|
ফলো করুন |
|
|---|---|
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে মো. হুমায়ুন কবির (৩৮) নামে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর পর লাশ দাফনে বাধা দেন পাওনাদারেরা। প্রায় ১২ ঘণ্টা লাশের কফিন অবরুদ্ধ করে রাখেন পাওনাদারেরা।
পরে থানা পুলিশ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় পাওনা আদায়ে প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পর লাশ দাফনে অনুমতি দেন পাওনাদারেরা।
উপজেলার পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের জয়শ্রী এলাকায় বুধবার এ ঘটনা ঘটে।
তিন সন্তানের জনক মো. হুমায়ুন কবির ওই গ্রামের আবুল হোসেন শেখ ও রহিমেন্নেছা দম্পতির ছেলে। ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সকালে তিনি মারা যান।
সরেজমিন মৃতের স্ত্রী শারমিন আক্তার বলেন, আমার স্বামী স্থানীয় শাহীবাজার এলাকায় বহুমুখী ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার ৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে ২৫ থেকে ৩০টি পরিবার জীবিকা নির্বাহ করত। গত ৭ বছর পূর্বে আমার মেয়ে আসমা আক্তার মিলি অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তার চিকিৎসার জন্য প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয় হয় আমাদের। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করতে ও আমাদের মেয়ের চিকিৎসা খরচের জন্য বিভিন্ন স্বজন ও এনজিও থেকে ঋণ গ্রহণ করেন আমার স্বামী। পরবর্তীতে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হয়। আমার স্বামী মাঠে প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা পাওনা রয়েছেন; কিন্তু তখন করোনার অজুহাত দেখিয়ে কেউ টাকা দিচ্ছিল না। এদিকে পাওনাদাররা ও এনজিও কর্মীরা টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। উপায়ন্তর না পেয়ে আমার স্বামী গত ৪ বছর পূর্বে দুবাই চলে যেতে বাধ্য হন। সেখানেও ভালো কিছু করতে না পেরে হতাশাগ্রস্ত হয়ে কয়েক মাস পূর্বে দেশে চলে এলে আমরা ঢাকাতে বসবাস করতে শুরু করি।
তিনি আরও বলেন, সোমবার বিকালে আমার স্বামী হৃদরোগে আক্রান্ত হলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। পর দিন মঙ্গলবার বেলা ১১টা নাগাদ আমার স্বামী মারা যান। রাতেই স্বামীর মরদেহ বাড়িতে নিয়ে এলে পাওনাদারদের বাধার মুখে পড়তে হয়। আমার স্বামীর ১ কোটি টাকার মতো দেনা থাকলেও তার বিভিন্নজনের কাছ থেকে ৩ কোটি টাকার মতো পাওনা রয়েছে। সবার সহযোগিতায় আমাদের টাকাগুলো উত্তোলন করতে পারলে আমার স্বামীর দেনাগুলো আমরা পরিশোধ করতে পারব ও শিশুসন্তানদের নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করব। অন্যথায় মরণ ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় থাকবে না।
পাওনাদার রুবেল, বাদশা মিয়া, জসিমসহ অনেকেই বলেন, মো. হুমায়ুন কবির আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আর দেননি। তিনি গত ৫ বছরের মতো পালিয়ে বেড়িয়েছেন। তাই আজকে তার মরদেহ দাফনে আমরা বাধা দিচ্ছি।
এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার এএসআই মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, পাওনাদারদের আপত্তির মুখে মো. হুমায়ুন কবিরের মরদেহ দাফনে বিলম্ব হয়েছে। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। পরে তার স্ত্রী টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে মরদেহ দাফনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুলতানা রাজিয়া বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। আপনার কাছ থেকে মাত্র জেনেছি। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
