পা দিয়ে লিখে মেধার স্বাক্ষর রাখছে শিশু মোনায়েম

মো. আবু তাহের, দাগনভূঞা
প্রকাশ: ১০ জুন ২০২৫, ০৭:১৭ পিএম

দুই হাত ছাড়া জন্মগ্রহণ করলেও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আটকাতে পারেনি শিশু মোনায়েমকে। ফেনীর দাগনভূঞা একাডেমির ৮ম শ্রেণির ছাত্র আবদুল্লাহ আল মোনায়েম। পা দিয়ে লিখে সে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে ক্লাসের মেধা তালিকায় স্থান করে নিচ্ছে।
এমনকি অর্জন করছে একের পর এক জাতীয় উপজেলা জেলা ও জাতীয় পর্যায়ের পুরস্কার।
দাগনভূঞা উপজেলার ইয়াকুবপুর ইউনিয়নের এনায়েতনগর গ্রামের কামাল উদ্দিনের ছেলে মোনায়েমের জন্মের পর দুই হাত না থাকায় মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যদের মন খারাপ হয়। বাড়তি পরিশ্রম করে আদর স্নেহ দিয়ে বড় করে তুলেন তার মা বিবি কুলসুম।
৬ বছর বয়সে ভর্তি করান স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী দাগনভূঞা একাডেমিতে। এর পর থেকেই সে ভালো ফলাফল করতে থাকে। পা দিয়ে প্রতিদিনের পড়া খাতায় নোট করে। দুই ভাইয়ের মধ্যে মোনায়েম বড়। অন্য সবার মতো তার সহপাঠী, শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাকে আদর করে উৎসাহ যোগান।
পড়ালেখার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে শিশু মোনায়েম। চিত্রাঙ্কনে আগ্রহ দেখে তার মা তাকে দাগনভূঞার উজ্জীবক আর্ট স্কুলে ভর্তি করান। জেলা ও উপজেলায় সেরা পুরস্কার লাভ করে জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচিত হয়ে পুরস্কার ছিনিয়ে এনে মেধা চর্চা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে স্বাক্ষর রেখেছে। হাতবিহীন মোনায়েম থেমে থাকেনি লেখাপড়া থেকে।
শিশু মোনায়েম জানায়, এমন সাফল্যে খুশি তার পরিবার। বড় হয়ে সে ইঞ্জিনিয়ার হবে এমন স্বপ্ন সবসময় মনে লালন করে সে।
মোনায়েমের মা বিবি কুলসুম জানান, সে ৭ মার্চ ও ২৬ মার্চ উপলক্ষে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় জেলায় দ্বিতীয় হয়েছে, মাতৃভাষা দিবস ও বিজয় দিবসে উপজেলায় দ্বিতীয় হয়েছে, স্বাস্থ্য বিভাগ আয়োজিত পুষ্টি সপ্তাহে জেলায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন ও জাতীয় পর্যায়ে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর হতে তৃতীয় স্থান অধিকার করে ট্রফি লাভ করেছে।
অংকন শিল্পে হাতেখড়ি উজ্জীবক আর্ট স্কুলের পরিচালক গিয়াস উদ্দিন বলেন, শিশু মোনায়েমকে পা দিয়ে চিত্রাঙ্কনের প্রশিক্ষণ প্রদান করি। তার ইচ্ছা শক্তি তাকে আরও অনেকদূর নিয়ে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। পা দিয়ে চিত্রাঙ্কন করে সে মেধা পুরস্কার ট্রফি অর্জন করেছে।
দাগনভূঞা একাডেমির প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, হাতবিহীন মোনায়েম পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়ায় শিক্ষকরা তাকে সবসময় সহযোগিতা করে অনুপ্রেরণা যোগান। সে বর্তমানে অত্র বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার প্রতি সহানুভূতিশীল ও আন্তরিক মমতায় আবদ্ধে রেখেছেন।
দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স ম আজহারুল ইসলাম বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে মোনায়েম উচ্চতর পড়া শেষ করে কর্মক্ষেত্রে সফল হবে এমন প্রত্যাশা করি। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কোনো বাধা নয়। তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মোনায়েম। মোনায়েমকে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার আর্থিক সহায়তায় উপজেলা প্রশাসন ভূমিকা রাখবে।