ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম মুক্তি পেলেন সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে। তিনি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার কৃতীসন্তান।

তার এই মুক্তির খবরে আনন্দ মিছিল হয়েছে তার জন্মভূমি বদরগঞ্জে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সেখানে শ্রমিক সংগঠন রিকশা ও ভ্যান শ্রমিকরা মিষ্টি বিতরণ করে আনন্দ উল্লাস করেছেন। 

মঙ্গলবার দুপুরে বদরগঞ্জ পৌর শহরের কলেজ গুমড়ি নামক স্থানে রিকশাচালকরা বিভিন্ন লোকের মুখে মিষ্টি তুলে দেন এবং বিকালে বদরগঞ্জ উপজেলা জামায়াতে ইসলামী ও সাধারণ জনগণ একটি আনন্দ মিছিল বের করেন। এই মিছিলকারীরা পৌর শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ শেষে বদরগঞ্জ শহিদ মিনারে পথসভা করেন।

তারা জানান, বদরগঞ্জের কৃতীসন্তান এটিএম আজহারুল ইসলাম সর্বজনবিদিত সবার প্রিয় নেতা ও ভালো মানুষ। তিনি ক্ষমতায় না থেকেও রংপুর বদরগঞ্জে অসংখ্য মসজিদ নির্মাণসহ নানামুখী সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বিশুদ্ধ পানি খাওয়ার জন্য ভ্যান রিকশাচালকদের বাড়িতে টিউবওয়েলসহ নানান ধরনের সহায়তা দিয়ে তিনি সাহায্য করেছেন। সেই পরিচ্ছন্ন এবং গরিব-দুঃখী মেহনতি মানুষের পাশে থাকা মানুষটিকে রাজনৈতিক কারণে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে পতিত আওয়ামী সরকার ১৩ বছর বিনাঅপরাধে জেলখানায় রেখে ফাঁসি কার্যকরের ব্যবস্থা করেছিল। মহান আল্লাহর রহমতে মানুষের দোয়া ও ভালোবাসায় তিনি আজকে নির্দোষ হিসেবে খালাস পেয়েছেন। তিনি এ রায়ের মধ্য দিয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর ফাঁসির রজ্জু থেকে রক্ষা পেলেন।

এই মিছিলকারীদের মধ্যে ভ্যানচালক শমসের আলী বলেন, তার খালাসের খবর শুনেই আমরা গরিব ভ্যান ও রিকশাচালক একত্রিত হয়ে সবার মুখে মিষ্টি বিতরণ করছি।

ভ্যানচালক রবীন্দ্র চন্দ্র রায় জানান, আমরা অন্য ধর্মের মানুষ হলেও এটিএম আজহারুল ইসলাম বদরগঞ্জ তারাগঞ্জের সব মানুষকে সমানভাবে দেখতেন। তিনি সব ধর্মের অধিকারকে প্রাধান্য দিতেন। তাকে মিথ্যাভাবে জেল খাটিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার অন্যায় করেছেন। আজকে তার মুক্তির খবর শুনে আমরা রিকশাভ্যান চালকরা একত্রিত হয়ে নিজের পকেটের টাকা দিয়ে মিষ্টি কিনে সবার মুখে দেওয়ার চেষ্টা করছি বলে তিনি জানান।

রিকশাচালক ও শ্রমিক নেতা মোকলেসার রহমান জানান, পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ এটিএম আজহারুল ইসলামকে পতিত আওয়ামী সরকার যুদ্ধাপরাধীর নামে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা সাজিয়ে ফাঁসি দেওয়ার বন্দোবস্ত করেছিল। আজকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে নির্দোষ প্রমাণ করে খালাস দেওয়ায় তারা নিজ এলাকাসহ সারা দেশের সব ধর্ম বর্ণের মানুষ খুশি ও আনন্দিত হয়েছে। আমরা মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি তিনি যেন সুস্থ হয়ে আবারো বদরগঞ্জ তারাগঞ্জসহ সারা দেশের মানুষের কল্যাণ আত্মনিয়োগ করে মেহনতি খেটে খাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন।

বদরগঞ্জ উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির কামালুজ্জামান বলেন, আজকে আমাদের গর্বের দিন আনন্দের দিন। কারণ ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বাংলাদেশ নতুন করে স্বাধীন না হলে আমাদের নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের খুনি হাসিনার সরকার মিথ্যা ট্রাইব্যুনালে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তার ফাঁসি কার্যকর করত; কিন্তু সবার দোয়া ও ভালবাসায় বর্তমান বিচারকগণ সঠিক রায় দিয়ে আমাদের নেতাকে নির্দোষ প্রমাণ করে মুক্ত করে দিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তিতে জামায়াত ইসলামীর নেতাকর্মীরা আরও উজ্জীবিত হয়েছে।

রংপুর জেলা জামাতের আমি অধ্যাপক গোলাম রব্বানী জুলাই আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে শহিদ আবু সাঈদ মুগ্ধসহ আহতদের স্মরণ করে বলেন, এটি এম আজহারুল ইসলাম শুধু রংপুর বা বদরগঞ্জের নেতা নন তিনি আমাদের সংগঠন তথা সারা বাংলাদেশে সকলের নেতা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ইতোপূর্বে মিথ্যা তথ্য সন্নিবেশিত করে তাদের মনোনীত বিচারকদের বিয়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে স্বৈরাচার খুনি পতিত আওয়ামী সরকার তাকে ফাঁসি দেওয়ার বন্দোবস্ত করেছিল। ফ্যাসিবাদী খুনি হাসিনা বিনাদোষে ১৩টি বছর জেলখানার অন্ধকার কুঠিরে তাকে বন্দি করে নির্যাতন করেছিল।

তিনি আরও জানান, জুলাই আগস্টে ছাত্র জনতার আন্দোলন ছাড়া কখনো এটিএম আজহারুল ইসলামকে জীবিত পাওয়া যেত না। কিন্তু মহান আল্লাহর ফয়সালাই বড় ফয়সালা। মহান আল্লাহ অশেষ রহমতে ও বিচারাঙ্গনে ন্যায় ও সৎ বিচারকদের কারণে আজকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এটিএম আজহারুল ইসলামকে নির্দোষ প্রমাণ করে ঐতিহাসিক একটি রায় প্রদান করেছেন।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের আগস্ট মাসে ষড়যন্ত্র মিথ্যা মামলায় আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার তাকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে রাখেন। ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এটিএম আজহারুল ইসলামকে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় ফাঁসির রায় প্রদান করেন স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পালিত বিচারকরা। দীর্ঘ কারাবরণ শেষে মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে নির্দোষ প্রমাণ করে রায় প্রদান করেন।