Logo
Logo
×

সারাদেশ

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না পাওয়ায় ইউএনওর হুমকি

‘আমরা প্রজাতন্ত্রের এমন চাকর যে মালিককে জেলে ভরে শাস্তি দিতে পারি’

Icon

জলিল রহমান, পটুয়াখালী

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৫, ০১:৫২ পিএম

‘আমরা প্রজাতন্ত্রের এমন চাকর যে মালিককে জেলে ভরে শাস্তি দিতে পারি’

দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোকে কেন্দ্র করে দুই সাংবাদিকের ওপর বেশ চটেছেন পটুয়াখালীর বাউফলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম। গত সোমবার বাউফল গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ওই সাংবাদিকদের হুমকি দেন তিনি। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ভাইরাল হয়েছে।

ভুক্তভোগী সাংবাদিকেরা হলেন কালের কণ্ঠের পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি ইমরান হাসান সোহেল ও খবরপত্রের বাউফল প্রতিনিধি এইচ এম বাবলু।

জানা গেছে, বাউফল আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন পটুয়াখালী জেলা কার্যালয় ও বাউফল দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ কমিটির আয়োজনে স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতার ফাইনালের দিন ধার্য ছিল গত সোমবার। দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতির পদে রয়েছেন সাংবাদিক ইমরান। ইউএনওকে এ আয়োজনের আমন্ত্রণ জানাতে গত বৃহস্পতিবার, শনিবার ও রোববার কয়েক দফা ইউএনওর কার্যালয়ে যান এ সাংবাদিক। তবে তাকে পাননি তিনি। বাধ্য হয়ে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। তবে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

পরে বাউফল আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইউএনওকে আমন্ত্রণ জানালে তিনি অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে উপস্থিত হন। অনুষ্ঠানে এসেই ইমরানের ওপর চড়াও হন ইউএনও। তাকে চিঠির মাধ্যমে কেন আমন্ত্রণ দেওয়া হয়নি সেই কৈফিয়ত চান। এমনকি উত্তেজিত হয়ে আয়োজকদের জেলে ভরে শাস্তির হুমকিও দেন বাউফলের ইউএনও।

সাংবাদিক ইমরান বলেন, ইউএনওকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য বৃহস্পতিবার তার কার্যালয়ে যায়। ওই সময় তিনি অফিসে ছিলেন না। এরপর শনি ও রোববার গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তিন দিনই তাকে ফোন করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। সবশেষ রোববার সন্ধ্যায় ইউএনওকে ফোন দিলে তিনি তা কেটে দেন। পরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের আমন্ত্রণে তিনি অনুষ্ঠানে আসেন। এসেই চটে গিয়ে চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ না দেওয়ার কৈফিয়ত চান।

ইউএনওর প্রশ্নের জবাবে ইমরান বলেন, ‘আপনাকে একাধিকবার কার্যালয়ে গিয়ে পাইনি। এমনকি আপনাকে তিনদিন বিভিন্ন সময় ফোন করেছি আপনি রিসিভ করেননি।’ এ সময় ইউএনও উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘আপনারা একটা এ্যারেজমেন্ট করতেছেন, ইউএনও জানে না। আপনারা কিসের এ্যারেজমেন্ট করতেছেন। আশ্চর্য ব্যাপার। ইউএনওকে না জানিয়ে আপনাকে এ আয়োজন করার এখতিয়ার কে দিয়েছে। উপজেলা কমপ্লেক্সে কে গেছে। কমপ্লেক্সে তো কাউয়া-বক থাকে। আপনি আমার বাংলোতে গেলেন না কেন। আমার বাংলোও একটা অফিস।’

ইউএনও কথার জবাবে সাংবাদিক ইমরান বলেন, ‘আপনার বাংলোতে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না।’ জাবাবে আমিনুল ইসলমা বলেন, ‘বাংলোতে যখন এ্যালাউ করবো তখন ঢুকবেন। আপনারা প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি হয়ে মনে করছেন, আপনারা রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি হয়ে গেছেন। আমি আপনার ফোন ধরতে বাধ্য না। আপনি আপনার ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ফোন দিলে আমি ধরব কেন।’

এ সময় ইমরান বলেন, ‘আপনি ফোনই ধরলেন না। তাহলে ব্যক্তিগত স্বার্থ নাকি রাষ্ট্রীয় কোনো কাজ বুঝলেন কীভাবে। আপনি একজন কৃষকের ফোনও ধরতেও বাধ্য।’ এরপর ইউএনও বলেন, ‘আমি প্রজাতন্ত্রের এমন চাকর যে মালিককে জেলে ভরে শাস্তি দিতে পারি।’ তখন ইমরান বলেন, ‘ক্ষমতা আছে, আপনি দেন শাস্তি।’

এ সময় ইউএনও নিজের পিয়নকে দিয়ে খবরপত্রের সাংবাদিক এইচ বাবলুকে ভয়ভীতি দেখান। ওই সাংবাদিককে দেখা করে ক্ষমা চাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন ইউএনওর গাড়ি চালক।

এ বিষয়ে জানতে ইউএনও আমিনুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। হোয়াটস অ্যাপে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি এর জবাব দেননি।

জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন বলেন, ‘এটা নিছক একটা ভুল বোঝাবুঝি। ঠিক হয়ে যাবে আশা করি।’

বাউফল ইউএনও

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম