Logo
Logo
×

সারাদেশ

ঈদ আনন্দে মেতেছেন সুনামগঞ্জের কৃষকরা

Icon

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১ মে ২০২৫, ০৯:৫৬ পিএম

ঈদ আনন্দে মেতেছেন সুনামগঞ্জের কৃষকরা

চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সুনামগঞ্জে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। হাওড়ের কৃষকরা ধান কাটা, শুকানো ও মাড়াইয়ের কাজ চালাচ্ছেন পুরোদমে। গোলায় ধান তুলতে শুরু করা কৃষকদের পরিবারে চলছে ঈদ আনন্দ। কৃষকরা নির্বিঘ্নে ধান তুলতে পারায় জেলার সর্বত্র বইছে খুশির আমেজ। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে স্রষ্টার প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন করছেন তারা। 

সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলার ১২টি উপজেলার মোট ১৩৭টি হাওড়ের ২ লাখ ২৩ হাজার ৫০২ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ হয়েছে। সম্ভাব্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮০ মেট্রিক টন ধান; যা থেকে চাল উৎপাদন হবে ৯ লাখ ২১ হাজার ৪১৩ মেট্রিক টন। এর বাজার মূল্য হবে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা।

জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে ধানে রোগ কিংবা পোকার আক্রমণ হয়নি। বৈশাখ মাস শেষ হওয়ার আগেই হাওড়ের শতভাগ ধান কাটা শেষ হবে বলে আশা করছেন তারা। জেলার হাওড়গুলোতে ধান কাটার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় দেড় লাখ কৃষি শ্রমিক ও কৃষক। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শ্রমিকরাও কাজ করছেন সেখানে। এছাড়া জেলার হাওড়গুলোতে ধান কাটছে ১ হাজার ৩৫টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার ও ১২০টি রিপার মেশিন।

জেলার দেখার হাওড়ের কৃষক আব্দুল খালিক যুগান্তরকে বলেন, এ বছর সোনার ফসল উঠেছে, যেটাকে আমরা সোনার বৈশাখী বলি। এবার ধানের যা উৎপাদন তাতে আমরা সত্যি খুব আনন্দিত। পরিবারে সবাই ঈদ আনন্দে মেতেছেন। সব ঠিক থাকলে আগামী ছয় থেকে সাত দিনের মধ্যে সব ধান ঘরে তুলতে পারব।

অরবিন্দ দে নামে হাওড়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা ধান বিক্রি করে পড়ালেখা করি, স্কুলের খরচ দেই, বাজার-হাট করি। এ বৈশাখী ধান দিয়েই আমাদের সংসার চলে। বৈশাখী আমাদের সম্পদ।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষক মোহাম্মদ সমুজ আলী বলেন, আল্লাহর রহমতে ধান খুবই ভালো হয়েছে। অন্য বছর তো পানি, শিলাবৃষ্টিতে ধান নষ্ট হয়ে যেত। এবার কোনো সমস্যা হয়নি। আল্লাহর রহমতে এবার সব ধান ঘরে তুলতে পারব।

হাওড়ের কৃষক আব্দুল হক বলেন, এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি কিয়ারে ১৫ থেকে ১৬ মণ ধান হয়েছে। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে এবার মোটামুটি চলতে পারব। 

ধানের দাম বৃদ্ধির অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, এ বছর ধানের খেতে খরচ বেশি হয়েছে। কিয়ারপ্রতি ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা লেগেছে। সাত হাজার টাকা খরচ করে ১৫ মণ ধান পেয়ে কৃষক লাভবান হয় না, ফলে সরকারের কাছে অনুরোধ অন্তত ধানের মণপ্রতি দাম যেনো ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা করা হয়। তাহলে কৃষক বাঁচবে। 

সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ ওমর ফারুক যুগান্তরকে বলেন, এবার হাওড়ে (নিচু এলাকা) ১ লাখ ৬৫ হাজার হেক্টর এবং নন–হাওড়ে (উঁচু এলাকা) ৫৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে হাওড়ে প্রায় শতভাগ এবং নন হাওড়ে ৭৫ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। আগামী ২৫ মের মধ্যে নন হাওড়েও শতভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়ে যাবে বলে তিনি আশা করেন। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বলেন, চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে ও আল্লাহর রহমত থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। আমরা আশা করছি, সুনামগঞ্জ জেলায় উৎপাদিত ধান দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। কৃষকরা ধান বিক্রি করে সচ্ছল হবেন।

কৃষকরা ধানের সরকারি দাম নিয়ে সন্তুষ্ট রয়েছে দাবি করে এই কর্মকর্তা বলেন, সরকার নির্ধারিত ধানের মূল্য হলো প্রতি মণ ১৪৪০ টাকা। 

কৃষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কৃষকরা যেন সরকারি গুদামে ধান দেয়। সরকার যখন নির্ধারিত মূল্য ঘোষণা করে, তখন স্বাভাবিকভাবে ধানের দাম একটু বেড়ে যায়, এতে কৃষকরা খুব লাভবান হন।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া যুগান্তরকে জানান, সৃষ্টিকর্তা সদয় ও সহায় ছিলেন বলেই এবার সুনামগঞ্জের হাওড়ে কৃষকদের ঘরে ঘরে ফসল তোলার আনন্দ বিরাজ করছে। অনুকূল আবহাওয়ায় এবার আমাদের জেলায় কৃষকরা নির্বিঘ্নে বোরো ফসল তুলতে পেরেছেন। এজন্য জেলা প্রশাসনের নির্দেশে গত শুক্রবার জেলার প্রতিটি মসজিদে সৃষ্টিকর্তার প্রতি শুকরিয়া জানিয়ে প্রার্থনা করা হয়েছে। মন্দিরসহ অপরাপর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতেও বিশেষ প্রার্থনা আয়োজনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

পাশাপাশি আগামী মঙ্গলবার জেলার তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওড়ে প্রশাসনের উদ্যোগে কৃষকদের নিয়ে আনন্দ আয়োজন করা হবে। সেখানে সবাইকে মিষ্টি খাওয়ানো হবে। এবার কৃষকরা নির্বিঘ্নে ফসল গোলায় তুলতে পেরে বেজায় খুশি। কৃষকদের উৎসাহ দিতেই এ আনন্দ ভাগাভাগির আয়োজন করা হয়েছে। 

সুনামগঞ্জ কৃষক আনন্দ ধান

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম