ভারত থেকে দেশে ফিরে যে ভয়াবহ বর্ণনা দিলেন এক নারী
মহিউদ্দিন মিশু, আখাউড়া
প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৫, ১১:০০ এএম
ভারতে কারাভোগ শেষে দেশে ফিরে মেয়েকে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন নিপা। ছবি: যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কুমিল্লা দেবিদ্বার উপজোলার বাসিন্দা ফারজানা আহমেদ নিপা। ১৮ বছর বয়সি এ নারী কাজ করতেন বিউটি পার্লারে। এ কাজে বেশ দক্ষ তিনি। চার বছর বয়সি মেয়েকে নিয়ে ভালোই চলছিল তার স্বামী সংসার। ৯ মাস আগে সমিতি থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি নিয়ে স্বামীর সঙ্গে হয় ঝগড়া এ নারীর। পরে রাগের মাথায় পাড়ি জমান ভারতে। সীমান্ত পার হতেই ধরা পড়েন দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। প্রায় ৯ মাস ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে কারাভোগ শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে আখাউড়া-আগরতলা আন্তজার্তিক চেকপোস্ট সীমান্তপথে ফিরে আসেন দেশে।
ত্রিপুরাস্থ বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের উদ্যোগে দুদেশের পররাষ্ট্র ও
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নিপাকে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পরিবার ও তার রেখে যাওয়া ছোট্ট শিশু ইকরা বিনতে আরিশাকে কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন
এ মা।
বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে ত্রিপুরাস্থ বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের
দূতলা প্রধান মো. আলমাস হোসেন ও কমিশনের কর্মকর্তা ওমর শরীফ ওই তরুণীসহ বাংলাদেশি ১১
নাগরিককে স্বজনদের হাতে তুলে দেয়।
আখাউড়া সীমান্তের নো-ম্যান্সল্যান্ডে (শূন্য রেখা) নিপার সঙ্গে কথা হয়
এ প্রতিবেদকের তিনি জানান, ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা নিয়ে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া হয়। স্বামীর
সঙ্গে রাগারাগির পর ভারতের কলকাতার অবস্থান করা বান্ধবীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি।
ভারতের পার্লারগুলোতে বেশি বেতনে চাকরি পাওয়া যাবে, এমন কথা বলে তারা। সিদ্ধান্ত হয়
কুমিল্লা দিয়ে অবৈধ সীমান্তপথে ভারত গমনের। দালালের মাধ্যমে ত্রিপুরার গোমতী জেলার
সীমান্তে পৌঁছাতেই ধরা পড়েন রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। পরদিন তাকে পাঠানো হয়
গোমতী জেলা কারাগারে।
নিপা বলেন, ‘গোমতীর কারাগারে অন্তত ১০ বাংলাদেশি নারী কারাভোগ করছেন।
বিভিন্ন প্রলোভনে পড়ে পাচারচক্রের থাবায় বাংলাদেশি অনেক তরুণী ত্রিপুরা রাজ্য ছাড়াও
মহারাষ্ট্র ও কলকাতা যায়। এমনকি কাজের কথা বলে অনেককে যৌনপল্লীতে বিক্রি করে দেয় পাচারকারীরা।’
গোমতী কারাগারে নিপার সঙ্গে পরিচয় হয় এক বাংলাদেশি কিশোরীর। কুমিল্লা
হয়ে দালালের মাধ্যমে ভারতে পাড়ি জমান তিনি। এ কিশোরীর বিষয়ে নিপা বলেন, ‘ভারত গিয়ে
তার ঠাঁই হয়েছিল আসাম রাজ্যের শীলচরের যৌনপল্লীতে। সেখানকার একটি কক্ষে তাকে আটকে রাখা
হতো। পালিয়ে দেশে ফেরার পথে বিএসএফের কাছে আটকা পড়ে সে। এখন কারাগারে রয়েছেন।’
নিপা বলেন, ‘কল্পনাও করতে পারেনি কেউ আমাকে এ নরক থেকে উদ্ধার করবে।
বাড়ি ফিরব ও স্বামী-মেয়ের মুখ দেখব এমনটাও ভাবতে পারিনি।’
ত্রিপুরাস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তা ওমর শরীফ বলেন, ‘ত্রিপুরার
কারাগার ও রাজ্য সরকারের আশ্রয়কেন্দ্রে আটকে থাকা বাংলাদেশিরা যেন দ্রুত ফিরতে পারে
সে চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি।’
