Logo
Logo
×

সারাদেশ

মানুষের সান্নিধ্যে বনের হরিণ!

Icon

মুহসিন আল জাবির, হাতিয়া (নোয়াখালী)

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৫, ১০:৫৭ পিএম

মানুষের সান্নিধ্যে বনের হরিণ!

নোয়াখালীর উপকূলঘেঁষা হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ যেন প্রকৃতির এক অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি। বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা এই দ্বীপে রয়েছে বিস্তীর্ণ ম্যানগ্রোভ বন; যেখানে চিত্রা হরিণের দল চুপিচুপি ঘোরে। তবে সব পর্যটকের ভাগ্যে জোটে না এই বনচারীদের দেখা।

অথচ এমন এক হরিণ রয়েছে, যে নিজেই চলে আসে মানুষের কাছে- সে হরিণটির নাম ‘বিজলী’।

প্রতিদিন ভোরে বা সন্ধ্যাবেলায় নিঝুম দ্বীপের ঈশিতা রেস্ট হাউসের সামনে দেখা মেলে বিজলীর। তাকে ঘিরে পর্যটকদের উচ্ছ্বাসের যেন সীমা থাকে না। কেউ সেলফি তুলছেন, কেউ পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে ছবি তুলছেন, কেউবা নিজের হাতে খাওয়াচ্ছেন চিপস, বিস্কুট বা কলা। বিজলীও দিব্যি সবার সঙ্গে সময় কাটিয়ে আবার ফিরে যায় বনে, যেন কোনো অতিথি এলো, কুশলাদি বিনিময় করল, আবার নিজের ঘরে ফিরে গেল।

২০১৭ সালে নিঝুম দ্বীপের ছেওয়াখালী এলাকায় শিয়ালের আক্রমণে আহত হয় একটি হরিণ। বন বিভাগ সেটিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়। সেরে ওঠার পর হরিণটি মানুষের সঙ্গে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে ওঠে যে সে আর বনের গাঢ় নির্জনতায় নিজেকে আটকে রাখেনি। বন বিভাগ তার নাম দেয় ‘বিজলী’। এখন সে অনেকটা গৃহপালিত পশুর মতো আচরণ করে, তবে তার মন পড়ে থাকে দুই দিকেই, বনের গভীরতায় আর মানুষের ভালোবাসায়।

পর্যটকদের কাছে বিজলী যেন নিঝুম দ্বীপের প্রাণ। ঘুরতে আসা পর্যটক সম্পদ হাওলাদার বলেন, বনভ্রমণের সময় হরিণ দেখা সম্ভব না হলেও সকালে হঠাৎ রেস্ট হাউসের মাঠে বিজলীকে দেখে তাদের আনন্দের শেষ ছিল না। মুহূর্তেই ক্যামেরা বন্দি হয়ে যায় বিজলীর উপস্থিতি।

ঈশিতা রেস্ট হাউসের পরিচালক মো. আরিফ বলেন, প্রতিদিনই বিজলী রেস্ট হাউসের সামনে আসে। পর্যটকেরা তাকে দেখে অভিভূত হয়ে পড়েন, অনেকেই তার সঙ্গে মুহূর্ত কাটাতে ভালোবাসেন।

বন বিভাগের জাহাজমারা রেঞ্জ কর্মকর্তা এম সাইফুর রহমান জানান, দ্বীপে প্রায়ই হরিণ আহত হয় নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বন্য প্রাণীর আক্রমণে। কিন্তু এখানকার বড় সমস্যা হলো—আহত হরিণদের জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থার অভাব। তিনি দ্বীপে একটি হরিণ চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানান- যাতে বিজলীর মতো অন্য আহত হরিণদেরও বাঁচানো সম্ভব হয়।

২০০১ সালের ৮ এপ্রিল নিঝুম দ্বীপকে সরকারিভাবে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর আগে ১৯৭০-এর দশকে পরীক্ষামূলকভাবে চার জোড়া চিত্রা হরিণ ছাড়ে বন বিভাগ। বর্তমানে এ দ্বীপ বাংলাদেশের একটি অন্যতম হরিণ অভয়ারণ্য, যেখানে প্রকৃতি, মানুষ আর প্রাণী এক অদ্ভুত সমন্বয়ে মিলেমিশে গেছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম