|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মৃত্যুকে অতি আপন করে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছে ভোলা জেলার দক্ষিণ উপকূলের ৩ চরের মানুষ। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও নদীভাঙনের মুখোমুখি হচ্ছে এই উপজেলার ঢালচর, চর কুকরি-মুকরি (চরপাতিলা) ও মুজিবনগর ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার। চরের এই হতদরিদ্র মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতার মাঝেই বছরের পর বছর বসবাস করছে। এই চরগুলোতে কোনো বেড়িবাঁধ নেই। জোয়ার-ভাটার পানির মধ্যেই এদের জীবন।
আধুনিক সভ্যতার এই যুগেও এসব চরাঞ্চলে হাজার হাজার জেলেকে আবহাওয়ার সংকেত শোনার জন্য নির্ভর করতে হয় এক মাত্র রেডিওর ওপর। এসব দুর্গম চরের বেশির ভাগেই মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া খুবই দুষ্কর। স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল দেখা তো স্বপ্নের মতো। উপজেলার মূল ভূখণ্ডের বাইরের এই তিন ইউনিয়নের বাসিন্দারা প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করছে। দুর্যোগ শুরু হলে দুর্বিষহ জীবন কাটে সেখানকার খেটেখাওয়া সাধারণ মানুষের।
ঢালচর, চর কুকরি-মুকরি (চরপাতিলা) ও মুজিবনগর ইউনিয়নের ২৭টি গ্রামে প্রায় ২৩ হাজার লোকের বসবাস। কৃষিকাজ ও নদীতে মাছ শিকার সেখানকার বাসিন্দাদের মূল পেশা। নদীপথে যেতে হয় সেখানে। বিশেষ করে দুর্যোগ মৌসুমে এসব নদী ভয়ংকর রূপধারণ করে। ফলে এলাকাতে আসা-যাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
ঢালচরে প্রায় ১৫ হাজার লোকের বসবাস। সাইক্লোন সেন্টার আছে মাত্র ১টি। তাতে ১২শ লোকেরও আশ্রয় নেওয়া সম্ভব নয়। একই অবস্থা চর কুকরি-মুকরির। সেখানে ১৭ হাজার লোকের জন্য সাইক্লোন সেন্টার কাম-স্কুল আছে ৮টি। চর পাতিলার ২ হাজার লোকের জন্য সাইক্লোন সেন্টার কাম-স্কুল আছে মাত্র ১টি। কিন্তু গবাদিপশুর জন্য কেল্লা নেই। ফলে দুর্যোগ মৌসুমগুলোতে সংগ্রাম করেই বেঁচে থাকতে হয় বাসিন্দাদের।
তিনটি ইউনিয়নের বহু পরিবার যেসব ঘরে বাস করে, সেসব ঘর সামান্য ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসের এক ধাক্কাতেই বিধ্বস্ত হয়ে যেতে পারে। পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র নেই। দূরবর্তী চরাঞ্চলে অনেক সময় দুর্যোগপূর্ব সতর্কতা পৌঁছায় না, ফলে প্রাণহানির ঝুঁকি থেকে যায়। তবে, এসব প্রতিকূলতার মধ্যেও এখানকার মানুষ হাল ছাড়েনি। স্থানীয়ভাবে তাদের নিজেদের প্রচেষ্টায় উঁচু ঘর তৈরি করে কিংবা নিজেরা আশ্রয়কেন্দ্র বানিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। স্থানীয় কিছু যুবক দুর্যোগপূর্ব ও পরবর্তী সময়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন।
ঢালচরের বাসিন্দা কামাল জানান, পূর্বপুরুষ হতেই তারা এই এলাকাতে বসবাস করছেন। তিনি পেশায় একজন জেলে। প্রতি বছরের বর্ষা মৌসুমে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে তাদের সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয়। কারণ যখন দুর্যোগ শুরু হয়, তখন নদীতে প্রচণ্ড ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। এতে করে মূল ভূখণ্ডে তারা আসতে পারেন না। আর উঁচু কোনো সাইক্লোন শেল্টার ও গবাদিপশুর জন্য কোনো কেল্লা না থাকার কারণে বিপদে পড়তে হয় তাদের।
চর কুকরি-মুকরি ইউনিয়নের বাসিন্দা রহিম জানান, কৃষিকাজ করেই ৫ সদস্যের সংসার চালাতে হয় তার। ১০টির অধিক গবাদিপশু লালনপালন করেন তিনি। প্রতি বছর ঘূর্ণিঝড়ের সময় জোয়ারের পানিতে তার গবাদিপশু ভেসে যায় এবং ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। বেঁচে থাকার জন্য পুনরায় ঘর নির্মাণ করেন। এভাবেই চলছে তার জীবন।
এ বিষয়ে চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথি জানান, ইউনিয়ন তিনটি ভৌগোলিকভাবে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতি বছর দুর্যোগ মৌসুম এলেই এখানকার মানুষকে প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয়।
তিনি বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা এসব এলাকায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় কাজ করছি।
