Logo
Logo
×

সারাদেশ

ভোল পালটে ওজোপাডিকো চালাচ্ছে আওয়ামী সিন্ডিকেট

Icon

আহমদ মুসা রঞ্জু, খুলনা

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৫, ১২:০৬ পিএম

ভোল পালটে ওজোপাডিকো চালাচ্ছে আওয়ামী সিন্ডিকেট

ফাইল ছবি

ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) চলছে আওয়ামী সিন্ডিকেটে। আওয়ামী লীগের সুবিধাবাদীরা এখনো বড় পদগুলোতে থেকেই ছড়ি ঘোরাচ্ছে। প্রকল্প গ্রহণে ইচ্ছামতো সংযোজন-বিয়োজনসহ পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ দেওয়ায় তৎপর চক্রটি। একই ভবনে অন্তত এক যুগের বেশি সময় ধরে কাজ করছে তারা। চক্রটির শেকড় এতটাই গভীরে যে, তাদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না।

ওজোপাডিকো কর্মকর্তাদের একটি সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রতিষ্ঠানটি নিয়ন্ত্রণ করত বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের কয়েকজন নেতা। কর্মকর্তাদের পদোন্নতি, বদলি, টেন্ডার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণসহ অধিকাংশ কাজ বাস্তবায়ন হতো তাদের ইশারায়। 

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও সংগঠনটির অনুসারীরা এখনো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দখল করে রয়েছে। সংস্কার হয়নি এই দপ্তরের কোনো ক্ষেত্রে। দপ্তরে বসেই তারা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের টেন্ডার দেওয়াসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে একদিকে সাধারণ ঠিকাদাররা যেমন বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনি ওজোপাডিকোতে আওয়ামী বলয় আরও প্রভাব বিস্তার করছে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে উঠেপড়ে লেগেছে চক্রটি। যা নিয়ে ওজোপাডিকোর কর্মকর্তাসহ বোর্ড মেম্বাররাও বিব্রত। ৫ আগস্টের পরও হাসিনা সরকারের সাবেক এমপি শামীমের এসকিউ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান টিএস ট্রান্সফরমার লিমিটেড, গোপালগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর ও শেখ পরিবারের ঘনিষ্ঠ আবেদুল ইসলাম পলাশের প্রতিষ্ঠান পলাশ এন্টারপ্রাইজ, শেখবাড়ির ঘনিষ্ঠ রকিবুল ইসলামের প্রতিষ্ঠান তিতাস ব্রাদার্স ও রকি এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেয়।

সূত্রটি জানিয়েছে, এসব কাজ প্রদানের ক্ষেত্রে দরপত্রে এমন কিছু শর্ত নির্ধারণ করা হয়েছে যাতে শুধু ওই প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়া আর কেউ কাজ না পায়। ওজোপাডিকোর সব কেনাকাটার দরপত্র প্রস্তুত, অনুমোদন ও মূল্যায়নে এখনো বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতারাই ভূমিকা রাখছে।

আওয়ামী সুপারিশে দীর্ঘদিন ধরে একই পদে বহাল : ওজোপাডিকোর প্রধান ভবনে বছরের পর বছর ধরে কাজ করছেন এমন ৭ কর্মকর্তার নাম উঠে এসেছে। দপ্তর পরিবর্তন হলেও ওই কর্মকর্তারা প্রধান কার্যালয়ের একই ভবনে কাজ করছে। তাদের বিরুদ্ধে টেন্ডার সিন্ডিকেটে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ ওজোপাডিকো শাখার সাধারণ সম্পাদক রকিব উদ্দিন। দীর্ঘদিন ধরেই একই জায়গায় চাকরি করছেন। তিনি স্মার্ট প্রি পেমেন্ট মিটারিং প্রকল্পের পরিচালক। তিনি সাবেক আইসিটি মন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের আত্মীয়। এছাড়া বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সদর দপ্তরে কর্মরত রয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুল হক হানিফের আত্মীয় মো. আলিউল আজম। তিনি ওজোপাডিকোর স্মার্ট প্রি পেমেন্ট মিটারিং প্রজেক্টের উপপ্রকল্প পরিচালক। টেন্ডার সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য হিসাবে তিনি ওজোপাডিকোতে পরিচিত। বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ ওজোপাডিকো শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক শহীদুল আলম এখানকার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখা)। অন্তত ৭ বছর ধরে একই ভবনে কর্মরত রয়েছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের আরেক নেতা ও নির্বাহী প্রকৌশলী (নকশা ও পরিদর্শন) কল্যাণ কুমার দেবনাথ একই ভবনে চাকরি করছেন বছরের পর বছর। শেখ পরিবারের ঘনিষ্ঠজন হিসাবে রয়েছেন উপপ্রকল্প পরিচালক মো. মেহেদী হাসান ও নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল ইসলাম। দীর্ঘদিন ধরে একই জায়গায় কর্মরত রয়েছেন সিস্টেম প্রটেকশন ও কন্ট্রোল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দেবাশীষ পাল।

দীর্ঘদিন একই দপ্তরে কাজের বিষয়ে ওজোপাডিকোর এমডি মোহাম্মদ হায়দার আলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বলেন, আমি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে এমডির পদে রয়েছি। কারও বদলির বিষয়গুলো পরিচালনা পর্ষদ বিবেচনা করে। আগামী বোর্ড মিটিংয়ে আমি বিষয়গুলো উত্থাপন করব।

এসব বিষয় নিয়ে ওজোপাডিকোর চেয়ারম্যান নূর আহমদ বলেন, কে কোন পদে কত বছর রয়েছে এটা চেয়ারম্যানের জানার বিষয় নয়। আমি জানিও না। বদলি বা পদায়ন করে থাকেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আমি খোঁজ নেব এমন কর্মকর্তা-কর্মচারী কতজন রয়েছে। টেন্ডার সিন্ডিকেটের বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, সিন্ডিকেট হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। যদি হয়ে থাকে তবে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ওজোপাডিকো আওয়ামী লীগ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম