Logo
Logo
×

সারাদেশ

রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের শঙ্কা, ঝুঁকিতে ২০ হাজার মানুষ

Icon

সুশীল প্রসাদ চাকমা, রাঙামাটি

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৫, ১১:০১ পিএম

রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের শঙ্কা, ঝুঁকিতে ২০ হাজার মানুষ

পাহাড়ের কিনারায় ঝুঁকিপূর্ণ বাড়ি। ছবি: যুগান্তর

কয়েক দিনের থেমে থেমে হালকা, মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে রাঙামাটিতে দেখা দিয়েছে পাহাড় ধসের শঙ্কা। এতে রাঙামাটি সদরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের ঢালে ও পাদদেশে ঝুঁকিতে বসবাস করছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ। 

এদিকে জেলায় বন্যা, ভূমি ও পাহাড় ধসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের লোকজনকে নিরাপদে সরে যেতে সতর্ক করছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তারা এলাকায় গিয়ে সতর্কতামূলক প্রচারাভিযান শুরু করেছেন। 

বৃহস্পতিবার বিকালে ঝুঁকিতে থাকা লোকজনের মাঝে সতর্কবার্তা দিতে শহরের লোকনাথ মন্দির, শিমুলতলী, মুসলিমপাড়া ও রূপনগর এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. হাবিব উল্লাহ। এ সময় জেলা প্রশাসনের ভূমি কর্মকর্তা রুবায়াত বিনতে কাশেম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিফাত আসমাসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

পরিদর্শনকালে ইউএনও (সদর) রিফাত আসমা বলেন, শহরসহ রাঙামাটি সদরে বহুসংখ্যক মানুষ এখনো পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করছেন। ইতোমধ্যে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। এতে যে কোনো মুহূর্তে জেলায় বন্যা, ভূমি ও পাহাড় ধসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে বিলম্ব না করে নিরাপদে সরে যেতে সতর্ক অবলম্বন করতে হবে।

পরে লোকনাথ মন্দির প্রাঙ্গণে শহরের ওই সব এলাকায় ঝুঁকিতে থাকা লোকজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন জেলা প্রশাসক। এ সময় তিনি বলেন, অতীতের মতো কোনো দুর্যোগে যাতে একটি মানুষেরও প্রাণহানি না ঘটে সেটি অধিক গুরুত্ব দিচ্ছি। তাই সামনে যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা সব ধরনের পূর্ব প্রস্তুতি নিয়েছি। উপজেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী কর্মকর্তাদেরও এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ লোকজনের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র খোলা রাখতে বলা হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা ও দখলকারীদের উচ্ছেদে চলমান প্রক্রিয়া আছে। তবে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব হচ্ছে ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া।

জেলা প্রশাসক মো. হাবিব উল্লাহ বলেন, এ মুহূর্তে ঝুঁকিপূর্ণ লোকজনের সঠিক তালিকা বলা যাচ্ছে না। কারণ প্রত্যেকটি উপজেলায় এ তালিকা তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে শহরসহ জেলায় অন্তত ২০ হাজারের মতো মানুষ পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করছেন। যাদের পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। এ সময় শহরের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা রূপনগর, শিমুলতলী, মুসলিমপাড়া ও লোকনাথ মন্দিরসংলগ্ন লোকজনের নিরাপদ আশ্রয়ে বিএম ইনস্টিটিউট, বেতার কেন্দ্র, লোকনাথ মন্দির ও বিএডিসি ভবনকে আশ্রয় কেন্দ্র খুলে রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক।

তিনি বলেন, দুর্যোগে কারও কোনো অবহেলা বা দায়িত্বহীনতায় কোনো রকম ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা এবার দুর্যোগ মোকাবিলায় বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও (এনজিও) সম্পৃক্ত করেছি। দুর্যোগে তাদের নিজেদের উদ্যোগে ভুক্তভোগী ও অসহায় লোকজনকে সহায়তায় এগিয়ে আসতে বলে দেওয়া হয়েছে। 

উল্লেখ্য,  জেলায় ২০১৭ সালের ১৩ জুন ভয়াবহ পাহাড় ধসে ৫ সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটে। পরবর্তী ২০১৮ সালের জুনে জেলার নানিয়ারচর উপজেলায় ফের পাহাড় ধসে ২ শিশুসহ ১১ জন এবং ২০১৯ সালের জুনে জেলার কাপ্তাইয়ে তিনজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। 

এদিকে জেলা শহরে পাহাড় ধসের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসাবে চিহ্নিত ৩১টি স্থানের মধ্যে ভেদভেদী, শিমুলতলী, রূপনগর, যুব উন্নয়ন এলাকা অন্যতম। তবু বিস্ময়কর হলো- ওইসব এলাকায় জনবসতি বেড়েই চলেছে। অথচ ২০১৭ সালের পাহাড় ধসের ক্ষতচিহ্ন এখনো দৃশ্যমান রয়ে গেছে। এরপরও পাহাড় ধসের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাস করছে মানুষ। মৃত্যুঝুঁকি জেনেও বেড়েছে পাহাড়ের ঢালে বসবাস। গড়ে উঠছে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি। 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম