ফেনীর খামারে গরু, ছবি- যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
গত বছরের আগস্টে ভয়াবহ বন্যার ক্ষতি ও গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির পরও ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে কুরবানির পশু পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ফেনীর খামারি ও ব্যবসায়ীরা।
খামারি ও ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, একদিকে গত বছরের বন্যার ক্ষতি ও গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি, অন্যদিকে ভারত থেকে চোরাইপথে গরু আসার কারণে বাজারে দামের প্রভাব পড়ছে। ফলে লোকসানের শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন খামারিরা।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে- জেলায় উৎপাদিত পশু দিয়ে কুরবানির চাহিদা পূরণ হবে। আর অবৈধভাবে ভারতীয় গরু প্রবেশ বন্ধে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিবি।
ফেনী ৪ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে ফেনীর বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় অবৈধপথে ভারত থেকে আসা ১২৩টি গরু আটক করা হয়েছে; যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৬৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। অবৈধভাবে সীমান্ত দিয়ে যেন কোনো গরু না আসে সেজন্য সীমান্তে বিজিবি সচেষ্ট রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী অবৈধভাবে ভারতীয় গরু প্রবেশ বন্ধে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছরের মতো এবারো স্থানীয় চাহিদার তুলনায় পশু বেশি রয়েছে। এবার জেলায় কুরবানি পশুর চাহিদা রয়েছে ৮২ হাজার ৩৩৬টি। তার মধ্যে বাণিজ্যিক ও পারিবারিকভাবে পালন করা হচ্ছে ৮৭ হাজার ২২৭টি গবাদি পশু। ৬৯ হাজার ৩৬০টি গরু, ১ হাজার ৬৬৭টি মহিষ এবং ১৩ হাজার ২৪৩টি ছাগল ও ৩ হাজার ১৪৭টি ভেড়া প্রস্তুত রয়েছে।
এর আগে গত বছর জেলায় কুরবানি পশুর চাহিদা ছিল ৮৭ হাজার ২০০টি। তার মধ্যে বাণিজ্যিক ও পারিবারিকভাবে পালন করা হয় ৯০ হাজার ২৫০টি গবাদি পশু।
সরেজমিন দেখা যায়, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে পশু পরিচর্যায় ব্যস্ত ফেনীর ফুলগাজির বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের উত্তর খাজুরিয়া গ্রামের মো. ইব্রাহীম। ২০২১ সালে ৭টি গরু দিয়ে শুরু করেন মদিনা এগ্রো ফার্ম নামে একটি খামার। বর্তমানে তার খামারে শাহীওয়াল, ফ্রিজিয়ান, নওরেজিয়ান রেড, নেপালি ষাঁড়, সাদা বোল্ডার, দেশি বলদসহ বিভিন্ন প্রজাতির ১৮০টি গরু কুরবানি জন্য প্রস্তুত রয়েছে। খামারের মাধ্যমে ২০ জন লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে বলে জানান তিনি।
শুধু মদিনা এগ্রো নয়, জেলায় ৫ হাজারের অধিক বাণিজ্যিক খামারে গরু রয়েছে। পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে অনেকে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া কুরবানির জন্য লালন-পালন করছেন। তারা দেশীয় খাবার বিচালি, চালের কুড়া, খৈল, ভূষি, কাঁচা ঘাস, আলু, মিষ্টি কুমড়া খাইয়ে মোটাতাজাকরণ করছেন। এসব খামারে পালিত বড় বড় গরু হাটে তোলার অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
মদিনা এগ্রো ফার্মের ম্যানেজার মাহমুদুল হাসান সাব্বির বলেন, খামারে এসে ক্রেতারা গরু কেনা শুরু করেছেন। অনেকে আগে এসেই পশু কিনে রাখছেন; যা কুরবানির আগের দিন পর্যন্ত খামারে রাখতে পারবেন। এছাড়া ক্রেতা চাইলে খামারে এসে লাইভ ওয়েট পদ্ধতিতে গরুর দৈহিক ওজন মেপেও গরু কিনতে পারছেন।
ফেনী পৌরসভার ফলেশ্বর এলাকায় রাইদ এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী সৌদি ফেরত নুর উদ্দিন আহম্মেদ রুবেল বলেন, বাজারে গো-খাদ্যের দাম বেশি তাই আমরা বিদেশি জাতের কাঁচা ঘাস, শুকনো খড়, ভুষি, আলু, মিষ্টি কুমড়া খাইয়ে গরু লালন-পালন করি; যা দানাদার খাদ্যের চেয়ে দাম কম পড়ে।
দেশি প্রজাতির গরু-ছাগলের চাহিদা বেশি থাকায় পছন্দের পশু কিনতে ক্রেতারা ছুটছেন বিভিন্ন খামারে। ক্রেতাদের মতে, হাটের ভিড় এড়িয়ে সুস্থ-সবল পশু দেখেশুনে কেনার বিকল্প হচ্ছে খামার।
খামারে গরু কিনতে নোয়াখালী কানিকির হাট থেকে আসা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, খামার থেকে গরু কিনলে দেখেশুনে কেনা যায়; কিন্তু বাজারে গেলে অনেক সময় ভিড় থাকে। মানুষের কারণে ঠিকমতো গরু দেখা যায় না। সেজন্য খামার থেকে গরু কেনার গুরুত্বটা বেশি। যেহেতু খামারে একসঙ্গে সব গরু কম সময়ে দেখা যায়। পাশাপাশি পছন্দ হলে লাইভওয়েটের মাধ্যমে কেনা যায়। এজন্য খামার থেকে গরু নেওয়ার আগ্রহটা বেশি।
কাওছার নেওয়াজ নামে এক ক্রেতা বলেন, গত বছরের চেয়ে চলতি বছর প্রতি গরুতে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা বেশি চাচ্ছে। তারপরেও কুরবানি উপলক্ষে গরু কিনতে হবে। বাজারে গেলে ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় থাকে; যার কারণে সব গরু দেখা যায় না। খামারে এলে খামারের সব গরু দেখা যায়। পাশাপাশি একটা গরু পছন্দ হলে বুকিং দিয়ে রেখে যাওয়া যায়। পরবর্তীতে ঈদের আগের দিন এসে পুরো টাকা দিয়ে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া যায়। এসব সুবিধার জন্য আমরা খামারের গরু নিতে এসেছি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোজাম্মেল হক যুগান্তরকে বলেন, ফেনীতে এবার কুরবানির পশু সংকটের শঙ্কা নেই। জেলায় অন্তত ৫ হাজার তালিকাভুক্ত খামারির বাইরেও ব্যক্তিগতভাবে অনেকে এক বা একাধিক কুরবানির পশু লালন-পালন করছেন। আসন্ন কুরবানি উপলক্ষে পেশাদার ও মৌসুমি কসাইদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি চামড়া সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ বিষয়ে অবহিতকরণ কার্যক্রম করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
