Logo
Logo
×

সারাদেশ

চলন্ত ট্রেনের দরজার বাইরে ঝুলে ছিলেন ৫ মিনিট, নেপথ্যে যা জানা গেল

Icon

সুকুমল কুমার প্রামাণিক, রাণীনগর (নওগাঁ)

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৫, ০৮:৩৪ পিএম

চলন্ত ট্রেনের দরজার বাইরে ঝুলে ছিলেন ৫ মিনিট, নেপথ্যে যা জানা গেল

বারবার প্রাণে বাঁচার জন্য আর্তনাদ করছিলেন মতিউর রহমান; কিন্তু ট্রেনের ভেতর থেকে তার হাত ধরে রাখা ব্যক্তি কখনই তাকে ট্রেনের ভেতরে উঠানোর চেষ্টা করেনি। বরং সে তাকে বারবার ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করে।

সাহস নিয়ে ট্রেনের দরজা ধরে প্রায় ৫ মিনিট চলন্ত ট্রেনে ঝুলে ছিলেন মতিউর। শেষপর্যন্ত হাত ধরে রাখা ব্যক্তি একটি স্টেশন এলাকায় তার হাত ছেড়ে দেন। এ সময় রেললাইনে পড়ে যান। এতে তার পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পেলেও প্রাণে বেঁচে যান তিনি।

বলছিলাম ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করা ট্রেনের নিচে পড়ে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া মতিউর রহমানের কথা। তার বাড়ি নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার পারইল পশ্চিম ফকিরপাড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান হবিবরের ছেলে।

বিদেশ লোক পাঠানোর পর কাগজপত্র দিতে দেরি হওয়ার জের ধরে গত রোববার বগুড়া থেকে ছেড়ে আসা সান্তাহারগামী কমিউটার ট্রেনে চলন্ত অবস্থায় কয়েকজন যুবক দুপুর ১টার দিকে মোবাইল ফোন চোর ও ছিনতাইকারী আখ্যা দিয়ে মতিউরকে আদমদিঘী উপজেলার নসরতপুর স্টেশন এলাকায় ফেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার ৩৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ও কয়েক সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাল হয়।

ভিডিওতে দেখা যায়, ট্রেনের দরজার বাইরে ঝুলছেন মতিউর রহমান; কিন্তু ট্রেনের ভেতর থেকে কেউ তার হাত ধরে রেখেছিল। প্রাণে বাঁচার জন্য আর্তনাদ করছিলেন লোকটি। এক সময় ভেতর থেকে লোকটির হাত ছেড়ে দিলে তাকে রেললাইনে পড়ে যেতে দেখা যায়।

মতিউর রহমান বগুড়ায় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে বাড়িতে আছেন।

মঙ্গলবার সরেজমিন আহত মতিউরের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মতিউর রহমান একজন আদম ব্যাপারী। ৪০ দিন আগে আদমদিঘী উপজেলার তালশন গ্রামের সজিব নামের এক যুবক তার মাধ্যমে সৌদি আরবে গেছেন; কিন্তু সৌদি আরবে যাওয়ার পর কাগজপত্রে সমস্যা থাকায় আকামা (কাজের সুপারিশ সনদ) না পাওয়ায় মতিউরের সঙ্গে সজিবের পরিবারের বিরোধ চলছিল। এরই জের ধরে সজিবের নির্দেশে কয়েকজন যুবক রোববার মতিউরকে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে হত্যার চেষ্টা করে।

মতিউর রহমান জানান, শনিবার সন্ধ্যার দিকে আমি বগুড়ায় মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাই। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার জন্য রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ট্রেন ধরতে বগুড়া স্টেশনে পৌঁছাই। এরপর মাস্ক পরা কয়েকজন যুবক আমাকে ফলো করতে থাকেন। দুপুর ১২টার দিকে বগুড়া থেকে কমিউটার ট্রেনে চড়ে আমি সান্তাহার আসছিলাম। আলতাবনগর স্টেশন এলাকায় পৌঁছলে ৭ থেকে ৮ জন যুবক আমাকে মোবাইল চোর ও ছিনতাইকারী আখ্যা দিয়ে মারপিট শুরু করেন। এ সময় আমি তাদের একজনের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করতে থাকলে মাস্ক খুলে চিনতে পারি সজিবের শ্যালক সুমনকে। একপর্যায়ে তারা আমাকে ছুরি মারার হুমকি দিতে থাকেন। তারা আমাকে মারতে মারতে হাত ধরে থেকে ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। আমি ট্রেনের দরজা ধরে প্রায় ৫ মিনিট ঝুলে ছিলাম। তারা আমাকে কেউ বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করেনি। নসরতপুর স্টেশন এলাকায় তারা আমার হাত ছেড়ে দিয়ে ট্রেন থেকে হত্যার উদ্দেশ্যে ফেলে দেন। এতে আমি রেললাইনে পড়ে গেলে রেলের ফাঁকা জায়গায় কাত হয়ে শুয়ে পড়লে প্রাণে বেঁচে যাই।

মতিউরের ছেলে আহসান হাবিব বলেন, আমার বাবা কোনো চোর বা ছিনতাইকারী না। সজিব নামের ওই যুবকে বিদেশ পাঠানোর পর কাগজপত্র করে দিতে দেরি হওয়ার কারণে সজিবের নির্দেশে তারা পরিকল্পিতভাবে আমার বাবাকে চলন্ত ট্রেন থেকে হত্যার উদ্দেশ্যে ফেলে দিয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা চেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে কয়েকজনের নামে সান্তাহার জিআরপি থানায় মামলা করেছি। দ্রুত জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিদেশরত সজিবের বাবা হেলাল প্রামাণিক মোবাইল ফোনে বলেন, আমার ছেলে প্রায় এক মাস ১০ দিন আগে বিদেশ গেছে; কিন্তু পরে জানা যাচ্ছে সাপ্লাই ভিসা। মতিউর এখনো কোনো কাজ দেয়নি আমার ছেলেকে। তাই মতিউরকে একদিন বাড়িতে ডেকে এনে প্রমাণ হিসেবে স্ট্যাম্প করে নেওয়া হয়েছে। আর ট্রেনের ঘটনা কী সেটা আমার জানা নেই। এর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।

সান্তাহার রেলওয়ে থানার ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, অভিযোগ পাওয়ামাত্রই মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। মামলার আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এছাড়া মূল ঘটনা উদঘাটনের জন্য চেষ্টাও করা হচ্ছে।

নওগাঁ ট্রেন

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম