দুর্ভোগের আরেক নাম ইছামতির কচুরিপানা
কাজী সোহেল, নবাবগঞ্জ (ঢাকা) থেকে
প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৫, ০৯:২৭ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কচুরিপানার কারণে ঢাকার নবাবগঞ্জ ও দোহারের ইছামতি নদীপারের মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। নদীতে স্রোত বা পানিপ্রবাহ না থাকায় ইছামতি নদীর বিভিন্ন অংশ কুচরিপানায় ভরে উঠেছে। বিশেষ করে ধাপারীবাজার থেকে বান্দুরা হয়ে শিকারীপাড়া বেড়িবাঁধ ও দোহারের কার্তিকপুর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থান কচুরিপানার স্তূপে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, কচুরিপানা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এর মধ্যে নদীতে স্রোত না থাকায় বড় হয়ে এগুলো স্তূপে পরিণত হয়ে গেছে। অনেক স্থানে কচুরিপানা পঁচে নষ্ট হয়ে গেলে পানিতে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। পানির এমন অবস্থায় মাছগুলো মরে ভেসে উঠছে। এতে বেকার হয়ে পড়েছে নদী সংশ্লিষ্ট জেলে পরিবার। পানি না থাকায় এবং কচুরিপানার কারণে পানি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ইছামতি নদীর এ অংশের পানি ব্যবহার করতে পারছেন না এই অঞ্চলের মানুষ। কচুরিপানার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চান এ অঞ্চলের মানুষ।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সময় পদ্মার সঙ্গে সরাসরি সংযোগ ছিল কাঁশিয়াখালি ও কার্তিকপুরের অংশ দিয়ে। তবে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেতে কাঁশিয়াখালিতে বাঁধ নির্মাণ ও কার্তিকপুর অংশের পদ্মার মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এরপর থেকে স্রোতহীন হয়ে পরে ইছামতি নদী। পানির স্রোত না থাকায় কচুরিপানায় ভরে উঠে ইছামতি নদীর বিভিন্ন অংশ। কচুরিপানা পঁচে পানি দূষিত ও দুর্গন্ধ হয়ে যায় এবং পানির না থাকায় বেকার হয়ে পড়ে ইছামতি নদীর ওপর নির্ভরশীল জেলে পরিবারগুলো। বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় চলে যায় অনেকে। এছাড়া নদী পথে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নবাবগঞ্জের পশ্চিম অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা।
উপজেলার দাউদপুর এলাকার জেলে বিমল হালদার বলেন, বাপ-দাদা ইছামতিতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। আমিও মাছ ধরাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম; কিন্তু ইছামতি নদী দখল, নদীতে পানি না থাকা এবং কচুরিপানার কারণে এখন আর নদীতে মাছ পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে দিনমজুরের কাজ করি। বয়স হয়েছে, ঠিকমতো কাজ করতে পারি না। খুব কষ্টে জীবন যাচ্ছে।
স্থানীয়রা বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা পিয়ারার কারণে আমরা নদীতে নামতে পারতাম না। তিনি নদীতে বাঁধ দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিলেন। সৃষ্টিকর্তা তার কাছ থেকে আমাদের রক্ষা করছেন; কিন্তু এখন কচুরিপানার কারণে আমরা নদীতে নামতে পারছি না। আশা করি, সরকার এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে।
বান্দুরার বিকাশ হালদার বলেন, আমাদের মূল পেশাই ছিল মাছ ধরা। কিন্তু নদীতে এখন পানি নাই। আজ আমরা পানি সংকটে ভুগছি। বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় চলে গেছি। পরিবারের এখন আর কেউ এ পেশায় নাই। বেড়িবাঁধে স্লুইসগেট না দেওয়া হলে এ সমস্যা সমাধান হবে না।
বান্দুরার ব্যবসায়ী জামাল হোসেন বলেন, সড়কপথে কাঁচের মালামাল আনলে ঝাঁকিতে অনেক সময় ভেঙে যায়। তাই নৌপথই ছিল নিরাপদ। কিন্তু নদীর নাব্যতা ও কচুরিপানার কারণে বোট এপাশে আসতে পারে না। এতে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা।
ইছামতি নদীর কচুরিপানা অপসারণ কমিটির সমন্বয়ক মো. রাশিম মোল্লা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে জোর দাবি জানিয়ে বলেন, ইছামতি নদীকে বাঁচাতে দ্রুত সোনাবাজু-কাঁশিয়াখালী বেড়িবাঁধ ও কার্তিকপুরে নদীর মূল অংশে প্রয়োজনীয় স্লইসগেট স্থাপন করতে হবে। একইসঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে কচুরিপানা অপসারণের দাবি জানান তিনি।
ঢাকা পওর বিভাগ-২ বাপাউবো ঢাকার নির্বাহী প্রকৌশলী এমএল সৈকত যুগান্তরকে বলেন, ইছামতী নদী ও নদীর শাখা বিভিন্ন খাল খননসহ নদীর কচুরিপানা অপসারণ এবং পানিপ্রবাহ সচল রাখতে বিশ্বব্যাংকের কাছে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। আশা করছি, এটা পাশ হয়ে এলে ইছামতি নদীর কচুরিপানা অপসারণসহ নদী আবার পুরোনো ঐতিহ্য ফিরে আসবে।
নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দিলরুবা ইসলাম বলেন, ইছামতি নদীর কচুরিপানা অপসারণসহ নদীর উন্নয়নে ওপর মহলে জানানো হয়েছে।
