এক গ্রামের দাবি ব্রিজ, হুমকিতে পড়বে কুমুদিনী হাসপাতাল-ভারতেশ্বরী হোম
মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৫, ০৯:৪২ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর গ্রাম থেকে লৌহজং নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণের দাবি উঠেছে। মির্জাপুর গ্রামের কিছু মানুষ সরকার পরিবর্তনের পর থেকে বিভিন্ন সময় লৌহজং নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণের জন্য সভা ও সমাবেশ করে চলেছে।
এই ব্রিজটি নির্মাণ হলে হুমকিতে পড়বে দানবীর রণদা প্রসাদ (আরপি) সাহার প্রতিষ্ঠিত কুমুদিনী হাসপাতাল, ভারতেশ্বরী হোমসসহ সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। ব্রিজটি নির্মাণ হলে অতিরিক্ত যানবাহনের কারণে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের চলাচলের সমস্যা সৃষ্টি হবে। কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজের ছাত্রীরা এখন রাস্তা দিয়ে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে। ব্রিজটি নির্মাণ হলে হাসপাতালের রাস্তায় কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বৃদ্ধি পাবে এবং মেডিকেল কলেজের ছাত্রীরা ইভটিজিংয়ের শিকার হবে বলে অনেকে ধারণা করছে।
জানা গেছে, ১৮৯৬ সালের উত্থান একাদশীতে তিনি ঢাকার অদূরে সাভারে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার লৌহজং নদীর তীর ঘেঁষা মির্জাপুর গ্রামে। মাতার নাম কুমুদিনী সাহা, পিতার নাম দেবেন্দ্রনাথ সাহা। মাত্র সাত বছর বয়সে দরিদ্রতার জন্য টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় রণদা প্রসাদ সাহার মায়ের মৃত্যু হয়। মায়ের মৃত্যুর পর দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞা করেন ভবিষ্যতে তিনি হতদরিদ্র চিকিৎসাবঞ্চিত মানুষের জন্য কিছু করবেন।
সদা আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত আরপি সাহা ছেলেবেলার সংকল্পের কথা স্মরণ করে ১৯৩৮ সালে মির্জাপুর গ্রামে একটি দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তী সময়ে ৭৫০ শয্যাবিশিষ্ট এবং বর্তমানে ১০৫০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল ‘কুমুদিনী হাসপাতালে’ রূপ নেয়। দারিদ্র্যের কশাঘাতে নিজে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হলেও নারীশিক্ষার জন্য তিনি ১৯৪২ সালে প্রপিতামহী ভারতেশ্বরী দেবীর নামে মির্জাপুরে প্রতিষ্ঠা করেন ভারতেশ্বরী হোমস। তার জীবনের অর্জিত সব অর্থ তিনি উইল করে প্রতিষ্ঠা করেন কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল।
মহান এ ব্যক্তিকে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ৭ মে তার একমাত্র ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা রবিসহ এ দেশীয় দোসরদের সহায়তায় পাকিস্তানি বাহিনী অপহরণ করে নিয়ে যায়। আজ পর্যন্ত তাদের কোনো খোঁজ মেলেনি।
কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজের ছাত্রী হাফিজা আক্তার বলেন, কুমুদিনী খেয়াঘাটে ব্রিজ নির্মাণ করলে অতিরিক্ত যানবাহন চলাচলের কারণে আমাদের কলেজ থেকে হাসপাতালে যাতায়াতের সমস্যা হবে।
ব্রিজ নির্মাণ প্রসঙ্গে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজিব প্রসাদ সাহা বলেন, কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট মানুষের সেবায় নিয়োজিত। ব্রিজ নির্মাণ সরকারের সিদ্ধান্ত।
নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুজামান বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কাছে ব্রিজ নির্মাণের কোনো প্রস্তাব আসে নাই। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, মির্জাপুরের দক্ষিণ এলাকার মানুষের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য এলজিইডি এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর থেকে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে কুমুদিনী হাসপাতাল সংলগ্ন এক কিলোমিটারের মধ্যে পূর্ব ও পশ্চিম অংশে দুটি ব্রিজ নির্মাণ করেছে। যার কারণে দক্ষিণাঞ্চলের সাধারণ মানুষের যাতায়াত, চিকিৎসার লক্ষ্যে, কৃষিপণ্য সরবরাহ এবং প্রতিনিয়ত ও বাণিজ্যিক মালামাল ব্রিজ দুটির মাধ্যমে আসা-যাওয়া হচ্ছে। দুটি ব্রিজ থাকার কারণে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ অতি সহজে মির্জাপুরে আসতে পারে।
