শরীয়তপুর ছাত্রদলের কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ
শরীয়তপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ১০:৫৭ পিএম
ছাত্রদলের বিক্ষোভ। ছবি: যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
শরীয়তপুরে সদ্য ঘোষিত জেলা ছাত্রদলের কমিটি করার পর বিকালে একটি আনন্দ মিছিল করলে অপর গ্রুপ তা প্রতিহত করার চেষ্টা করে। এ সময় দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়ায় ৫ জন আহত হয়েছেন।
সকালে শরীয়তপুরে সদ্য ঘোষিত জেলা ছাত্রদলের কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ছাত্রদলের একাংশের নেতাকর্মীরা।
মঙ্গলবার দুপুরে শরীয়তপুর সরকারি কলেজ থেকে মিছিলটি বের করে কোর্ট মোড়ে সড়ক অবরোধ করেন তারা। এ সময় মিছিলে ঝাড়ু, জুতা এবং লাঠি প্রদর্শনসহ বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়।
এ সময় ২০ মিনিট সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। পরে সদরের পালং মডেল থানার পুলিশ সড়ক থেকে তাদের সরিয়ে দেয়।
জানা গেছে, শরীয়তপুরে সদ্য ঘোষিত জেলা ছাত্রদলের কমিটি গঠন করার পর মঙ্গলবার বিকাল ৫টার দিকে শরীয়তপুর শহরের ডুবাই প্লাজার সামনে থেকে একটি আনন্দ মিছিল বের করে।
মিছিলটি পালং থানার সামনে আসলে অপরগ্রুপের লোকজন তা প্রতিহত করার জন্য ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পালটা ধাওয়া শুরু হয়। এতে উভয় গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়ায় ইসাহাক সরদার, কাজী বাবুল, সবুজ মাদবর, কাওসার খান ও শাওন আহত হয়েছে। আহতদের শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
সকালে বিক্ষোভ মিছিল শেষে বক্তারা বলেন, শরীয়তপুর জেলা ছাত্রদলের সদ্য ঘোষিত কমিটিতে যোগ্য ব্যক্তিদের পদ দেওয়া হয়নি। গঠিত জেলা ছাত্রদলের কমিটির আহ্বায়ক দুই সন্তানের জনক। তাছাড়া তার পরিবারের অধিকাংশ লোক আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কমিটি রাতের আঁধারে এবং আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে করা হয়েছে বলে দাবি করেন বক্তারা। দ্রুত কমিটি বাতিল করে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নতুন করে কমিটি গঠনের দাবি জানান তারা।
বিকাল ৫টার দিকে সদ্য ঘোষিত কমিটির আহ্বায়ক এইচ এম জাকির হোসেন গ্রুপের লোকজন শরীয়তপুর শহরের ডুবাই প্লাজার সামনে থেকে একটি আনন্দ মিছিল বের করে।
স্থানীয় ছাত্রদল সূত্র জানায়, শরীয়তপুরে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদলের কমিটি নেই। পুরাতন কমিটি ২০২২ সালের ফ্রেরুয়ারি মাসে বিলুপ্ত করা হয়।
এদিকে জেলায় ছাত্রদলের কার্যক্রম গতিশীল করতে মঙ্গলবার ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির স্বাক্ষরিত ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়।
কমিটিতে এইচ. এম জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক করা হয়। তিনি শরীয়তপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী। সোহেল তালুকদারকে সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি শরীয়তপুর সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
স্থানীয় ছাত্রদলের একাংশের নেতারা অভিযোগ করেন, কমিটিতে আহ্বায়ক এইচ.এম জাকির হোসেন ২০০০ সালে পড়াশোনা শেষ করেছেন। বর্তমানে তিনি দুই সন্তানের জনক। তিনি শ্রমিক নেতা এবং জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদকের পদপ্রার্থী ছিলেন।
যেখানে গঠনতন্ত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৩ সালের পরবর্তী সময়ে ছাত্রদল করা ব্যক্তিরা জেলা কমিটিতে আসতে পারবে। তবে তিনি কীভাবে কমিটির আহ্বায়ক হলেন।
বাবু মাদবর নামে এক ছাত্রদল নেতা বলেন, যারা যোগ্য ব্যক্তি তাদের এ কমিটিতে যোগ্য স্থান দেওয়া হয়নি। যাকে আহবায়ক করা হয়েছে তিনি সেন্ট্রাল প্রেসিডেন্ট থেকেও বয়সে বড়। তাছাড়া তার পরিবারের ৯৫ শতাংশ লোক আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ ধরণের লোককে কেন ছাত্রদলের আহবায়ক পদে দেওয়া হলো? দ্রুত এ কমিটি বাতিল করা না হলে আমরা কঠিন আন্দোলনে যাবো।
জেলা ছাত্রদলের সভাপতি পদপ্রার্থী ও সদ্য ঘোষিত কমিটির যুগ্ম আহবায়ক পান্থ তালুকদারের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে আমরা ছাত্র রাজনীতি করে আসছি। কিছুক্ষণ আগে জানতে পেরেছি জেলা ছাত্রদলের কমিটি দেওয়া হয়েছে। সেখানে শ্রমিক নেতা ও দুই সন্তানের জনক এইচ এম জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। যা গঠনতন্ত্র পরিপন্থি। আমরা এ কমিটি মানি না।
জেলা ছাত্রদলের সদ্য ঘোষিত কমিটির আহ্বায়ক এইচ এম জাকির হোসেন বলেন, আমরা ডুবাই প্লাজার সামনে থেকে একটি বিজয় মিছিল বের করেছি। মিছিলটি থানার সামনে আসলে ঈমাম মোল্ল্যা, পান্থ তালুকদার কিছু লোক মিছিলে ইট, পাটকেল নিক্ষেক করে। পরে তাদের ধাওয়া করলে তারা পালিয়ে যায়। একটি কমিটি করা হলে সেখানে সবাইকে খুশি করা সম্ভব হয় না। যারা ত্যাগী তাদেরকেই বাছাই করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল যেভাবে মনে করেছে সেভাবে কমিটি ঘোষণা করেছে। তাছাড়া আমাকে সেন্ট্রাল ছাত্রদল এ কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার জন্য দায়িত্ব দিয়েছে। মূলত এ জেলা কমিটি সামনে সুশৃঙ্খল করে কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।
পালং মডেল থানার ওসি হেলাল উদ্দিন বলেন, সদ্য ঘোষিত কমিটির আহ্বায়ক এইচ এম জাকির হোসেন গ্রুপের লোকজন একটি আনন্দ মিছিল বের করে পালং থানার সামনে আসলে অপর গ্রুপের তাজমুলসহ লোকজন তা প্রতিহত করে। এ সময় দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। তবে কতজন আহত হয়েছে তা আমি বলতে পারবো না।
