হঠাৎ আধা ঘণ্টার শিলাবৃষ্টিতে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি
যশোর ব্যুরো
প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫২ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
পুরোদমে চলছে কৃষকের ক্ষেতের পাকা ধান ঘরে তোলার কাজ। হঠাৎ আধা ঘণ্টার শিলাবৃষ্টিতে যশোরে বোরো ধানের খেত তছনছ হয়ে গেছে। কেটে রাখা ধান পানিতে ভাসছে। খেতে ধান ঝরে পড়েছে। শিলাবৃষ্টিতে কৃষকের সর্বনাশ হয়েছে।
গত দুই সপ্তাহের তীব্র তাপপ্রবাহ শেষে সোমবার ২টার দিকে আকাশ কালো মেঘে ঢাকা পড়ে। এরপর শুরু হয় ঝড়োহাওয়া। কিছুক্ষণের মধ্যেই কালবৈশাখীর ঝড়ের সঙ্গে শুরু হয় শিলাবৃষ্টি।
একপর্যায়ে বৃষ্টি কম গেলেও প্রচুর পরিমাণে শিলা পড়তে থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে শিলাবৃষ্টি কারণে যশোরে বোরো মৌসুমে উঠতি ধানের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
সবেচেয়ে বেশি ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে চৌগাছা, সদর ও বাঘারপাড়া উপজেলায়। শেষ সময়ে ধানে শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চিন্তিত হাজারও চাষি।
শিলাবৃষ্টিতে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিরুপণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
চৌগাছার সিংহঝুলী মাঠপাড়ায় গ্রামের কৃষকরা বলেন, তাদের জমির খেতে ধানগাছ শুধু দাঁড়িয়ে আছে, শীষ থেকে ধান ঝরে পড়ে রয়েছে মাটিতে। শিলার আঘাতে ঝরে পড়া ধানের খেতের মাটিতে সোনালি রঙের হয়ে আছে।
কৃষক টনিরাজ বলেন, দুই বিঘা জমিতে ধান করেছিলাম। ১৫ কাঠা জমির ধান কেটেছি। ২৫ কাঠা কাটা হয়নি। শিলাবৃষ্টির পর মাঠে গিয়ে দেখি গাছে একটি ধানও নেই। এখনও জমির লিজের ২০ হাজার টাকা দিতে হবে খেত মালিকের। সব শেষ হয়ে গেছে।
একই গ্রামের কৃষক শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন, এবার ১১ বিঘা ধান করেছিলাম। ৪ বিঘা কাটা হয়নি, দেড় বিঘা কেটে খেতেই রেখেছিলাম। এই ধান সব শেষ হয়ে গেছে। যেগুলো কাটা হয়নি সব ঝরে গেছে। এতে সাড়ে তিন লাখ টাকার অধিক ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, চৌগাছার সিংহঝুলী, বলিদাপাড়া, ঝাউতলা, জামালতা, জগন্নাথপুর, কয়ারপাড়া মাঠের ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এসব এলাকার ২ থেকে ৩ হাজার হেক্টর জমির বাসমতি ধানের বেশি ক্ষতি হয়েছে।
বেশিরভাগ ক্ষেতেই বাসমতি ও মিনিকেট ধান সব ঝরে গেছে। এছাড়া পৌর এলাকার পাঁচনমনা, ইছাপুর, তারিনিবাস, কংশারীপুর, স্বরুপদাহ, চৌগাছা সদর ইউনিয়নের লস্কারপুর, পিতম্বরপুর, মন্মথপুর মাঠের ধানেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
শুধু ধানেরই না এসব মাঠের পটল, কচুসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি, আম লিচুর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চৌগাছার নারায়ণপুরে বজ্রপাতে কৃষকের তিনটি গরু মারা গেছে। এছাড়া বাঘারপাড়ায় কৃষকের পাকা ধান কেটে স্তূপ করা গাদায় বজ্রপাতে কয়েকটি মাঠে আগুন ঝরে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, আকস্মিক শিলাবৃষ্টিতে যশোরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চৌগাছায়। মাঠে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ধানের ক্ষতি হয়েছে। এ বছর এক লাখ ৫৭ হজার ৫০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছিল।
এর মধ্যে সোমবার পর্যন্ত কাটা হয়েছে ৫১ শতাংশ জমির ধান। এখন কেটে রাখা ধানখেত থেকে পানি বের করার পরামর্শ দিচ্ছি। আশা করছি, আগামীকাল থেকে আবহাওয়ার উন্নতি ঘটবে। তাই আমরা চাষিদের পাকা ধান দ্রুত কেটে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।
