|
ফলো করুন |
|
|---|---|
গ্রীষ্মের দাবদাহে পুড়ছে শহর। তীব্র গরমে স্থবির জনজীবন। তবে এরই মাঝে প্রকৃতিকে অবাক করে দিয়ে গাছের ডালে সবুজ রঙের তেল চকচকে পাতার আড়ালে উঁকি দিচ্ছে সাদা রঙের কদম ফুল। কদমকে বলা হয় বর্ষার ফুল। তবে এবার বর্ষা আসার আগেই ফুটেছে কদম।
কদম শুধু ফুল নয়, সৌন্দর্যের প্রতীকও বটে। গাঢ় সবুজ পাতার মাঝে গোলাকার, নরম হলুদ ও সাদা রঙের ফুলটি দেখতে খুবই আকর্ষণীয়।
রাজশাহীর বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে কদম গাছের দেখা মেলে। এছাড়াও নগরীর ফুলতলা, ভদ্রার মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে এখন দেখা মিলছে কদমের। এই সময়ে গাছগুলোতে থোকায় থোকায় কদম ফুল ফোটার কারণে এক মনোরম দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। ফুলের গন্ধ ও সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসছেন অনেকেই।
তেমনই একজন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারিয়া জামান সুহানা। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে ভদ্রার মোড়ে দারুচিনি রেস্তোরাঁর সামনের বড় কদম গাছটার দিকে সবসময়ই চোখ পড়ে। কত বর্ষা বাদলের দিন পার করেছি সেই রাস্তা দিয়ে, কত কদমফুলই না দেখলাম সেই গাছে। কদম ফুল চোখে পড়লেই রিকশা থামিয়ে গাছ থেকে পেড়ে নিয়ে যেতাম। তবে এইবার এত গরমেও দেখি কুদম ফুটেছে। ফুল দেখলেই মনটা জুড়িয়ে যাই। ’
কদম ফুল শুধু দেখতেই সুন্দর নয়, এর রয়েছে মিষ্টি সুবাস যা চারপাশ মাতিয়ে রাখে। ছোটবেলায় এই ফুল দিয়ে খেলা করেনি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। এছাড়াও, অনেক তরুণ-তরুণীই প্রিয়জনকে উপহার দেন একগুচ্ছ কদম। মেয়েরা তাদের খোঁপায় কদম ফুল গুঁজে করে সাজসজ্জাও। কবি-লেখকেরা তাদের লেখায় কতবারই না কদম ফুলের সৌন্দর্যের কথা বলেছেন।
রাজশাহীর প্রচ্ছদশিল্পী মো. সাদিতউজজামান বলেন, ‘কদম ফুল আমার অনেক পছন্দের। কদম দেখলেই মনে হয় যেন বর্ষা এসে গেছে। কদম ফুল এখন যে দেখা যায়না তা কিন্তু নয়। যারা ভালোবাসে ঠিকই তাদের চোখে পড়ে। তবে আগের মতো এখন অতো বেশি গাছ নাই এটা ঠিক। বিশেষ করে আমাদের ইট পাথরের দালানের ভীড়ে শুধু কদম না, অনেক প্রিয় ফুলের গাছই দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। ’

শৈশবের স্মৃতিচারণ করে তিনি আরও বলেন, মনে পড়ে, ছোটবেলায় আমাদের বাসার সামনেই একটা কদম গাছ ছিলো। খুব সুন্দর। বৃষ্টি হলে কী যে দারুণ লাগতো দেখতে। ফুল যখন ঝরে যেত তখন আবার তীব্র ঘ্রাণটা অতো ভালো লাগতো না। ইদানীং কদম নিয়ে কাজ করা হয়। আমার আঁকার ক্যানভাসে কদম আসে বার বার। কখনো প্রচ্ছদে, কখনো টি ব্যাগে। ঠিক যেমন বর্ষা আসে আমাদের জীবনে বছর ঘুরে। আকাশে যখন মেঘ করে, একটা কদম হাতে গাইতে ইচ্ছা করে.. "বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল..”
শীতে কদমের পাতা ঝরে এবং বসন্তে কচি পাতা গজায়। কদমের একটি পূর্ণ মঞ্জরিকে সাধারণত একটি ফুল বলেই মনে হয়। কদম ফুল দেখতে বলের মতো গোল, মাংসল পুষ্পাধারে অজস্র সরু সরু ফুলের বিকীর্ণ বিন্যাস। ফল মাংসল ও টক, যা বাদুড় ও কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাদ্য। তারাই বীজ ছড়ানোর বাহন। কদমের কাঠ দিয়ে আসবাবপত্র তৈরি হয় এবং তা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কদম গাছের ছাল জ্বরের ঔষধ হিসেবেও উপকারী। কদম পাতার রস কৃমি দূর করতে সাহায্য করে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুচক্রে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এর ফলে অনেক গাছের ফুল ফোটার সময় এগিয়ে আসছে বা পিছিয়ে যাচ্ছে। গরমের শুরুতে বা হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ার কারণে কদম গাছে ফুল আগে আসছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
