ছবি: যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
‘তিন আসামিকে খালাস দেওয়ায় খুবই কষ্ট পেয়েছি। তারা ঘটনা ধামাচাপা না দিয়ে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে আমার মেয়েটি হয়তো বেঁচে থাকতো। আমি তাদের শাস্তি দেখতে চেয়েছিলাম’, কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন ধর্ষণ ও হত্যার শিকার সেই শিশুর মা আয়েশা আক্তার।
শনিবার মাগুরার চাঞ্চল্যকর শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় দিয়েছেন
আদালত। এ মামলায় প্রধান আসামি হিটু শেখের মৃত্যুদণ্ড ও বাকি তিনজনকে খালাস দিয়েছেন
বিচারক।
খালাসপ্রাপ্তরা হলেন, হিটু শেখের স্ত্রী জাহেদা বেগম এবং দুই ছেলে সজীব
শেখ ও রাতুল শেখ।
মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান
এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের পর অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন মামলাটির বাদী শিশুর মা
আয়েশা আক্তার।
মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর ২১ দিনের মাথায় এবং মোট ১৪ কর্ম দিবসে মামলাটির
বিচার কার্য সম্পন্ন করতে পারায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন সরকার পক্ষের আইনজীবী মাগুরার
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি মনিরুল ইসলাম মুকুল।
মামলার রায়কে ঘিরে শনিবার সকালে আদালত চত্বর এবং আশপাশ এলাকায় অতিরিক্ত
পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আদালত চত্বরে উৎসুক জনতার ভিড় জমে। ভিড় করে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে
কর্মরত সাংবাদিকরাও।
সকাল ৯টায় আসামিদেরকে ঝিনাইদহ কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে করে আদালতে
আনা হয়। বিগত দিনগুলোতে বিচার চলাকালে আদালতে আনা নেওয়ার পথে আসামিরা সাংবাদিকদের দেখে
চিৎকার করে নিজেদের নির্দোষ দাবি করলেও এদিন ছিলেন একেবারেই নিশ্চুপ।
সকাল সাড়ে ৯টায় বিচারক এম জাহিদ হাসান সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যেই আলোচিত
মামলাটির রায় ঘোষণা করেন। এ সময় আসামিদের একেবারেই নির্বাক থাকতে দেখা যায়। রায় ঘোষণার
পর আদালত থেকে বেরিয়ে আসার সময়ও তারা ছিলেন শান্ত। হেলমেটের মধ্য দিয়েও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত
আসামি হিটু শেখকে কাঁদতে দেখা যায়। তবে মুখে ছিল না কোনো প্রকার শব্দ।
রায় ঘোষণার পর আদালতের স্পেশাল পিপি মনিরুল ইসলাম মুকুল বলেন, ‘মামলার এক নম্বর
আসামি হিটু শেখকে ২০০০ সনের নারী ও নির্যাতন দমন আইন (সংশোধিত ২০০৩) এর ৯ (২) ধারায়
অভিযুক্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযুক্ত
বাকি তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
তবে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর খালাসপ্রাপ্ত আসামিদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
আসামি পক্ষের আইনজীবী সোহেল আহমেদ বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত
আসামি চাইলে রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবে।’
গত ১৩ মার্চ ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা
যায় সেই শিশু। এর আগে মাগুরা শহরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গিয়ে ৬ মার্চ
ধর্ষণের শিকার হয় শিশুটি। ঘটনার পর প্রথমে তাকে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতাল এবং পরে
ফরিদপুর ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি ঘটায় নেওয়া হয়
ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে।
ধর্ষণের ঘটনায় শিশুটির মা আয়েশা আক্তার ৮ মার্চ শিশুটির বোনের শ্বশুর
হিটু শেখ, শাশুড়ি জাহেদা বেগম, বোন জামাই সজিব শেখ এবং সজিবের বড় ভাই রাতুল শেখকে আসামি
করে মাগুরা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় অভিযুক্ত ৪ আসামিই পুলিশ হেফাজতে
রয়েছেন। তাদের উপস্থিতিতেই চলছে বিচারিক কার্যক্রম।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন
গত ১৩ এপ্রিল আদালতে চার্জশিট জমা দিলে ২০ এপ্রিল মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন
ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান মামলাটি আমলে নিয়ে চার্জগঠনের জন্য ২৩ এপ্রিল
তারিখ নির্ধারণ করেন। চার্জ গঠনের পর ২৭ এপ্রিল থেকে শুরু হয় মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ;
শেষ হলো ৭ মে ঢাকা মেডিকেলের দুই ডাক্তারের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে।
