খালের দূষিত পানিতে মশার বংশ বিস্তারে অতিষ্ঠ রংপুরবাসী
রংপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ০৯:৪৬ পিএম
ছবি: যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রংপুর নগরীর ঐতিহ্যবাহী শ্যামসুন্দরী খাল ময়লা-আবর্জনায় আর ভাগাড়ের স্তূপে পরিণত হয়েছে। ফলে এর গভীরতা ও প্রশস্ততা কমে তা ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
এর দূষিত আর ময়লা পানিতে বংশ বিস্তার করছে মশা-মাছি। খালটি এখন মশা-মাছি
উৎপাদনের উৎসে পরিণত হয়েছে। গরম, বিদ্যুতের লোডশেডিং ও মশার অত্যাচারে নাজেহাল হয়ে
পড়েছে রংপুর নগরবাসী। এ দুর্ভোগ নিরসনে সিটি করপোরেশনের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।
ভুক্তভোগী নগরবাসী জানান, অবৈধ দখলদারের উচ্ছেদ অভিযান না করায় নাব্য
হারিয়ে দিন দিন খালটি সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, এ খাল নগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ও জলাবদ্ধতা
দূরীকরণের জন্য খনন করা হলেও তা এখন নগরীর আবর্জনা-ময়লা ফেলার ভাগারে পরিনত হয়েছে।
ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই গোটা নগরীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে
হয় সাধারণ জনগণকে।
অন্যদিকে সিটি করপোরেশন থেকে নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রম
চালু করার ঘোষণা দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা না তা বাস্তবে নগরবাসীর চোখের
পড়েনি।
ফলে মশার বংশ বিস্তার রোধ করা যাচ্ছে না। মশার কামড়ের অত্যাচার যেমন
নাগরিক জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, তেমনি নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নগরবাসী। এ
নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার বাসিন্দারা।
এ পরিস্থিতি নিরসনের জন্য তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে খালের অবৈধ দখলদারের
উচ্ছেদ অভিযান ও খনন-সংস্কার দাবি করেছেন। তা না হলে রোগবালাই বাড়তে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুরের তৎকালীন পৌরসভা এলাকায় জলাবদ্ধতা দূর
এবং ম্যালেরিয়ার হাত থেকে পৌরবাসীকে মুক্ত রাখতে ১৮৯০ সালে পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান
ও ডিমলার রাজা জানকী বল্লভ সেন তার মা চৌধুরানী শ্যামা সুন্দরী দেবীর নামে এটি খনন
করেন।
১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ শ্যামাসুন্দরী খালটি নগরীর পশ্চিম-উত্তর দিকে ঘাঘট
নদীর উজান থেকে খনন শুরু করে নগরীর ভেতর দিয়ে পূর্ব-দক্ষিণে ভাটিতে গিয়ে আবার মিলিত
হয়েছে।
নগরীর ধাপ পাশারীপাড়া, কেরানীপাড়া, মুন্সিপাড়া, ইঞ্জিনিয়ারপাড়া, গোমস্তাপাড়া,
সেনপাড়া, মুলাটোল, তেঁতুলতলা, নূরপুর, বৈরাগীপাড়া হয়ে মাহিগঞ্জের মরা ঘাঘটের সঙ্গে
যুক্ত হয়েছে।
দীর্ঘদিন থেকে সংস্কার না করায় বর্তমানে শ্যামসুন্দরী নামের ঐতিহ্যবাহী
এ খালটি নাব্য হারিয়ে ফেলেছে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এর দুই ধারে অবৈধভাবে দখল হয়ে যাওয়ায়
সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে খালটি।
সামান্য বৃষ্টিতেই গোটা নগরীতে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। ফলে নগরীর বিভিন্ন
এলাকা সামন্য বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়ে পড়ে। এক সময়ে এ খালের স্রোতধারা থাকলেও তা এখন নেই।
এটি এখন বদ্ধ দূষিত কাদা-মাটির জলাধারে পরিণত হয়েছে।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ১১৭ বছর পর ২০০৭ সালে তৎকালীন রংপুর পৌরসভা
ক্যানেলটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। এখন পর্যন্ত সংস্কার কাজ শেষ না হওয়ায় নগরবাসীর মাঝে
হতাশা দেখা দিয়েছে।
বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে সংস্কারের নামে আর্থিক ব্যয় দেখানো হলেও
তা শুধু খাতা কলমে হয়েছে। বাস্তবে চোখে পড়েনি। এ খালটি এখন ধসে গিয়ে ভরাট হয়ে ময়লা,
আর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে মশা উৎপাদনের উৎসে পরিণত হয়েছে।
খালের উৎস মুখ থেকে মাহিগঞ্জ পাটবাড়ি পর্যন্ত খালের দুই পাশের প্রায়
১০ কিলোমিটার সংস্কার কাজ হাতে নেওয়া হয়। এর জন্য আগে রংপুর বিভাগীয় প্রশাসন, জেলা
প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় হাল জরিপ করা হয়েছে।
মৌজাভিত্তিক কেল্লাবন্দ, রাধাবল্লভ, আলমনগর, রঘুনাথগঞ্জ ও ভগি এলাকার ১৭০ জনকে অবৈধ
দখলদার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে সিটি করপোরেশন জানায়, ১৭০ অবৈধ দখলদারের মধ্যে ১১
জন আপত্তি দিয়েছে। তাদের আপত্তির কারণে উচ্ছেদ অভিযান হয়নি।
নগরীর রাধাবল্লভ এলাকার রিকশাচালক আজিজুল ইসলাম ও গৃহবধু মর্জিনা বেগম
বলেন, শুধু মশক নিধনের কথা শুনি। বাস্তবে তা চোখে পড়ে না। দিন-রাত সব সময় মশা কামড়
জনজীবন অতিষ্ঠ। মশার কামড়ে কোথাও স্থির থাকা যায় না। সামান্য বৃষ্টিতে খালের পাড়ের
পাড়া-মহল্লায় খালের পানি উপচে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
শিক্ষার্থী হুমায়ন শহিদুল হক ও আবদুল মোমিন জীবন বলেন, দিনের বেলা পড়তে
বসলেও মশার কামড়ে থাকা যায় না। ঘরে-বাইরে সর্বত্রই মশার উপদ্রব ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে।
নগরীর সেনপাড়া এলাকার বাসিন্দা গৃহীনি জেবুন্নেশা বেগম ও নিউ ইঞ্জিনিয়ারপাড়ার
মোকসেদুল হক বলেন, মশা মারতে কয়েল, স্প্রে, বৈদ্যুতিক ব্যাট সবই কিনেছি। কিন্তু কিছুতেই
মশার কামড় থেকে নিস্তার পাচ্ছি না। দ্রুত শ্যামাসুন্দরী খাল সংস্কারসহ নগরীতে মশা নিধনের
দাবি করেন তারা।
এদিকে শ্যামাসুন্দরী খনন, সংস্কার ও পরিষ্কার করতে নগরবাসী বিভিন্ন সময়
আন্দোলন সভা-সমাবেশ করলে আশ্বাস ছাড়া কিছুই জোটেনি নগরবাসীর ভাগ্যে।
রংপুর বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম এনডিসি বর্তমান সিটি করপোরেশনের
প্রশাসক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বে আছে তিনি বলেন, নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডেই মশক নিধন অভিযান
শুরু কাজ চলমান। এজন্য আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নগরবাসীর ভোগান্তি কমাতে এ উদ্যোগ
নেওয়া হয়েছে। শ্যামাসুন্দরী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও খননের জন্য প্রকল্পের
কাজের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
