প্লাবিত সীমান্ত এলাকার নিম্নাঞ্চল
টানা বৃষ্টিতে সিলেট নগরজুড়ে জলাবদ্ধতা
সিলেট ব্যুরো
প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৫, ০৯:৫৬ পিএম
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সিলেট নগরীতে গত কয়েক দিনের টানা ভারি বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পানি জমে শহরের অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে, কোথাও কোমর সমান পানি, আবার কোথাও হাঁটুপানি জমে জনদুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে, বাণিজ্যিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
নগরের অভিজাত উপশহর এলাকা থেকে শুরু করে হাওয়াপাড়া, কাজলশাহ, সুবিদবাজার, আখালিয়া, মেজরটিলা, ইসলামপুর, ভার্থখলা, বাদামবাগিচা, খাসদবীর, চৌকীদেখি, দরগামহল্লা, তালতলা, মিরাবাজার, যতরপুর, ওসমানী মেডিকেল কলেজ এলাকা, রিকাবিবাজার, আম্বরখানা, ইলেক্ট্রিকসাপ্লাই, বাগবাড়ী, উত্তর বাগবাড়ী এলাকা, সুরমাতীরের মহাজনপট্টি, কালিঘাট, কাষ্টঘর, কদমতলী ও সংলগ্ন এলাকায়, কাজিরবাজার, জামতলা, মাছিমপুরসহ সিলেট নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকার রাস্তাঘাটা পানির নিচের তলিয়ে গেছে। পানি ঢুকে পড়ে বাসা বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং মসজিদেও। বৃষ্টিতে প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই জলাবদ্ধতা এখন একটি নিয়ত দুর্যোগে পরিণত হয়েছে।
হাওয়াপাড়ার বাসিন্দা তুরাব আলী জানালেন, সিটি কর্পোরেশন এক বছর আগে ড্রেন নির্মাণ শুরু করলেও অগ্রগতি হয়নি। এই কারণে হালকা বৃষ্টিতেও পানি জমে, আর এবারের ভারি বৃষ্টিতে তো কোমর সমান পানি বয়ে যাচ্ছে সড়কে।
একই অভিজ্ঞতার কথা জানান ভার্থখলার বাসিন্দা হাসান আহমদ। তিনি বলেন, সকালেই ঘরের ভেতর পানি ঢুকে পড়ে, প্রতিবছর এই সমস্যা হলেও মিলছে না স্থায়ী সমাধান।
অপরিকল্পিত উন্নয়ন এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থার অদক্ষতার কারণে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলছে না নগরবাসীর। ড্রেনগুলো প্লাস্টিক ও বর্জ্যে ভরে রয়েছে, কোথাও কোথাও ছড়ার পানি আর প্রবাহিত হতে পারছে না। গত এক দশকে প্রায় ১২শ কোটি টাকা ব্যয় করেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিকল্পনাহীন উন্নয়ন কাজ, এক এলাকা বারবার সংস্কার, ছড়া-নালায় বক্স কালভার্ট নির্মাণ, অপরিকল্পিতভাবে খাল ভরাট ও ড্রেনের মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণেই জলাবদ্ধতা বাড়ছে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানিয়েছে, তারা জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করে যাচ্ছে। এ লক্ষে নাগরিক দুর্ভোগ কমাতে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে রয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর। নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সচিবগণ নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করে পরিস্থিতি পরিদর্শন করবেন এবং তাৎক্ষণিক কার্যকরী ব্যবস্থা নেবেন।
অন্যদিকে, শুধু সিলেট নগরী নয়, সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। প্রবল বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে ঘরবাড়ি, বাজার, রাস্তাঘাট এখন পানির নিচে। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় টানা বৃষ্টির পাশাপাশি উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নদ-নদী ও হাওরে পানির পরিমাণ হঠাৎ বেড়ে গেছে। বিশেষ করে জাফলং এলাকায় ডাউকি নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছে, ভেসে গেছে অনেক অস্থায়ী স্থাপনা। রাধানগর সড়কের কিছু অংশ ইতোমধ্যে প্লাবিত।
যদিও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা আপাতত নেই, তবে স্বল্প মেয়াদে নিম্নাঞ্চলে প্লাবন পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে।
স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা জানান, ধান কাটা শেষ হলেও সীমান্তবর্তী উঁচু এলাকায় সবজির চাষে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে গবাদিপশু পালনকারীরা পড়তে পারেন চরম ভোগান্তিতে। গবাদিপশুর আশ্রয়, খাবার ও চিকিৎসা নিশ্চিত করাই হবে এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
এছাড়া শুক্রবার সকালে ধলাই নদীতে আচমকা ঢল নেমে পুরোপুরি তলিয়ে যায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা সাদাপাথর। সকাল ১০টার দিকে নেমে আসা ঢলে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই পানির নিচে চলে যায় পুরো স্পটটি। ঢলের তোড়ে ভেসে গেছে অসংখ্য দোকান, অস্থায়ী কাঠামো ও পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ঈদের আগে অনেক ব্যবসায়ী সবকিছু হারিয়ে এখন দিশেহারা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, চেরাপুঞ্জিতে স্বাভাবিক মাত্রার বৃষ্টি হলেও তা অব্যাহত থাকলে ঢলের মাত্রা আরও বাড়তে পারে। আগামী কয়েক দিনেও মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে।
এদিকে, টিলাবেষ্টিত সিলেটে প্রবল বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ছাড়াও আরেক আতঙ্ক হলো টিলা ধস। টিলার পাশে ঘরবাড়িতে বসবাসরত মানুষজন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। যে কোনো সময় ধসে পড়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা- এমন ভয়ে রাত কাটছে তাদের।
