গুজরাটের বস্তি থেকে এনে যেভাবে ৭৮ জনকে সুন্দরবনে ছেড়ে দিল বিএসএফ
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ মে ২০২৫, ১০:০১ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও ভারতীয় নৌবাহিনী বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী মান্দারবাড়িয়া এলাকায় একটি চরের মধ্যে ৭৮ জনকে ফেলে যায়। তাদের সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করেছে কোস্টগার্ড।
রোববার রাত ১১টার দিকে তাদের শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়। এদের মধ্যে ৭৫ জন বাংলাদেশি নাগরিককে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিনজন ভারতীয়কে শ্যামনগর থানায় রাখা হয়েছে।
রাতেই তাদের প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসা ও খাবারের ব্যবস্থা করে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। তাদের অধিকাংশের বাড়ি নড়াইল, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন এলাকায়। সোমবার সকালে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন কালীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিথুন সরকার।
এ সময় পুশইন করা একাধিক ব্যক্তি জানান, তারা সবাই ভারতের গুজরাটের সুরাট বস্তিতে থাকতেন এবং ছোটখাটো কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। গত ২৬ এপ্রিল তাদের বস্তি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। ওই দিন রাতেই তাদের আটক করা হয়। সেখান থেকে তাদের হাত ও চোখ বেঁধে নেওয়া হয় পুলিশ ক্যাম্পে। সেখানে চার দিন রাখার পর বিমানে করে আনা হয় কলকাতায়। কলকাতা থেকে তাদের জাহাজে করে এনে গত ৯ মে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী মান্দারবাড়িয়া এলাকায় নিয়ে চোখ বেঁধে একটি চরে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে তারা হেঁটে বনবিভাগের মান্দারবাড়িয়া ফরেস্ট ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। রোববার কোস্টগার্ড তাদের মোংলায় নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা ও তাদের নাম-পরিচয় শনাক্তকরণের কাজ শেষে রাতে শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করে। তারা বাংলাদেশি হলেও দীর্ঘদিন ধরে তারা গুজরাটে বসবাস করতেন।
তারা আরও জানান, ২৬ এপ্রিল থেকে ৬ মে পর্যন্ত তাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে। তাদের ঠিকমতো খেতে দেওয়া হতো না। মাঝেমধ্যে মারধর করা হতো। এছাড়া তারা সবসময় আমাদের গালিগালাজ করত।
এদিকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিনজন জানান, তাদের বাবা-মা গুজরাটে থাকাকালে সেখানেই তাদের জন্ম হয়। তাই জন্মসূত্রে তারা ভারতীয় নাগরিক। তাদের সব ধরনের কাগজপত্র ছিল। ২০২৪ সালে তাদের সব কাগজপত্র ভারত সরকার কর্তৃক নিয়ে নেওয়া হয়।
মান্দারবাড়িয়া টহল ফাঁড়ির ওসি মোবারক হোসেন জানান, তার ফাঁড়িতে তিন দফায় মোট ৭৮ জন মানুষ আশ্রয় নেন। শুরুতে ৩২ জন এলেও পরবর্তীতে আরও দুই দফায় ৪৬ জন মানুষ হেঁটে তার ফাঁড়িতে এসে পৌঁছান।
বনবিভাগের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মশিউর রহমান জানান, প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে- ৭৮ জন বাংলাভাষীকে ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করা হয়। এসব বাংলাভাষী নাগরিকদের ভারতীয় একটি জাহাজ ও স্পিডবোটযোগে গত ৯ মে বঙ্গোপসাগরের এলাকার একটি চরে ফেলে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে তারা হেঁটে নিকটস্থ মান্দারবাড়িয়া টহলফাঁড়িতে আশ্রয় নেয়। পরে শনিবার রাতে তাদের কোস্টগার্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. রনী খাতুন জানান, এভাবে আকস্মিকভাবে ৭৮ জনকে বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী নির্জন এলাকায় চরে ফেলে যাওয়ার ঘটনা সবাইকে বিস্মিত করেছে। পরবর্তীতে বনবিভাগ ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সহায়তায় এসব মানুষকে মান্দারবাড়িয়া টহলফাঁড়িতে আশ্রয় দেওয়া হয়। এ সময় তাদের নাম-পরিচয় ঠিকানা শনাক্তের পাশাপাশি তাদের সুস্থ রাখার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনা খাবার, চাল, ডাল ও পানিসহ প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী পাঠানো হয়েছে।
