যাত্রীবাহী লঞ্চে পিকনিকে আসা নারীদের প্রকাশ্যে মারধর

যুগান্তর প্রতিবেদন, মুন্সীগঞ্জ
প্রকাশ: ১০ মে ২০২৫, ০৪:১৬ পিএম

মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটে যাত্রাবিরতি করা একটি যাত্রীবাহী লঞ্চের কেবিনে পিকনিকে আসা দুই নারীকে প্রকাশ্যে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ওই যাত্রীদের কাছ থেকে টাকাপয়সা ও মোবাইল ফোন লুটের অভিযোগও পাওয়া গেছে। মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে ঢাকা
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে চাঁদপুরের উদ্দেশে ছেড়ে আসে এমভি ক্যাপ্টেন নামের একটি
লঞ্চ। ৩০০ থেকে ৪০০ জন উঠতি বয়সি ছেলেমেয়ে পিকনিক ও ভ্রমণের উদ্দেশ্যে লঞ্চটি ভাড়া
করে। উঠতি বয়সি ছেলে-মেয়েরা লঞ্চের ছাদে গান, বাজনা ও নাচের আয়োজন করে।
একপর্যায়ে লঞ্চটি রাত সাড়ে ৭টার দিকে মুন্সীগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল থামে।
এ সময় লঞ্চে থাকা ৮ থেকে ১০ জন ছেলেমেয়ে নিচে নামলে বিষয়টি লঞ্চঘাটে থাকা স্থানীয়দের
দৃষ্টিগোচর হয়। পরে লঞ্চঘাটে থাকা অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জন লঞ্চে উঠে ছেলে-মেয়েদের
সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে দুই নারীকে মারধর করে এক যুবক।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়,
সাদা রঙের পোশাক পরা আনুমানিক দুই নারীকে লঞ্চের একেবারে সামনের অংশে উঠিয়ে বেল্ট দিয়ে
বেপরোয়াভাবে পেটাচ্ছেন মুন্সীগঞ্জ শহরের নেহাল আহমেদ জিহাদ নামের একজন। এ সময় ৫০-৬০
জন বিভিন্ন বয়সি পুরুষ সেই দৃশ্য তাদের মোবাইল ফোনে ধারণ করে উল্লাস করছেন ও বিভিন্ন
স্লোগান দিচ্ছেন।
এ ঘটনার আরেকটি ভিডিওতে আরও দেখা যায়, থেমে থাকা লঞ্চের দ্বিতীয় তলায়
উঠে গণহারে অপ্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ যাত্রীদের পেটাচ্ছেন ১০ থেকে ১৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ
দল। এ সময় তারা লঞ্চের কেবিনগুলোতে তল্লাশি চালাচ্ছেন এবং দরজা ভাঙার চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভিডিওতে মারধর করতে থাকা নেহাল আহমেদ জিহাদ বলেন,
‘২০০ থেকে ৩০০ লোক তাদের আচরণ ও বেশভূষায় ক্ষিপ্ত হয়ে আক্রমণ করতে চলে আসে। আমি তাদের
নিবৃত্ত করতে ভাই হিসাবে শাসন করেছি। এটা আমার করা উচিত হয়নি। আবার আমি এটা না করলে
মানুষজন নারীদের জামাকাপড় টেনে খুলে ফেলতো। আরও বেশি হেনস্তা করতো। এছাড়া, স্থানীয়দের
কাছ থেকে অন্তত আটটি মোবাইল আমি তাদের উদ্ধার করে দিয়েছি। আমি মারধরের ঘটনায় অনুতপ্ত।’
মারধরের শিকার নারীদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
এদিকে খবর পেয়ে মুক্তারপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ, মুন্সীগঞ্জ থানা
পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি সাইফুল আলম গণমাধ্যমে বলেন, ‘সন্ধ্যার নাস্তা
কেনার জন্য ৮ থেকে ১০ জন যাত্রী লঞ্চ থেকে পল্টুনে নামেন। সেখানে থাকা স্থানীয়রা মাদকসেবী
সন্দেহ করে তাদের পিছু নিয়ে লঞ্চে ওঠার চেষ্টা করলে লঞ্চের ম্যানেজার মো. শফিক তাদের
প্রবেশে বাধা দেয়। এতে উত্তেজিত লোকজন জড়ো হয়ে লঞ্চে ঢুকে ভাঙচুর, লুট ও যাত্রীদের
মারপিট করেন। পরে খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে উত্তেজনা কমে আসে।’
মুক্তারপুর নৌ পুলিশ স্টেশনের ইনচার্জ মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘ঘটনাস্থলে
থানা পুলিশের সঙ্গে আমরাও ছিলাম। মারধরের ঘটনার পর আমরা লঞ্চটিকে অনেকদূর পর্যন্ত পাহারা
দিয়ে এগিয়ে দিয়ে আসি। ভুক্তভোগীরা পরবর্তীতে মারধর ও লুটের ঘটনায় অভিযোগ করবেন বলে
আমাদের জানান। তবে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পায়নি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা
নেওয়া হবে।’