Logo
Logo
×

সারাদেশ

জমেনি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চামড়ার সবচেয়ে বড় মোকাম

Icon

তৌহিদ জামান, যশোর

প্রকাশ: ১০ জুন ২০২৫, ০৭:১৪ পিএম

জমেনি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চামড়ার সবচেয়ে বড় মোকাম

খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বড় যশোরের রাজারহাট চামড়ার বাজারের ঈদ পরবর্তী প্রথম হাট মঙ্গলবার একেবারেই জমেনি। বাণিজ্য উপদেষ্টার পরামর্শ অনুযায়ী কাঁচা চামড়া সরাসরি রপ্তানির বিষয়টি সম্পর্কে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীদের দাবি, ঈদ পরবর্তী প্রথম হাটে হাজার চারেক মতো চামড়া বিকিকিনি হয়েছে। তাদের আশা, পরবর্তী হাটে (শনিবার) প্রচুরসংখ্যক চামড়া উঠবে। তাতে লাভের মুখ দেখবেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

এদিকে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দাবি, সরকার নির্ধারিত মূল্যে তারা চামড়া বিক্রি করতে পারছেন না।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার বাজার বসে যশোর শহরতলীর রাজারহাটে। ঈদ পরবর্তী সময়ে তাই এ বাজারের দিকে নজর থাকে দেশের শীর্ষস্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীদের। তবে এবার ঈদ পরবর্তী প্রথম হাট একেবারেই জমেনি।

এদিন অল্প সংখ্যক মৌসুমি ব্যবসায়ী লবণ দেওয়া হাজার চারেক চামড়া নিয়ে হাটে আসেন বলে জানিয়েছেন চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আকিল আহমেদ।

মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দাবি, হাট যেমন জমেনি, তেমন চামড়ার দামও মিলছে না। লবণ দিয়ে প্রসেসিংসহ হাটে আনতে একেকটি গরুর চামড়া ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা খরচ হলেও দাম বলছেন ৪০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৯শ টাকা। এতে তাদের খরচমূল্য উঠবে না। আর ছাগলের চামড়া ১০-১২ টাকা বলছেন, যদিও এক একটি ছাগলের চামড়া প্রসেসিংয়ে খরচ ৫০ টাকার মতো।

মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর নামে একজন ব্যবসায়ী বলেন, হাটে একশ পিস গরু ও ৬ পিস ছাগলের চামড়া এনেছি। ছাগলের চামড়ার দিকে কেউ তাকাচ্ছে না। আর গরুর চামড়ার দাম বলছে হাজারের নিচে। যদিও সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে ১ হাজার ১শ থেকে ১ হাজার ৩শ টাকা।

তিনি বলেন, আমি যে চামড়া এনেছি তা ২৪ থেকে ২৬ ফুট পর্যন্ত। দাম ১৪-১৫শ টাকা হলেও পাইকাররা ৮০০ টাকা বলে গেছে।

বাণিজ্য উপদেষ্টার পরামর্শ অনুযায়ী চামড়ার ন্যায্য দাম না পাওয়া গেলে সরাসরি রপ্তানির বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, তিনি যে কথা বলেছেন তা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্যে ভালো। কিন্তু আমরা কীভাবে এখন এই চামড়া রপ্তানি করব। আমরা তো প্রসেসই জানি না। সরকারের পক্ষ থেকে এই প্রসেস সহজ করা হলেই তা সম্ভব। নইলে সেটি খাতা-কলমেই রয়ে যাবে।

খুলনার ডুমুরিয়া থেকে হাটে আসা রাশেদ তরফদার নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ২০ পিস গরু আর ৩০ পিস ছাগলের চামড়া এনেছিলাম। প্রসেসিংসহ বাজারে আনা পর্যন্ত গরুর চামড়ায় খরচ হয়েছে ৭শ থেকে সাড়ে ৮শ টাকার মতো। কিন্তু ৭শ টাকার বেশি দাম উঠেনি এখনো। ৯০০ টাকায় বিক্রি করতে পারলে কিছুটা লাভ হবে বলে তিনি জানান।

সুখরঞ্জন দাস নামে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে চামড়া সংগ্রহ, তাতে লবণ লাগানো এবং হাটে আনা- সব মিলিয়ে যা খরচ, আর হাটে যে দাম বলছে- তাতে যদি বিক্রি করি তাহলে আর খেয়েপরে বেঁচে থাকা লাগবে না।

স্থানীয় আড়তদার হাসিব চৌধুরী বলেন, যারা বলছেন সরকারি দামে চামড়া সংগ্রহ করছি, তারা সত্য বলছেন না। আমি নিজেও লবণযুক্ত ভালো মানের চামড়া কিনেছি সর্বোচ্চ ৯শ থেকে সাড়ে ৯শ টাকায়। এছাড়া একটু নিম্নমানের চামড়া ৩শ থেকে ৫শ টাকায় কিনেছি।

তিনি বলেন, এবার একটা ভালো কাজ করেছে সরকার, সেটি হচ্ছে মাদ্রাসা ও এতিমখানায় লবণ সরবরাহ করে। কিন্তু বেশিরভাগ মাদ্রাসা বা এতিমখানা কর্তৃপক্ষ চামড়া বিক্রি করেছেন লবণ ছাড়াই। সেক্ষেত্রে তারা কম দাম পেয়েছেন এবং ফড়িয়ারা লবণযুক্ত করে সেই চামড়া আগামী হাটে একটু বেশি দামেই বিক্রি করতে পারবেন।

এ বিষয়ে জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আকিল আহমেদ বলেন, আজকের (মঙ্গলবার ১০ জুন) হাট ঈদ পরবর্তী প্রথম হাট। সাধারণত প্রথম হাটে কম চামড়া নিয়ে আসে ব্যাপারীরা। তবে, পরের হাটে (আগামী শনিবার) আশা করা যায় ৪০ হাজারের বেশি চামড়া উঠবে। সেই সময় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কিছুটা লাভের মুখ দেখবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাণিজ্য উপদেষ্টার বক্তব্য অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা যদি সরাসরি কাঁচা চামড়া রপ্তানি করতে পারতেন, তাহলে ভালো হতো। কিন্তু এই বিষয়টিও আমাদের সহজীকরণ করতে হবে। হঠাৎ করেই আমরা কাঁচা চামড়া কীভাবে রপ্তানি করব।

প্রসঙ্গত, সোমবার দুপুরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চামড়ার মোকাম রাজারহাট পরিদর্শন করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। সেই সময় সাংবাদিকদের ব্রিফকালে চামড়া ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা যদি মনে করেন ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না, তাহলে সরাসরি রপ্তানি করতে পারেন। এটি নিষিদ্ধ ছিল। এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তা প্রত্যাহার করেছে। বাজার ব্যবস্থাকে ব্যাপক এবং ইনক্লুসিভ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম