সাপে কাটা রোগীকে বাঁচাতে না পেরে চিকিৎসকের আক্ষেপ
কুমিল্লা উত্তর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৫, ১১:০১ এএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সম্প্রতি ছুটিতে দেশে আসেন প্রবাসী নাছির উদ্দীন। শনিবার দুপুরে নিজ বাড়িতে সাপের দংশনের শিকার হন তিনি। বিষয়টি বুঝতে পেরে স্থানীয় ওঝাদের কাছে নেওয়া হয় তাকে। স্ত্রী বারবার হাসপাতালে নেওয়ার কথা বললেও তার কথা শোনেনি পরিবারের সদস্যরা। এর মধ্যে অবস্থা খারাপ হতে থাকে নাছিরের। পরে বাধ্য হয়ে জাতীয় জরুরি পরিষেবা ৯৯৯-এ ফোন দেন ওই স্ত্রী। পুলিশের সহায়তায় স্বামীকে নিয়ে যান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তবে, সময় বেশি হয়ে যাওয়ায় বাঁচানো যায়নি ওই প্রবাসীকে।
শনিবার কুমিল্লার তিতাস উপজেলার সাগরফেনা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
প্রবাসীর মৃত্যুর ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসক
মোস্তফা জামান আশিক নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্ট দেন। ওই পোস্টে সাপে কাটা
রোগী নিয়ে বিভিন্ন কথা বলেন তিনি। পাশাপাশি প্রবাসীকে না বাঁচাতে পেরে আক্ষেপ প্রকাশ
করেছেন এ চিকিৎসক।
ফেসবুক পোস্টে চিকিৎসক আশিক লেখেন, ‘তিতাস উপজেলা
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক নির্মম ঘটনার সাক্ষী হলাম আজ। ৭টা ১০ মিনিটে একজন সাপে কাটা
রোগী আমাদের কাছে আসে। একদম বিষধর সাপে কাটার যে কার্ডিনাল সাইন পাওয়া যায় সেরকম। ব্রোকেন
নেক সাইন, ড্রুপিং অব আইলিডস, ড্রুলিং অব স্যালাইভা ইত্যাদি। নিউরোটক্সিনের ফিচার।
‘রোগী দেখেই আমি
এন্টিভেনম প্রিপারেশনের জন্য আমার টিম নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। এন্টিভেনম প্রিপেয়ার করতে
করতে হিস্ট্রি নিচ্ছিলাম রোগীর ওয়াইফের (স্ত্রী) কাছ থেকে। জানতে চাওয়া হয়, সাপে কাটল
কয়টায়? উত্তরে বলে দুপুর ২টায়। আপনারা আগে নিয়ে আসেননি কেন? উনার ফ্যামিলির (পরিবার)
মুরুব্বিরা উনাকে ওঝার কাছে নিয়ে গিয়েছিল। রোগীর অবস্থা যখন থেকে খারাপ হয় তখন নিয়ে
আসতেন? উনার ফ্যামিলির লোক উনাকে আনতেই দিবে না। ওঝার ওখানে উনি বারবার বমি করতেছিল,
ঘাড় তুলতে পারছিল না। আমি বারবার বলেছি হাসপাতালে নিয়ে আসতে। কিন্তু মুরুব্বিরা আনতে
দেয় না। বলে আমি আর কি বুঝি। তারপর কি করলেন?
একদম শেষে উনার অবস্থা যখন অনেক খারাপ তখন ৯৯৯-এ কল করে পুলিশ সাপোর্ট
নিয়ে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। রোগীর ম্যানেজমেন্ট আগেই করেছি। এন্টিভেনম রেডি
করে ইনফিউশন স্টার্ট করার আগেই দেখি রোগী ডিপ কোমাটোজ।
ইসিজি মেশিন লাগিয়ে আমি শেষ চেষ্টার জন্য এন্টিভেনম স্টার্ট করি। কিন্তু
ততক্ষণে রোগী মারা গিয়েছে। ইসিজি ফ্ল্যাট লাইন। ডেডবডির স্ত্রীর কান্নায় হাসপাতালের
বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল। কিছু মানুষের গোঁয়ার্তুমি, অন্ধ বিশ্বাস আর কুসংস্কারের কারণে
একটা তাজা প্রাণ চলে গেল আজকে।
সাপে কাটা রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসার জন্য আমরা জোর প্রচারণা চালাচ্ছি।
সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্যেকটা উপজেলা হাসপাতালে এন্টিভেনমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এগুলো
আপনারা জানেনও। কিন্তু তাও মানুষের কথায় প্ররোচিত হয়ে আপনারা যান ওঝার কাছে। এটা মৃত্যু
নয়, এটা হত্যা।’
