তিস্তার চরে বেড়েছে বাদাম চাষ, তবুও যে শঙ্কায় চাষিরা

কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৫, ১২:৫৯ পিএম

রংপুরের কাউনিয়ায় তিস্তার চরে বাদাম চাষে দিন বদলের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। লাভজনক ফসল হওয়ায় এখানকার কৃষকরা বাদাম চাষে ঝুঁকেছেন। গতবারের তুলনায় চলতি মৌসুমে বেড়েছে বাদামের চাষ। স্বল্প খরচে বাদাম চাষ লাভজনক হওয়ায় দিন দিন বাদাম চাষে আগ্রাহী হচ্ছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৮৭০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল।
লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পাঁচ হেক্টর বেশি জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র ধরা
হয়েছে এক হাজার ৮৭১ টন।
প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে চলতি মৌসুমে তিস্তার চরে প্রায় পাঁচ
কোটি টাকার বাদাম উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন কৃষকরা। চরে বেশির ভাগ জমিতে বিনা-৪, বারি-৬,
বারি-৮ ও বারি-৯ জাতের বাদাম চাষ হয়েছে।
সরেজমিনে তিস্তার চর এলাকাজুড়ে দেখা যায়, বালুচরে দিগন্ত মাঠ জুড়ে বাদাম
খেত। যে দিকে চোখ যায় সে দিকেই বাদামের সবুজ খেত। বাদামের সবুজ পাতা হলুদ হওয়ার অপেক্ষায়
রয়েছে কৃষকরা।
বাদাম গাছের পাতা হলুদ হলেই বাদাম তোলার উপযোগী হয়। তখন কৃষক ও কৃষাণীদের
দম ফেলার ফুসরত থাকবে না। কিন্ত খরস্রোতা তিস্তার পানি নিয়ে আতঙ্কে আছে কৃষকরা। হঠাৎ
করে নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে কৃষকদের স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে।
চরগনাই গ্রামের বাদাম চাষি দুদু মিয়া। চলতি মৌসুমে এক হাজার ২০০ শতাংশ জমিতে বাদামের চাষ করেছেন তিনি। দুদু মিয়া বলেন, ‘বর্তমানে বাদামের অবস্থা ভাল আছে। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে বাম্পার ফলন পাব। তবে ভয়ে আছি নদীর পানি বৃদ্ধি নিয়ে। পানি বাড়লে স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে।’
একই ধরণের কথা বলেছেন বিশ্বনাথ গ্রামের বাদাম চাষি আব্দুল বাকী, গোলাম
মোস্তফা, বছির উদ্দিন, নিজপাড়া গ্রামের খয়বর, মোফাজ্জল, পাঞ্জর, ভাঙা গ্রামের পুস্পেন্দ্র,
সুবোধ ও দিনেশ চন্দ্র। তাদের আশা, যদি বৃষ্টি ও নদীর পানিতে বাদাম তলিয়ে না যায় তাহলে
লাভের মুখ দেখবেন।
গদাই গ্রামের বাদাম চাষি আলামিন বলেন, ‘এবারের ন্যায় প্রতি বছর যদি কৃষি
বিভাগ ভালোমানের বীজের ব্যবস্থা করে তবে কাউনিয়ায় বাদামের চাষ আরও বাড়বে।’
উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়ের চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘চরের মানুষেরা
ব্যাপক হারে বাদাম চাষ করছেন। চাষিদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া
হলে তারা বাদাম চাষে আরও আগ্রহী হবেন।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তানিয়া আকতার বলেন, ‘আবহাওয়া ভালো থাকায়
বাদামের বাম্পার ফলনের আশা করছি। গত বছর বাদামের ভাল দাম পাওয়ায় এবার কৃষকরা বেশি করে
বাদাম চাষ করেছে। কৃষি বিভাগ বাদাম চাষিদের বিনামূল্যে বীজ ও পরামর্শে দিয়ে সহায়তা
করে আসছে।’