকন্ঠায় দিন পার করছে দুর্গম পাহাড়ে বসবাসরত লংঙির পরিবারও। আঞ্চলিক দলগুলো একে অপরের ওপর দায় চাপালেও অপহৃত লংঙি ম্রোসহ সবাইকে সুস্থ অবস্থায় ফেরত চাই।
লংঙি ম্রোর বাড়ি বান্দরবান জেলার আলিকদম উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নিয়াদুইপাড়ায়। এটি মিয়ানমার সীমান্তবর্তী একটি পাড়া। লংঙি ম্রো মৃত রেংপুং কারবারির ছেলে।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে লংঙি তৃতীয়। তার বাবা গত বছর মারা যান। মা ও বড় ভাই জুমচাষ করে ছোট ভাই লংঙিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা করাচ্ছেন।
কুরুকপাতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ম্রো সোশ্যাল কাউন্সিলের সহসভাপতি ক্রাতপুং ম্রো বলেন, এলাকাটি খুবই দুর্গম। আলিকদম থেকে গাড়িতে এক ঘণ্টা ও তারপর একদিন পায়ে হেঁটে গিয়ে নিয়াদুই পাড়ায় পৌঁছাতে হয়। লংঙি ম্রোর অপহরণের খবর তার মা ও ভাইকে জানিয়েছি। পরিবার পাহাড়ে জুমচাষ করে লংঙিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াচ্ছেন। পরিবারসহ ম্রো সম্প্রদায়ের লোকজন খুবই চিন্তিত বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান। অতিদ্রুত অপহৃত সব শিক্ষার্থীর মুক্তি দাবি করেছেন তিনি।
লংঙি ছাড়াও অপহৃত অন্য শিক্ষার্থীরা হলেন- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের রিশন চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের দিব্যি চাকমা এবং চারুকলা বিভাগের অলড্রিন ত্রিপুরা। তারা সবাই ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
খাগড়াছড়ি জেলার পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, পাঁচ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারের ব্যাপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোনগুলো বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে প্রযুক্তিগত সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।
