Logo
Logo
×

সারাদেশ

দুর্নীতিতে মানিকজোড় খাদ্য বিভাগের দুই কর্মকর্তা, হাতিয়ে নিতেন লাখ লাখ টাকা

Icon

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৫, ০৪:৪০ পিএম

দুর্নীতিতে মানিকজোড় খাদ্য বিভাগের দুই কর্মকর্তা, হাতিয়ে নিতেন লাখ লাখ টাকা

অভিযুক্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ খাদ্য বিভাগের দুই কর্মকর্তা জান মোহাম্মদক ও সাকিলা নাসরিন। ছবি: সংগৃহীত

চাঁপাইনবাবগঞ্জ খাদ্য বিভাগে দুর্নীতির শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন সদ্য বদলি করা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জান মোহাম্মদ এবং খাদ্য পরিদর্শক সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাকিলা নাসরিন। বেপরোয়া এ দুই কর্মকর্তা ইতোমধ্যে অনিয়ম আর দুর্নীতির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। দুর্নীতির কারণে ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জান মোহাম্মদকে বদলি করা হয়েছে। আর সাকিলা নাসিরনের কাছে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিস্তর অভিযোগ ওঠার পরে ১ মে খাদ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জান মোহাম্মদকে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলায় বদলি করেন। 

একই আদেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আতাউর রহমানকে সদরে বদলি করা হয়। কিন্তু আতাউরের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরে গড়িমসি শুরু করেন জান মোহাম্মদ। ৭ মে বিকালে অফিসে গিয়ে দায়িত্ব বুঝে নেন আতাউর। তিনিই এখন দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু এখনো পিরোজপুর যাননি জান মোহাম্মদ। সোমবার সকালেও তিনি সদর কার্যালয়ের সামনে বসে ছিলেন।

জান মোহাম্মদ সদরের অধীনস্থ আমনুরা খাদ্যগুদামের পেয়িং অফিসার ছিলেন। ৭ মে আতাউর দায়িত্ব গ্রহণের পরের দিন তাকে পেয়িং অফিসার করা হয়। কিন্তু ৯ মে পেয়িং অফিসার হিসাবে গুদামে গিয়ে নথিপত্র নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন জান মোহাম্মদ। এতে গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেশমা ইয়াসমিন তাকে বাধা দেন। তখন ওই নারী কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করেন জান মোহাম্মদ। সেদিনই লিখিতভাবে বিষয়টি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহন আহমেদকে জানান তিনি। এ ঘটনায় কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাকিলা নাসরিনকে নিয়ে দুর্নীতির জুটি গড়ে তোলেন জান মোহাম্মদ। দুজনে মিলে অবৈধভাবে কামাই করেছেন লাখ লাখ টাকা। খাদ্য বিভাগ এ দুর্নীতির জুটি ভাঙতেই জান মোহাম্মদকে দূরে বদলি করা হয়।

সম্প্রতি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহন আহমেদ জেলা শহরের বিভিন্ন ওএমএসের ডিলারদের দোকান পরিদর্শন করেন। তখন তিনি দেখতে পান, গুদাম থেকে সরবরাহ করা চালের বস্তায় ‘বিতরণকৃত’ লেখা স্টেনসিল মার্ক দেওয়া হয়নি। স্টেনসিল না দেওয়া হলেও গত মাসে ৮৫ হাজার টাকা বিল তুলে নেওয়া হয়। এ নিয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাকিলা নাসরিনের কাছে ব্যাখ্যা চান। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্টেনসিল না দিলেও প্রতিমাসেই ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা শ্রমিক বিল প্রস্তুত করেন সাকিলা। আর পেয়িং কর্মকর্তা হিসাবে এ বিল অনুমোদন করতেন জান মোহাম্মদ। পরে বিলের টাকা ভাগবাঁটোয়ারা করে নিতেন দুজনে। সদর গুদামে প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন ধান-চাল কেনা হয়। 

বেশ কয়েকজন মিলার জানিয়েছেন, জান মোহাম্মদের কথা বলে টনপ্রতি ২০০ টাকা আদায় করেন সাকিলা নাসরিন। একইভাবে বস্তা সরবরাহকারী ঠিকাদারদের কাছ থেকেও টাকা আদায় করেন তিনি।

সূত্র আরও জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর গুদাম থেকে প্রতিমাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল পরিমাণ রেশনের চাল বরাদ্দ থাকে। এ চাল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী না নিয়ে গিয়ে গুদামেই বিক্রি করে দেয়। কম দামে এ চাল কিনে নেন জান মোহাম্মদ ও সাকিলা। পরের মৌসুমে সরকার যখন বেশি দরে চাল সংগ্রহ করে, তখন এই চালকে আবার সংগ্রহ দেখানো হয়। এ ‘ব্যবসা’ করেও বিপুল টাকা ‘লাভ’ করেন জান মোহাম্মদ ও সাকিলা নাসরিন। 

অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে সোমবার সাকিলা নাসরিনকে কল করা হয়। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে আর কল ধরেননি। 

নানা অভিযোগের বিষয়ে জান মোহাম্মদ বলেন, ‘আমার চাকরির বয়স ৩৬ বছর। অভিযোগ উঠতেই পারে। যে কেউ মিথ্যা অভিযোগ দিতে পারেন। বাস্তবে সত্যতা কতটুকু, সেটাই বিষয়। এখন রেশমা ইয়াসমিন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। আমিও সঠিক তদন্ত চাই।’

জেলার ভারপ্রাপ্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহন আহমেদ বলেন, ‘রেশমার লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তারপর কমিটি করে তদন্ত করেছি। রিপোর্টও পেয়েছি। এতে ঘটনার সত্যতা উঠে এসেছে। আমি এটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠাব। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে।’ 

সাকিলার সঙ্গে জান মোহাম্মদের দুর্নীতির সিন্ডিকেটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আগের বিষয়গুলো আমি জানি না। তবে সম্প্রতি আমি শ্রমিক বিল তুলে নিলেও স্টেনসিল না দেওয়ার একটা অনিয়ম পেয়েছি। এ পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা তলব করেছি। জবাব দেখার পর ব্যবস্থা নেব।’

রাজশাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জ খাদ্য বিভাগ দুর্নীতি

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম