স্থানান্তর নিয়ে দু’পক্ষের দ্বন্দ্বে দুদিন ধরে তালা ঝুলছে স্কুলে
সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪৯ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের ছনকা উচ্চ বিদ্যালয় স্থানান্তর ইস্যুতে দুদিন ধরে তালা ঝুলছে। ধলেশ্বরী নদীর পূর্বপাড় থেকে পশ্চিমপাড়ে স্থানান্তরকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের দ্বন্দ্বে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। দুশ্চিন্তায় রয়েছে অভিভাবকেরা।
সোমবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের টিনশেড ভবনের প্রতিটি
কক্ষে তালা ঝুলছে। এমনকি শৌচাগারেও ঝুলছে তালা।
শিক্ষার্থীরা বারান্দা ও মাঠে বসে অপক্ষোর প্রহর গুনছে। স্কুলের আশেপাশের বাড়ি থেকে
পানি ও টয়লেটের প্রয়োজন মেটাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। অভিভাবকরাও উৎকণ্ঠায় বিদ্যালয়ের বাহিরে
অপেক্ষা করছেন।
ছনকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আব্দুল
মজিদের অভিযোগ, বর্তমান প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম ও বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি
মোহাম্মদ শাহজাহান নদী ভাঙনের অজুহাতে বিদ্যালয় স্থানান্তরের চেষ্টা চালাচ্ছেন। গত
শুক্রবার রাতারাতি ছনকা বাজার সংলগ্ন এলাকায় একটি অস্থায়ী টিনশেড ঘর তৈরি করে রোববার
থেকে জোরপূর্বক নতুন স্থানে ক্লাস শুরু করেছেন। অপরদিকে আগের বিদ্যালয় ভবনে তালা ঝুলিয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা জানায়, তারা নদীর পূর্ব পাড়ের বাসিন্দা। আগের স্থানে স্কুল
থাকলে তাদের কম কষ্ট পোহাতে হবে। স্কুল স্থানান্তর হলে তাদের নদী পার হয়ে যেতে হবে,
যা সময় ও নিরাপত্তার দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ। অভিভাবকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, নতুন
স্থান ছনকা বাজারের কাছে হওয়ায় বখাটেদের উৎপাতের শঙ্কা রয়েছে।
স্কুল খোলার অপেক্ষায় থাকা বিথী, রুমাসহ একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, তারা
দুদিন ধরে স্কুলের বারান্দায় আছে।
সাটুরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুছ খান মজলিশ মাখন বলেন,
বিদ্যালয় স্থানান্তর করতে হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুসরণ করে যথাযথ প্রক্রিয়া
ও অনুমোদন নিতে হয়। বর্তমান ভবন নদী থেকে নিরাপদ দূরুত্বে রয়েছে এবং নদী শাসনের কাজ
চলমান। এছাড়া বিদ্যালয় স্থানান্তর নিয়ে যে তদন্ত হয়েছে তা গোপনে করা হয়েছে বলে অভিযোগ
করেন তিনি।
ছনকা গ্রামের রোখসানা বলেন, ‘বিদ্যালয়টি আমাদের জমিতে গড়ে উঠেছে। এখানে
আমাদের শ্রম, ঘাম ও আবেগ জড়িয়ে আছে। একটি পক্ষ রাতের আঁধারে অন্য স্থানে সরিয়ে নিতে
চাইছে, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এতে বড় ধরণের সংঘর্ষ ঘটতে পারে।’
বিদ্যালয়ের স্থানান্তর নিয়ে প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, ‘সবকিছু
নিয়ম মেনেই করা হয়েছে। ২৬০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ জন নতুন স্থানে ক্লাসে উপস্থিত
হয়েছে।’
এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফকির জাকির হোসেন
বলেন, ‘বিদ্যালয় স্থানান্তর নিয়ে মন্ত্রণালয়ের চিঠি রয়েছে। তবে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া
যথাযথ হয়নি। অভিভাবকদের সঙ্গে সমঝোতা জরুরি ছিল যা প্রধান শিক্ষক করেননি। তিনি বিষয়টি
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘বিদ্যালয়ে গিয়ে আমি
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। অধিকাংশ শিক্ষার্থী
বর্তমান স্থানে বিদ্যালয় রাখতে চায়। প্রধান শিক্ষক আইন অমান্য করায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয়
ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
