Logo
Logo
×

সারাদেশ

মগনামা-কুতুবদিয়া চ্যানেলে লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই চলছে যাত্রী পারাপার

Icon

কুতুবদিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ১১:০৭ পিএম

মগনামা-কুতুবদিয়া চ্যানেলে লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই চলছে যাত্রী পারাপার

কক্সবাজারের কুতুবদিয়া-মগনামা চ্যানেলের প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার সাগরপথে লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী পারাপার চলছে নিয়মিত। ডেনিসবোটে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে উত্তাল সাগর পাড়ি দিচ্ছেন কুতুবদিয়া ও পেকুয়ার মানুষ। 

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবের সময়ে সারা দেশে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হলেও কুতুবদিয়া-মগনামা চ্যানেলে তা মানা হয়নি। এতে যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারত বড় ধরনের দুর্ঘটনা। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছর বাংলা সনের জন্য মগনামা-কুতুবদিয়া চ্যানেল পারাপারের এ ঘাট ইজারা দেওয়া হয়। কিন্তু চলতি বছরে ইজারা না হওয়ায় কুতুবদিয়া ও পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার যৌথ নিয়ন্ত্রণে খাস কালেকশনের টাকা উত্তোলন চলছে। এ ঘাটে দৈনিক লাখ টাকার অধিক খাস কালেকশনের টাকা উত্তোলন হয়। টাকা উত্তোলন করতে মানুষের জীবনের ঝুঁকির কথা চিন্তা না করে উত্তাল সাগরে ডেনিসবোট চালু রেখেছে উপজেলা প্রশাসন। তবে দেওয়া হয়নি লাইফ জ্যাকেট। 

সরেজমিন দেখা যায়, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর দমকা বাতাসে সাগর উত্তাল। আবহাওয়া অধিদপ্তর ৩ নাম্বার সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে সারা দেশে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু এ  চ্যানেলে নির্দেশ অমান্য করে যাত্রীবাহী ডেনিসবোট চালু রেখেছে। মাঝপথে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তা উদ্ধার করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছিল না কোনো উদ্ধার টিম। ভরপুর যাত্রী নিয়ে উত্তাল সাগরের ঢেউ কাটিয়ে চলাচল করছে ছোট ছোট ডেনিসবোট। একটি ডেনিসবোটে ১০ম থেকে ১৫টি লাইফ জ্যাকেট রয়েছে সেগুলোও ব্যবহার উপযোগী নয়। অন্য সব ডেনিসবোটে কোনো ধরনের লাইফ জ্যাকেটও নেই। দুই পারে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো তদারকি টিমও নেই। তবে কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাস কালেকশনের টাকা উত্তোলনের হিসাব রাখতে দুইজন লোককে দায়িত্ব দিয়েছেন। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগরও অনেকটা উত্তাল রয়েছে। চ্যানেল পারাপার করতে লাইফ জ্যাকেট সরবরাহ দেওয়া হয় না। সারা দেশে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখতে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল কিন্তু উপজেলা প্রশাসন তা মানেননি। অন্তত এ সময় সাগর পারাপার বন্ধ রাখলে মানুষ নিরাপদ স্থানে অবস্থান করতে পারতেন। 

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, যেহেতু ঘাট ইজারা হয়নি, প্রতিদিন যে পরিমাণ টাকা খাস কালেকশন করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন চাইলে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট সরবরাহ দিতে পারতেন। যদি সাগরে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে নিশ্চিত প্রাণহানি ঘটবে। কারণ লাইফ জ্যাকেট বা কোনো রকম নিরাপত্তা সরঞ্জাম নেই।

মোহাম্মদ সাগর নামে এক যাত্রী বলেন, লাইফ জ্যাকেট নেই, তবু উত্তাল সাগরে যাত্রা। জীবনের ঝুঁকি যেন নিত্যসঙ্গী দ্বীপবাসীর। প্রতিদিন প্রয়োজনের তাগিদে কিংবা চিকিৎসার আশায় তারা নিয়মিত সাগর পাড়ি দিচ্ছেন। এতে ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা, এমনকি একটি লাইফ জ্যাকেটও নেই। এই বাস্তবতা শুধু অবহেলার নয়, এটি একটি মানবিক সংকট। নিরাপদ যাতায়াত কি দ্বীপবাসীর প্রাপ্য নয়?

আরেক যাত্রী ডা. জায়নুল আবেদীন বলেন, স্পিডবোট বা ডেনিসবোটের মাধ্যমে নদী পারাপারে অনেক ঝুঁকি আছে। যাত্রীদের দেওয়া হচ্ছে না লাইফ জ্যাকেট। নদীতে পানি বাড়ছে। বোটগুলো যত গতিতে যায়, যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। সচেতন মানুষ এবং যাত্রী হিসেবে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্যথোয়াইপ্রু মারমা যুগান্তরকে বলেন, যাত্রীরা লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করতে চায় না। এজন্য বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। 

ডেনিসবোটে লাইফ জ্যাকেট নেই, পড়বে কেমনে? এমন প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, এখন বর্ষাকালে লাইফ জ্যাকেট সংগ্রহ করা হবে।

ঘূর্ণিঝড়ে প্রভাবের সময় সারা দেশে নৌযান চলাচল বন্ধ ছিল কিন্তু মগনামা-কুতুবদিয়া চ্যানেলে চালু ছিল কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মঈনুল হোসেন চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, চালু রাখার বিষয়টি কুতুবদিয়া উপজেলা প্রশাসন দেখছে। তবে আমরা দ্রুত সময়ে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট সরবরাহ দেওয়ার চেষ্টা করছি। যেসব যাত্রী লাইফ জ্যাকেট পরবে না তাদের পারাপার করতে বারণ থাকবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, আমি কয়েক দিন আগে চ্যানেলটি সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। লাইফ জ্যাকেট সরবরাহ দেওয়ার ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম