পাঁচ দিনেও খোঁজ মেলেনি ৫ চবি শিক্ষার্থীর, পাহাড়ে অপহরণ নিয়ে উদ্বেগ
সুশীল প্রসাদ চাকমা, রাঙামাটি
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০০ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
পাহাড়ে অপহরণ নিয়ে জনমনে নতুন করে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। খাগড়াছড়ি থেকে অপহৃত ৫ শিক্ষার্থীর খোঁজ ৫ দিনেও মেলেনি। এতে চরম উৎকণ্ঠায় তাদের অভিভাবকরা। দ্রুত অপহৃতদের উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন আদিবাসী শিক্ষার্থীরা।
উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনী। অবিলম্বে তাদের সম্পূর্ণ সুস্থ শরীরে উদ্ধার করে মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা।
১৬ এপ্রিল অটোরিকশাযোগে খাগড়াছড়ির কুকিছড়া থেকে জেলা সদরে যাওয়ার পথে গিরিফুল নামক এলাকায় তাদের গাড়ি আটকে চালকসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে চালককে ছেড়ে দিলেও পাঁচ শিক্ষার্থীর খোঁজ এখনো মেলেনি। এ ঘটনায় পাহাড়ে জনমনে উদ্বেগ বেড়েছে।
ঘটনার সঙ্গে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টকে (ইউপিডিএফ) দায়ী করা হলেও তা অস্বীকার করেছেন সংগঠনটির অন্যতম সংগঠক অংগ্য মারমা।
অপহৃতরা হলেন- পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সমর্থনপুষ্ট পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখার সদস্য রিশন চাকমা এবং তার চার সহপাঠী বিশ্ববিদ্যালয়টির চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের দিব্যি চাকমা, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের লংঙি ম্রো ও চারুকলা বিভাগের অলড্রিন ত্রিপুরা। তারা সবাই চবির ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।
উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে অপহৃত দিব্যি চাকমার মা রাঙামাটির বরকলের ভারতী দেওয়ান জানান, তারা খুবই উদ্বিগ্ন। তাদের সন্তানরা কোথায়, কী অবস্থায় রয়েছে- তা কিছুই জানতে পারছেন না। তারা যাতে ভালো থাকে, সুস্থ থাকে এবং দ্রুত সম্পূর্ণ সুস্থভাবে ফিরতে পারে সেজন্য সবার আশীর্বাদ কামনা করেছেন তিনি।
রোববার উদ্বেগ প্রকাশ করে খোদ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা জানিয়েছেন, ঘটনার পর থেকে সার্বক্ষণিক অপহৃত শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে খোঁজ রাখছেন তিনি। এ ব্যাপারে সব সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন। তাদের দ্রুত উদ্ধারে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নিরাপত্তা বাহিনীর উদ্ধার তৎপরতা চলছে। যত দ্রুত সম্ভব সম্পূর্ণ সুস্থভাবে উদ্ধার করে তাদের মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানান উপদেষ্টা। অবিলম্বে নিঃশর্তে শিক্ষার্থীদের সুস্থ শরীরে ফিরিয়ে দিতে অপহরণকারীদের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
পার্বত্য উপদেষ্টা আরও বলেন, পাহাড়ে এ ধরনের অপহরণ ঘটনা কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়। তাছাড়া উৎসব চলাকালে এ ধরনের কর্মকাণ্ড জঘন্য অপরাধ, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে কোনোরকম ছাড় নেই। পাহাড়ে এ ধরনের অপতৎপরতার মূলে বড় ফ্যাক্টর চাঁদাবাজি। যেকোনো উপায়ে পাহাড়ে অপহরণ ও চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। অপরাধী কাউকে ছাড় দেওয়া যাবে না। এ লক্ষ্যে সবাইকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে।
এদিকে অপহৃতদের দ্রুত উদ্ধারের দাবিতে রোববার সকালে রাঙামাটিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত ‘আদিবাসী’ শিক্ষার্থীরা। পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপিও পাঠিয়েছেন তারা। এ সময় ঘটনার সঙ্গে ইউপিডিএফ জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপিডিএফের সংগঠক অংগ্য মারমা বলেছেন, এ ধরনের অপহরণের ঘটনায় আমাদের সংগঠনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমরা কোনো সহিংস রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। তাই আমরা শুরু থেকে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতের বিপক্ষে।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, অপহৃতদের উদ্ধারে জোরালো তৎপরতা চলছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের অবস্থান শনাক্ত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখনো সাধারণ ডায়েরি বা কোনো মামলা হয়নি বলে জানান তিনি।
