হাট কাঁপাতে গাবতলী যাচ্ছে ৩০ মণের ‘বাংলার বস-৫’
তৌহিদ জামান, যশোর
প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৫, ০৭:০৭ পিএম
বাংলার বস-৫
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কুরবানির হাট ধরতে খামারি আসমত আলী গাইন প্রস্তুত করেছেন তার দুটি ষাঁড়। যার একটির নাম ‘বাংলার বস-৫’ অপরটির নাম ‘বাংলার সম্রাট’। গায়ের রঙ কালো বাংলার বস-৫ ব্রিটিশ ফ্রিজিয়ান জাতের এবং এবং সাদারঙা বাংলার সম্রাট ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়।
বাংলার বস-৫ এর উচ্চতা ৬৫ ইঞ্চি এবং লম্বায় ৯৬ ইঞ্চি প্রায়, লাইভ ওজন ৩০ মণ। খামারি এর দাম বলছেন ১২ লাখ টাকা।
অপরদিকে বাংলার সম্রাটের লাইভ ওজন ২৫ মণ, তিনি এর দাম হেঁকেছেন ১০ লাখ টাকা।
দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত এক সময়ের তরুণ আসমত আলী গাইন জীবিকার জন্যে রিকশা চালিয়েছেন, বাদাম বিক্রি করেছেন। কিন্তু শৈশব থেকে গরু পালনের প্রতি যে আগ্রহ ও ভালোবাসা- সেই বিকিকিনিই এখন তার সচ্ছলতার অন্যতম প্রধান কারণ।
তিনি জানান, মাত্র দুইটি গরু দিয়েই শুরু হয় তার খামারের কাজ। আর গত ৪-৫ বছর ধরে তার খামারে ৪৫ থেকে ৬০টি পর্যন্ত গরু পালন হয়ে থাকে। এক শতক পৈতৃক জমি থেকে আজ তিনি ১৭১ শতক জমির মালিক।
আসমত আলীর বয়স এখন ৩৯ বছর। তার খামারে পোষা ষাঁড় বেশ কয়েকবার দেশের কুরবানি হাটে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। ঢাকার গাবতলী গরু হাটে কয়েক বছর ধরে তিনি ষাঁড় নিয়ে গেছেন। তার প্রতিপালন করা ষাঁড়গুলোর নামও রেখেছেন বাংলার বস, বাংলার সম্রাট আর জলহস্তী দিয়ে। প্রথম যে ষাঁড় বড় করে গাবতলী নিয়ে যান, তার নাম ছিল বাংলার বস-১। এরপর সেটি বাংলার বস-৫ পর্যন্ত নামকরণ হয়েছে। এর আগে জলহস্তী-১ ও ২ বিক্রি করেছেন। এবার নতুনভাবে যাচ্ছে বাংলার সম্রাট।
গত বছর বাংলার বস-৪ বিক্রি করেন ১৫ লাখ টাকায়। এই বছরও ঈদবাজারের জন্য প্রস্তুত করেছেন ৬টি ষাঁড়। বললেন, আমার ব্যবসা মূলত ডেইরি ফার্মের। ষাঁড় ছাড়াও আছে গাভি বাছুর মিলিয়ে ২৫টি।
আসমত আলী গাইনের বাড়ি যশোরের মণিরামপুর উপজেলার ভোজগাতী ইউনিয়নের হুরগাতী গ্রামে। ২০০৮ সালে ধার-দেনা করে তিনি গরু পালন ও বিকিকিনির সঙ্গে সিরিয়াসলি জড়ান; কিন্তু লাভের একটা অল্প অংশই তিনি পেতেন। যারা পুঁজি লগ্নি করেছিল, বেশিরভাগ তারাই নিয়ে যেত। পরে দায়দেনা হয়ে বাধ্য হয়ে তিনি ঢাকায় চলে যান। সেখানে প্রায় দুই বছর রিকশা চালিয়েছেন। বাবার মৃত্যুর পর তিনি ফের বাড়ি ফেরেন।
তখন চাচারা বলেন- ঢাকায় যাওয়ার দরকার নেই। বাড়িতে থেকে গরু প্রতিপালন করো। ২০০৬ সালে গরু কিনে আবার বিক্রি শুরু করেন। ২০০৮ সালে পূর্ণমাত্রায় ফার্মের কাজ শুরু হয়। তখন গরু বিক্রির সাথে সাথে প্রধান কাজ ছিল গরুর দুধ বিক্রি।
গরু প্রতিপালনে তাকে সবসময় সহযোগিতা করেন স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম। তিনি বলেন, গরুর গোয়াল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি গরুর তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা করি। সকালে তাদের ঘাস, বিচালি, খইল দিয়ে মাখিয়ে খাবার দেয়া লাগে। দুপুর আর রাতে তাকে চালের খুদ (ভাঙা চাল) সিদ্ধ করে খেতে দিতে হয়। এই খাবারের সঙ্গে ভুট্টার গুঁড়ো আর চিটাগুড় দেওয়া লাগে।
৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা আসমত আলী বলেন, প্রতিটি গরুর প্রতিদিন খাবারের জন্য ব্যয় পাঁচশ থেকে সাড়ে পাঁচশ টাকা। অসুখ-বিসুখ হলে তিনি নিজেই চিকিৎসা করেন। দীর্ঘদিন ধরে গরু লালন-পালনে তার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তারই আলোকে চিকিৎসা করান। আশপাশের খামারিরাও তার কাছে আসেন ব্যবস্থাপত্র সম্পর্কে জানতে। তিনি সানন্দে সেগুলো তাদের অবহিত করেন।
আসমত আলী বলেন, আগামী ১ জুন ষাঁড়গুলো গাবতলীর হাটে নিয়ে যাব। আশা করি, এবারও কাঙ্ক্ষিত দামে বিক্রি করতে পারব।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার যদি ক্ষুদ্র খামারিদের পাশে দাঁড়ায়, তাহলে আমরাও উন্নতমানের ষাঁড় প্রতিপালন ও দেশে মাংসের চাহিদা পূরণে সক্ষম হব।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে আমার প্রতিপালন করা ষাঁড়গুলো বেশ নাম করলেও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা কখনই আমার খামারে আসেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মণিরামপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের উপজেলাটি বেশ বড়। এখানে খামার ও ব্যক্তিপর্যায়ে সবার কাছে পৌঁছতে আমরা পারি না। কেননা আমাদের লোকবলের সংকট রয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে যশোর জেলায় খামারি ও কৃষকরা মোট এক লাখ ১৪ হাজার ৫৭৪টি পশু প্রস্তুত করেছেন। এর মধ্যে গরু ৩৫ হাজার ৩৩৮টি, ছাগল ৭৮ হাজার ৫২৮টি এবং ভেড়া ৫৮৩টি। জেলায় এবার কুরবানির জন্যে চাহিদা রয়েছে ৯৬ হাজার পশুর। চাহিদার তুলনায় ১৯ হাজার পশু বেশি আছে।
