দোহার-নবাবগঞ্জে হাটের চাইতে খামারে ক্রেতা বেশি
কাজী সোহেল, নবাবগঞ্জ
প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ১০:২২ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আর মাত্র কয়েক দিন পরই পবিত্র ঈদুল আজহা। ইতোমধ্যে ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে ছয়টি পশুর হাট বসলেও জমে উঠেনি বেচাকেনা। অন্যদিকে ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন এ অঞ্চলের খামারিরা।
দেশীয় গরুর চাহিদা ভালো থাকায় খামারিদের পাশাপাশি পারিবারিকভাবে গরু লালন-পালন করছেন কৃষকরাও। কুরবানির ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে প্রান্তিক খামারিরা ততই লাভের আশা করছেন।
ক্রেতারাও হাটগুলোর চেয়ে বাড়িতে বাড়িতে এবং খামারে গিয়ে গরু কিনতে আগ্রহ বেশি দেখাচ্ছে। দেশীয় গরুর চাহিদা থাকায় ভালো দাম পাওয়ার আশা খামারিদের।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, নবাবগঞ্জে এবার চাহিদার তুলনায় কুরবানির পশু বেশি রয়েছে। উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে ১ হাজার ৯৮২টি খামারে ১৮ হাজার ১০৭টি গরু-মহিষ এবং ৪ হাজার ৩৭৬টি ছাগল ও ৩৮৪টি ভেড়াসহ ১৮ হাজার ১০৭টি গবাদিপশু মোটাতাজা করা হয়েছে। এর বিপরীতে চাহিদা রয়েছে ১২ হাজার ৫৪টি। এবং দোহারে ৯ হাজার চাহিদার তুলনায় সাড়ে ৯ হাজার পশু রয়েছে বলে জানান প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শামীম হোসেন।
প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, দেশীয় পদ্ধতিতে মোটাতাজাকরণ পশুর চাহিদা বেশি থাকায় অন্যান্য বছরের তুলনায় নবাবগঞ্জে বেড়েছে গরুর খামার। প্রান্তিক কৃষকদের পাশাপাশি বেকার যুবক ও তরুণরা এবং উদ্যোক্তারাও খামার নির্মাণে আগ্রহী হচ্ছেন। পাশাপাশি তারা দেশীয় পদ্ধতিতে গরুর মোটাতাজাকরণে আগ্রহী হচ্ছেন। ঈদের আগ মুহূর্তে পশুর বিশেষ পরিচর্যায় ব্যস্ত এখন খামারিরা। পশুর স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে তারা খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। পশুগুলোকে হৃষ্টপুষ্ট রাখতে কাঁচা ঘাস, খৈল, ভুসি, চালের খুদ-কুড়াসহ প্রাকৃতিক খাবার বেশি খাওয়ানো হচ্ছে।
একদিকে চাহিদার তুলনায় বেশি পশু থাকা, অন্যদিকে খামারিদের পশু পালনে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে। গো-খাদ্যের দাম বেশি থাকায় ন্যায্যমূল্য নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন খামারিরা।
কয়েকজন খামারি জানান, পশু পালনে খরচ বৃদ্ধি পাওয়া গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী পশু তৈরি করা কঠিন হয়ে গেছে। পশু খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় পশুর দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার পশুর দাম শুনলে ক্রেতারা তাদের বাজেটের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন। বর্তমান বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের দামের সঙ্গে সমন্বয় করা খুবই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আর মাত্র ৩ দিন পর ঈদ, অথচ বেচাকেনা কেন খামারে। হাটগুলো এখনো জমে উঠেনি। তবে আশা করছি দ্রুত বেচাকেনা বাড়বে। এখন মানুষ নানা ঝামেলা এড়াতে খামার থেকেই পশু কিনতে আগ্রহী বেশি বলে জানান তারা।
খামারিরা আরও জানান, খামার থেকে কিনলে আরেকটা সুবিধা নেয় ক্রেতারা। তারা গরু কিনে খামারেই রেখে দেয়, পরে ঈদের আগের দিন গরুগুলো নিয়ে যায়। এতে পশু পালনের যে ঝামেলা তা থেকে ক্রেতারা বাঁচতে পারে।
খামারি আব্দুল মালেক বলেন, আমরা একটি বছর পশু পালন করে লাভের স্বপ্ন দেখি; কিন্তু প্রায় সময় হতাশ হতে হয়। ক্রেতাদের বাজেটের সঙ্গে আমাদের দামের মিল হয় না। পশুর খাবারের যে দাম তাতে গরু বিক্রি করার সময়ও দাম বেশি নিতে হয়। খাবারের দাম কমলে আমরাও কম দামে গরু বিক্রি করতে পারতাম।
নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ফারহানা জাহান জানান, এবার চাহিদার তুলনায় নবাবগঞ্জে কুরবানির পশু বেশি রয়েছে। নবাবগঞ্জের চাহিদা মিটিয়ে খামারি ও কৃষকরা গরুগুলো ঢাকাসহ আশপাশের হাটে বিক্রি করে লাভবান হতে পারবেন। সারা বছর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে খামারিদের সবধরনের সহযোগিতা করা হয়। পাশাপাশি গরু মোটাতাজাকরণে অ্যান্টিবায়োটিক, গ্রোথ হরমোন, স্টেরয়েড ও ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগ বন্ধে কঠোর নজরদারি রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
