
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আঙুরের চাষ হয়, তাহলে আমাদের দেশেও সম্ভব। এমন বিশ্বাসে যুবক আলামিন হোসেন নিজের ১০ কাঠা জমিতে আঙুরের চাষের ঝুঁকি নিয়েছিলেন। আঙুর বিদেশি ফল হওয়ায় এ অঞ্চলে হবে না ভেবে সে সময়ে অনেকে হাসি তামাশা করত। বলতেন, এ চাষে লোকসান হবে।
কিন্ত, তাদের ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। কেননা আলামিনের খেতের মধ্যকার
(বানে) সেডে এখন থোকায় থোকায় ঝুলে আছে অসংখ্য আঙুর। যা দেখে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। আলামিনের
এমন সফলতার হাতছানিতে এখন অনেকেই আঙুর চাষের প্রস্ততি নিচ্ছেন।
আলামিন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নের ঘোপপাড়া গ্রামে
ইসলাম বিশ্বাসের ছেলে।
আলামিনের আঙুরের খেতে গিয়ে দেখা যায়, খেতের চারপাশে জাল দিয়ে ঘেরা। আর
ভেতরে সিমেন্টের খুঁটির ওপর বিশেষ সুতায় বোনা জাল বিছিয়ে বান তৈরি করা হয়েছে। বানের
ওপর দিয়ে বেয়ে চলে গেছে আঙুর গাছের লতাগুলো। সারা খেতের বানে আঙুর গাছের ডগায় থোকায়
থোকায় লাল, সাদা, কালোসহ কয়েকটি রঙের আঙুর ঝুলছে। আর আলামিন খেতের ভেতরেই কাজ করছেন।
আলামিন জানান, মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারের সন্তান তিনি। বাবার তিনি থেকে চার বিঘা জমি আছে। এখান থেকে যা আসে তা দিয়ে ঠিকমত সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ে। ফলে এইচএসসির পর আর লেখাপড়া করতে পারেননি। দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই ফারুক হোসেন একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অত বেশি চাষের জমি নেই। যে কারণে অল্প জমিতে বেশি
লাভের আশায় কিছু চাষ করার কথা ভেবেছি। সেদিক দিয়ে আঙুরকেই বেছে নিয়েছি।’
আলামিন বলেন, ‘২০২৪ সালে এপ্রিল মাসে মহেশপুর থেকে বাইক্লোর, একুলো,
জয়সিডলেস, ভেলেজ, মারসেলকোচসহ ছয় জাতের ৮২ পিচ আঙুরের চারা কিনে রোপণ করি। গাছগুলোতে
বছর পার না হতেই আঙুর ধরেছে। ঠিকমতো পরিচর্যা করতে পারলে একটি গাছ থেকে ১০ বছরের অধিক
সময় আঙুর পাওয়া সম্ভব।’
আঙুরের খেতে এ পর্যন্ত দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথম
বছরটাতে বেশিরভাগ খরচ হয়ে গেছে। এরপর যে কয় বছর গাছ সতেজ থাকবে খুব বেশি একটা খরচ হবে
না।’
কাষ্টভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা তুষার বলেন, ‘আলামিনের আঙুর চাষ দেখে প্রথমদিকে
যারা সন্দেহ প্রকাশ করেছিল তারাই এখন নিজেরা চাষ করার প্রস্ততি নিচ্ছেন। আলামিন দেখিয়ে
দিয়েছেন।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুব আলম রনি বলেন, ‘এক সময় আঙুরকে বিদেশি
ফল বলা হত। কিন্ত এখন আমাদের দেশে পরীক্ষামুলক চাষ হচ্ছে। এ উপজেলাতে চলতি বছর আলামিনসহ
বেশ কয়েকজন কৃষক বাণিজ্যিকভাবে আঙুরের চাষ করেছেন।’